আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সেকি দিন ছিল রে, বাবা!!!!

মানুষ আমি আমার কেন পাখির মত মন ........ আমাদের বাসায় প্রথম কম্পিউটার আসে ২০০৫ সালে। তখনো মাহিনের এন্ট্রি হয় নাই বাসায় মানে জন্ম হয় নাই আমরা তিন বোন লেগে গেলাম কম্পিউটার সাহেব কে জানার কাজে। আব্বুর কলিগ সুলতান আঙ্কেল আমাদের প্রাথমিক "কম্পিউটার শিক্ষা" করাইলেন প্রথমে মাউস-কিবোর্ড চালানো, গান শোনা, ছবি দেখা ও আকা এইসব দরকারি কাজ শেখানোর পর শেখালেন গেমস কিভাবে খেলতে হয়। উনি তো শিখিয়ে চলে গেলেন কিন্তু আমরা তো শিখে বসে থাকলাম না...... সেকি গেমস খেলারে বাবা!!!! একজন গেমস খেলতো বাকি ২ জন তার ২ পাশে তৃষিত নয়নে গেমসের দিকে তাকিয়ে থাকতো। কেউ পানি খাওয়া বা অতি দরকারি কাজে একবার উঠতে পারলেই হত বাকি ২জন ঐ সিটের জন্য ৩য় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করে দিত।

অনেক সময় দেখা গেসে ২ জনের ঝগড়া মারামারিতে রূপ নিছে আর অন্যজন কাজ সেরে আবার গেমস খেলা শুরু করে দিছে। কি কঠিন মারামারি লাগতাম আমরা, বাবারে বাবা!!!! অনেক সময় দেখা যেত আমরা ৩ বোন, কেউ কারো সাথে কথা বলি না প্রতেকদিনের শত শত বিচার করতে করতে আব্বু অতিষ্ট, মারামারি থামাতে আম্মা কাহিল। কান্নাকাটি করে করে আমাদেরও অবস্থা বিশেষ ভালো না যদিও এটা মাইর খাওয়ার জন্য কান্না না, গেমস পরিপূর্নভাবে খেলতে না পারার জন্য কান্না আমাদের এই অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য আব্বু একটা উপায় বের করলো আসলে নিজেকে বাচানোর জন্যও বের করলো কিনা কে জানে নিয়ম হল সপ্তাহে ৭ দিন আর আমরা ৩ বোন। তাই প্রতেকে ২ দিন করে পাবে। বাকি শুক্রবার কম্পু সাহেব বিশ্রাম নেবেন।

আর নিজের ২দিনে অন্য কেউ কম্পু ধরার পারমিশন নাই। আমরাও খুশি মনে মেনে নিলাম। নিজের ২ দিন রাজা-বাদশার মত গেমস খেলি আর ৪ দিন হাহাকার করি। পাশে দাড়ানোর নিয়ম নাই, তাই কম্পুর পাশে টিভির উছিলায় দূর থেইকা চোখে বাইনোকুলার ফিট কইরা তাকায়া থাকতাম। একসময় সব নিয়মের মত এখানেও শিথীলতা দেখা গেল।

কেউই ৪ দিন হাহাকার করতে চায় না, ১ ঘন্টার জন্য হইলেও খেলতে চায়। তখন নিজের দিনে পিছনের বাইনোকুলারওয়ালারে ডাইকা কইতাম, "খেলবি?" আমার মহানুভবতায় তাকে বিস্মিত হওয়ার সুযোগ দিতাম না, সাথে যোগ করতাম, "তোমার দিনে কিন্তু আমারে তাইলে দিতে হইবো!!!! যতক্ষন খেলবা ততক্ষন" কিছুক্ষন চিন্তাভাবনা কইরা ঝটপট উত্তর আসলো " আইচ্ছা"। আমার(বড়) আর পিচ্চির(ছোট) এই ষড়যন্ত্র বুঝতে না পাইরা মেজোর হাহাকার চিৎকারে পৌছাইলো। সে এমনিতেই পড়া নিয়ে অনেক ব্যস্ত কিন্তু অন্যায় সহ্য করতে পারে না। সে যখন দেখলো আমার দিনে পিচ্চি খেলে আর পিচ্চির দিনে আমি তখন তার সাথে করা এতোবড় অন্যায়টা সহ্য করতে পারলো না।

কয়েকদিন আমাদের নিবিড় পর্যবেক্ষনে রাখলো, তারপর সবদিক বিবেচনা কইরা আমাদের সাথে হাত মিলাইলো। তখন শুধু দিনটা ঠিক থাকলো মাতব্বরি করার জন্য। তারপর একসময় সেটাও উঠে গেলো, আবার সেই আগের পরিচিত মারামারি!!!!! এখন বাসায় ২টা ল্যপটপ একটা কম্পু মামা!!! মারামারির আর অবকাশ নাই, বয়সও নাই। কিন্তু গেমসের প্রতি সেই নেশাটা যে এখনো আছে তা আজকে আবার বুঝলাম। মেজো আর পিচ্চি এখন আর আগের মত গেমস খেলে না, হেতারা বড় হয়ে গেসে কিন্তু আজকে যখন আমি গেমস খেলছিলাম তখন মেজো কি যেন বলতে গিয়ে আমার পাশে বসে পড়লো।

আমি আবার ওর চোখে সেই বাইনোকুলারওয়ালাকে দেখতে পেলাম!!! অনেক কিছু বদলে যায় কিন্তু আমাদের সৌভাগ্য স্মৃতিরা কখনোই বদলায় না ......... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।