এটা কোন সিনেমার গল্প নয়। বাস্তব জীবনে ডিপজল এক ট্রাফিক পুলিশের সাথে তার স্বভাবসুলভ (সিনেমায়) আচরন করেছিলেন। কিন্তু সেই ঘটনায় এবার আর তিনি সিনেমার শেষ দৃশ্য খুব তাড়াতাড়িই শেষ করলেন তিনি আত্নসমর্পন করে। বিস্তারিত-
ঢালিউডের খল নায়ক ঢাকা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনার মনোয়ার হোসেন ডিপজল আজ রোরবার আত্মসমর্পণ করেছেন। আজ রোববার রাত সাড়ে নয়টার দিকে তিনি রাজধানীর দারুসসালাম থানায় আত্মসমর্পণ করেন।
দারুসসালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হামিদুর রহমান জানান, একটি কেসের ডায়েরি লিখছিলাম এ সময় হঠাত্ একটি লোক আমাকে সালাম দেয়। ফিরে দেখি তিনি ওয়ার্ড কমিশনার মনোয়ার হোসেন ডিপজল। তাঁকে জেল হাজতে রাখা হয়েছে।
প্রথম আলো
পূবৃবর্তী সংবাদ
ট্রাফিক পুলিশকে পেটালেন অভিনেতা ডিপজল
'আমার গাড়ি রাস্তায় চললে কোনো সিগন্যাল লাগে না'
'আমার গাড়ি রাস্তায় চললে কোনো সিগন্যাল লাগে না, তুই গাড়ি থামাইলি কেন?' বলেই মিরপুর জোনের ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবল আফতাবউদ্দিনকে চড়-থাপ্পড় মারতে মারতে মাটিতে ফেলে দেন চলচ্চিত্র অভিনেতা মনোয়ার হোসেন ডিপজল। ওই সময় তাঁর সঙ্গে থাকা কয়েকজন সহযোগী একের পর এক লাথি মারতে থাকেন কনস্টেবলকে।
একপর্যায়ে ডিপজল ওই পুলিশ সদস্যের বাম গালে পিস্তলের বাঁট দিয়ে আঘাত করেন। এটা চলচ্চিত্রের কোনো দৃশ্য নয়, বাস্তবেই কর্তব্যরত একজন পুলিশ কনস্টেবলকে শত শত মানুষের সামনে এভাবে পিটিয়ে আহত করেছেন অভিনেতা ডিপজল। পুলিশের করা মামলার এজাহারে এভাবেই ডিপজল-কাণ্ডের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে।
গত মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টায় গাবতলী গরুর হাটের প্রবেশমুখে তিন রাস্তার মোড়ে এ ঘটনা ঘটে। কনস্টেবলের একটাই অপরাধ, সিগন্যাল অমান্য করায় তিনি গাড়িটি থামানোর ইশারা দেন।
পরে টহলে থাকা পুলিশ কর্মকর্তা ও সার্জেন্ট গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠান।
এই ঘটনায় পুলিশ প্রশাসনে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। পরে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদের নির্দেশে ডিপজলকে গ্রেপ্তার করতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান শুরু করে। তবে গত রাত পর্যন্ত তাঁকে ধরা যায়নি।
ডিপজল গাবতলী এলাকার বিএনপি-সমর্থিত ওয়ার্ড কাউন্সিলরও।
মামলার বিবরণ ও আহত কনস্টেবল জানান, কোরবানির ঈদের আগের দিন গাবতলীর বাসস্ট্যান্ড থেকে কিছুটা সামনে বেড়িবাঁধ ও গাবতলীর গরুর হাটের প্রবেশমুখে দায়িত্ব পালন করছিলেন ডিএমপি মিরপুর জোনের কনস্টেবল মো. আফতাব উদ্দিন। ওই দিন গরুর ক্রেতা-বিক্রেতা ও ঘরমুখী মানুষের চাপে হিমশিম খেতে হচ্ছিল পুলিশকে। সেই দিন সকালে সাদা রঙের একটি মাইক্রোবাসে চরে ডিপজলসহ তাঁর কয়েকজন সহযোগী সাভারের দিকে যাচ্ছিলেন। ডিপজলের গাড়িটি লালবাতির সিগন্যাল না মেনেই চলে যেতে থাকে। ওই সময় তাঁর গাড়িটি দৌড়ে গিয়ে থামান আফতাব উদ্দিন।
তখন ডিপজল গাড়ি থেকে নেমেই তাঁর কলার ধরে চড়-থাপ্পড় মারেন এবং লাথি মেরে রাস্তায় ফেলে দেন।
ডিপজলের সঙ্গে থাকা ক্যাডার বাহিনী মাটিতে লুটিয়ে পড়া কনস্টেবলকে লাথি মারতে থাকে। ওই সময় ডিপজল অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতে করতে আফতাবের বাম গালে পিস্তলের বাঁট দিয়ে আঘাত করেন আর বলেন, 'রাস্তায় চলাচল করতে আমার কোনো সিগন্যাল মানতে হয় না। তোর কত বড় সাহস যে তুই আমার গাড়ি থামাইলি। ' কনস্টেবলের চিৎকার শুনে কর্তব্যরত সার্জেন্ট নজরুল ইসলাম ও শরীফুল ইসলামসহ পুলিশের টহলদল ঘটনাস্থলে ছুটে যায়।
অবস্থা বেগতিক দেখে ডিপজল সহযোগীদের নিয়ে দ্রুত সাভারের দিকে পালিয়ে যান। ওই ঘটনার পরপরই পুলিশ প্রশাসনে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়। বিকেলে ডিপজলকে প্রধান আসামি করে দারুস সালাম থানায় কনস্টেবল আফতাব বাদী হয়ে মামলা করেন। ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার বেনজীর আহমেদ ডিপজলকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেন।
নির্দেশ পেয়ে দারুস সালাম থানার ওসি আবদুল মালেক ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) নাজমুল হুদা খানসহ পুলিশের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা ডিপজলকে গ্রেপ্তার করতে কয়েকটি স্থানে অভিযান চালান।
এসআই নাজমুল হুদা খান বলেন, 'ঘটনার দিন বিকেলেই কোটবাড়ী নূরনগর এলাকার ডিপজলের ১৪৮ নম্বরের বাড়িতে অভিযান চালাই। ' সেখানে তাঁকে না পেয়ে সাভার উপজেলার ফুলবাড়িয়ায় শুটিং স্পটের বাড়িতে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। শ্যামলী রিং রোডের মেয়ের বাড়ি এবং বনানী ডিওএইচএসের ২২ নম্বর রোডের ১৫৯ নম্বরের বাড়িতেও অভিযান চালানো হয়েছে।
এসআই বলেন, যদি ডিপজল জামিনের কাগজপত্র দেখাতে না পারেন তাহলে যেকোনো মূল্যে তাঁকে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়া আছে। তাঁর বিরুদ্ধে মিরপুর, দারুস সালাম ও সাভারসহ বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
ওসি আবদুল মালেক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'তাঁকে গ্রেপ্তারের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চলছে। একজন পুলিশ কনস্টেবলকে পেটানো মানে সারা দেশের পুলিশের গায়ে হাত তোলা, এটা স্বাভাবিকভাবে নেওয়া যায় না। '
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।