জীবন মানে এ গিয়ে চলো, ভাল থাকার প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাই। গতকাল কাওরাকান্দি পার থেকে লঞ্চ এ করে নদী পার হয়ে মাওয়া পার হচ্ছিলাম। নদী সান্ত তেমন ঢেউ নেই আর শীত এর দিনে নদী সান্ত থাকে। ছোট একটা লঞ্চ এর মধ্যে ৩ টা বাস এর যাত্রী বোঝাই করল লঞ্চ এর চালক ও স্টাফরা।
একজন যাত্রী লঞ্চ চালক কে বলল
যাত্রী ঃ লঞ্চ এ তো ধারন খমতার অধিক যাত্রী তুলছেন
চালক ঃ আমাকে বলেন কেন যান টার্মিনাল এর দায়িত্তে যারা আছে তাগও কণ।
ঐ যাত্রী নেমে গেল এবং টার্মিনাল এ গিয়ে অভিযোগ করল আর ইতমধ্যে লঞ্চ এ পা রাখার মত ফাকা নাই। লঞ্চ টা কানায় কানায় পরিপূর্ণ।
রিতিমত লঞ্চ ছেরে দিল, লঞ্চ এর লোকজন যারা রিভার ভিউ প্যাসেজ এ দারিয়ে আছে তারা ও হাঁটাহাঁটি করতে পারছে না এমন অবস্থা।
লঞ্চ ছারল ৫ টা ৩০ মিনিট এবং মাওয়া ঘাট এ পৌঁছাতে সময় লাগবে ১ ঘণ্টা ১৫ মিনিট সর্বচ্চও। লঞ্চ টা সরিয়তপুর ঘাঁট এ আসল ৫ টা ২৫ এ এবং ছারল ৫ টা ৩৫ এ।
এখন ও লঞ্চ টার বেশ পথ বাকী। যাইহোক বসে আছি লঞ্চ এর যাত্রীদের নির্ধারিত বসার যায়গায়।
লঞ্চ টা আরও ২০ মিনিট চলার পর কেউ একজন বলল ১ জন লোক পড়ে গেছে নদীতে। এই কথা শুনে চালক বলল লঞ্চ এর পিছনে বইয়া গাঁজা খায় হেইয়ার লাইগা পাইনতে পরছে। লঞ্চ টা থামল আর নদীর সেই হিম শীতল পানিতে লোকটা সাতার কেটে লঞ্চ এর কাছে আসল এবং কিছুক্ষণ পর লোকটা কে পানি থেকে তোলা হল।
লঞ্চ থেকে লোক পড়ে গেছে শুনে সব যাত্রী হুরুহুরি শুরু করল। আমরা বেশ কয়েক জন বললাম আপনারা কেউ নড়াচড়া করবেন না দয়া করে। এর মধ্যে কিছু লোক লঞ্চ এর এক পাসের প্যাসেজ এ এমন ভির জমাল যে লঞ্চ টা রিতিমত এক দিক এ কাত হয়ে গেল। সবাই কে আবার ও বলা হল আপনারা কেউ নড়বেন না। এর পর লঞ্চ আবার চলতে শুরু করল।
আমার পাশে বসে ছিল এক সৌদি প্রবাসি শ্রমিক (রফিক) ও টার অসুস্থ বাবা । বাবা কে টার ছোট ভাই এর বাসায় রেখে আগামী কাল (শনিবার ) সকালে টার ফ্লাইট।
২০ মিনিট লঞ্চ চলল তারপর
রফিক চালক কে লঞ্চ থামাতে বলল টার বাবা কে পাচ্চেনা , টার বাবা পানিতে পড়ে গেছে। সব যাত্রী অবাক ও খুদ্ধ, কেউ লঞ্চ থামাতে রাজি না। চালক বলল আপনি আগে বলেন নাই কেন, যখন একজন পরছে তখন তো লঞ্চ থামাইছিলাম।
আর সবাই চালক কে বলল আপনে লঞ্চ চালান ওর বাবা পরছে ও ঐ পার (মাওয়া) নাইমা স্পীড বোট নিয়ে আইসা খুজব।
চালক বলল (খুদ্ধ স্বরে) আপনারে কই নামাইয়া দিমু , আমার যাত্রী গো আমি ভগাইতে পারুম না। আপনে ঐ পার গিয়া বোট নিয়া আইসেন।
আমি বললাম চালক কে – ভাই আপনে সামনে টলার / বোট সামনে পেলে ওনাকে লঞ্চ থামায়ে তুলে দেন।
চালক ঃ এহন বোট / টলার কই পামু উনি ঐ পার জাইয়া আবার আইব।
কেউ আর লঞ্চ টা কে ঘুরে গিয়ে খুজতে দিল না।
অবশেষ এ লঞ্চ টা সন্ধ্যা ৭ টায় মাওয়া ঘাটে ভিরল আর যাত্রীরা যে যার মতো চলে গেল।
রফিক ৪ বছর পর দেশ এ আসছে আর মাওয়া ঘাঁট এর সে তেমন কিছুই চিনে না।
আমি লঞ্চ থেকে নামলাম আর দেখলাম রফিক দারিয়ে আছে। ওর চোখ এ মুখ এ হতাশা , বেদনা, ভয় সব মিলিয়ে বীভৎস।
রফিক কিংকর্তব্যবিমুর
আমি আর পাশ কাটিয়ে (Ignore) চলে আসতে পারলাম না। আমি তাকে সাহায্য করার জন্য টার কাছে গেলাম। প্রথম এ পরবর্তী সব লঞ্চ গুরে দেখল রফিক আর আমি ওর ব্যাগ এর কাছে দারিয়ে রইলাম।
এরপর গেলাম স্পীড বোট এর ঘাঁট এ সেখান থেকে সন্ধার পর আর কোন সী বোট ছারেনা এটাই বলল ওরা। আমরা ওদের বললাম ঘটনা টা , ওরা আমাদের বলল আপনারা পুলিশ এর কাছে যান।
আমি রফিক কে নিয়ে আবার লঞ্চ ঘাঁট এ আসলাম এবং পুলিশ দের কে সব খুলে বললাম ১ জন পুলিশ আসল এবং আমাদের সাথে গিয়ে লঞ্চ টা সনাক্ত করল।
এরপর পুলিশ রফিক কে ১ম এ ট্রলার ঠিক করে দিতে চেষ্টা করল কিন্তু কোন চালক পাওয়া যাচ্ছে না।
আর রফিক কে আমি বললাম তোমার ডলার আর পাসপোর্ট কই? ও বলল ওর কাছে ডলার নাই এখানে শুধু পাসপোর্ট। ইতমধ্যে রফিক এর ভাই ঢাকা থেকে মাওয়ার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে।
পুলিশ রা রফিক কে অবশেষ এ বলল এখন রাত এ কুয়াশার কারনে কেউ যাবে না আর তোমার জাওয়াও নিরাপদ নয়।
আগামীকাল সকালে গিয়ে খুঁজে দেখ।
আমি ৮ টা ৩০ মিনিট এ রফিক এর নাম্বার নিয়ে বিদায় হলাম ঢাকার বাস এ চড়ে।
রাত এ ও সকাল এ রফিক কে কল করে জানলাম যে ওর বাবা কে তখন ও পায়নি।
আজ সন্ধ্যা ৭ টায় কল দিলাম তখন ও নিখোঁজ ।
আমি নিজেও হতবাক, আমার আর বলার কিছু নাই।
বিঃ দ্রঃ বানান ভুল এর জন্য আমি দায়ী নই। দায়ী AVORO Bangla Typing Software.
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।