আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বধ্যভূমিতে শপথ, আন্দোলন চলবে

cool হরতাল প্রতিহত করার আহবান গণজাগরণ মঞ্চের নিজস্ব প্রতিবেদক শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের চেতনা গিয়ে মিশেছে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে। অগণিত লাল-সবুজ পতাকা উঁচিয়ে, মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে ছাত্র-জনতা শপথ নিল মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসি এবং জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত গণজাগরণের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার। নিজ নিজ জায়গা থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধীদের প্রতিহত করা এবং তাদের সব আর্থিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান বয়কট করারও শপথ নেওয়া হয়। গতকাল শনিবার বিকেলে বধ্যভূমির স্মৃতিসৌধ চত্বরে জাতীয় পতাকার বিশাল সমাবেশে আন্দোলনের নেতারা আজ রবিবারের হরতাল প্রতি বিভাগে, জেলায়, পাড়ায়, মহল্লায় প্রতিহত করার আহ্বান জানান। তাঁরা বলেন, একাত্তরের ঘাতক জামায়াত-শিবিরকে এক ইঞ্চিও ছাড় দেওয়া হবে না।

বাংলাদেশের মাটিতে জামায়াত-শিবিরের ঠাঁই নেই। সমাবেশে মুক্তিযোদ্ধা ও নাট্যজন নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু এবং বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। প্রধান বক্তা ছিলেন ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ডা. ইমরান এইচ সরকার। তিনি সমাবেশে শপথবাক্যও পাঠ করান। জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে মূল সমাবেশ শুরু হলেও দুপুর দেড়টা থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আন্দোলনকারীরা সেখানে জড়ো হতে থাকে।

মোহাম্মদপুরসহ আশপাশের এলাকার স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা ক্লাস শেষ করে মিছিল নিয়ে যোগ দেয় সমাবেশে। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনও মিছিল করে সমাবেশে একাত্মতা প্রকাশ করে। বিকেল নাগাদ মানুষের ঢল নামে স্মৃতিসৌধে। স্লোগান, গান, কবিতা, বক্তৃতা, কথামালায় আবারও দীপ্ত কণ্ঠে ছাত্র-জনতা প্রত্যয় ব্যক্ত করে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সর্বাত্মক আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার। ডা. ইমরান এইচ সরকার তাঁর বক্তব্যে বলেন, শুক্রবার দেশের মানুষ জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবলীলা প্রত্যক্ষ করেছে।

একাত্তরের মতোই হায়েনারা এখন দেশের মাটিতে নখর বসাচ্ছে। চাঁদপুরে তারা জাতীয় পতাকায় আগুন ধরিয়ে দেওয়ার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছে। অবমাননা করেছে শহীদ মিনারের। রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহ কবিতার লাইন উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, 'জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরনো শকুন। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে এ শকুনকে পরাজিত করব।

আমাদের আন্দোলন কোনো মতেই ধর্মবিরোধী নয়। যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধেই আমাদের এই সংগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমরা সোনার বাংলা গড়ব। ' তিনি দেশবাসীর উদ্দেশে আহ্বান জানিয়ে বলেন, 'আগামীকাল (রবিবার) জামায়াত-শিবির যে হরতালের ডাক দিয়েছে, আপনারা তা দেশের প্রতিটি বিভাগে, পাড়া-মহল্লায় মিছিল করে প্রতিহত করুন। এ দেশের এক ইঞ্চি মাটিও জামায়াত-শিবিরকে ছেড়ে দেওয়া হবে না।

বাংলার মাটিতে জামায়াত-শিবিরের ঠাঁই হবে না। ' ডা. ইমরান বলেন, 'জামায়াত-শিবির পুলিশ বাহিনীকে টার্গেট করে হামলা করছে। আমি ১৯৭১ সালের মতোই জামায়াত-শিবিরকে প্রতিহত করার আহ্বান জানাই। আমরা এ প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধারা আপনাদের পাশে আছি। কোনোভাবেই আপনারা যেন পেশগত দায়িত্ব পালনে পিছু না হটেন।

গতকাল (শুক্রবার) জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে আক্রমণ চালিয়েছে। ২০১৩ সালের এ আন্দোলন যদি দ্বিতীয় প্রজন্মের মুক্তিযুদ্ধ হয়, তাহলে গণমাধ্যম আমাদের এ মুক্তিযুদ্ধের সারথী। আপনারা সাংবাদিকরা একাত্তরের শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, শহীদুল্লা কায়সারের উত্তরসূরি। আপনারাও নির্ভীকচিত্তে পেশাগত দায়িত্ব পালন করুন। আমরা আপনাদের সঙ্গে আছি।

' জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়ে ইমরান বলেন, '১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগী হিসেবে সব যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি অর্থাৎ ফাঁসির দাবিতে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাবই। জামায়াত-শিবির একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী ও সন্ত্রাসী সংগঠন। তাই আমরা একই সঙ্গে তাদের নিষিদ্ধ ঘোষণার দাবি জানিয়ে আসছি। ' ডা. ইমরান বলেন, চলমান আন্দোলনের কারণেই জাতীয় সংসদে আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইন সংশোধন করা হয়েছে। এখন ট্রাইব্যুনালের পুরো রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে।

এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতের বিচার করারও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। এটি ছয় দফা দাবির অর্জন। এর আগে সমবেত ছাত্র-জনতাকে শপথ বাক্য পাঠ করান ইমরান। তাঁর কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে সমাবেশের হাজার হাজার নারী-পুরুষ ও শিশু-কিশোর দাঁড়িয়ে মুষ্টিবদ্ধ হাত তুলে শপথ করেন : 'আমরা শপথ করছি যে কাদের মোল্লাসহ সব যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি ফাঁসির রায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাব। আমরা শপথ করছি, যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াত ও তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্রশিবিরকে নিষিদ্ধ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

আমরা আরো শপথ করছি যে যুদ্ধাপরাধীদের সব অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন আমরা বয়কট করব। ' এর আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার হত্যাযজ্ঞের প্রত্যক্ষদর্শী সখিনা বেগম মঞ্চে আবেগাল্পুত কণ্ঠে বলেন, 'এই কাদের মোল্লা আমার স্বামীকে ১৯৭১ সালে খুন করছে। আমারেও তারা খুন করতে চাইছে। আমি জীবন ভিক্ষা চাইছি। তারা দাও দিয়া আমার পায়ে কোপ দিছে।

আমার স্বামী নাই। আমার এক ছেলের হাত-পা কাটা, পঙ্গু। আপনারা কাদের মোল্লারে আইনা দেন। আমি নিজেই তারে ফাঁসি দিমু। আমি তারে কোপাইয়া মারমু।

আমি কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই। ' সমাবেশ থেকে দুস্থ এই মাকে আন্দোলনের স্বেচ্ছাশ্রমের তহবিল থেকে ১০ হাজার টাকা অর্থ সাহায্য দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। সমাবেশে নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, 'রায়ের বাজারের এই বধ্যভূমির জায়গাটি বড়ই পবিত্র। ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর আমি নিজেই এখানে এসে শত শত মানুষের গলিত লাশ দেখেছি। আজকের সমাবেশের মাধ্যমে আমরা গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁদের স্মরণ করছি।

আমরা স্মরণ করছি একাত্তরের ৩০ লাখ শহীদ ও চার লাখ সম্ভ্রম হারানো নারীকে। তাঁদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব পেয়েছি। আপনারা তাঁদের কথা মনে রেখে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। ' ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, 'যারা মসজিদের ভেতরে আগুন দিয়েছে, শরিয়া আইনে তাদের বিচার করার জন্য আমি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের আহ্বান জানাই। জামায়াত শহীদ মিনারকে অপমান করেছে।

জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছে। জাতীয় মসজিদকে অপমান করেছে। ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের কাছে আহ্বান জানাই, আপনারা তাদের পাড়ায়, মহল্লায় প্রতিহত করবেন। ' ছাত্র ইউনিয়ন সভাপতি এস এম শুভ বলেন, 'গণজাগরণ থেকে আমরা আগামীকালের (রবিবার) হরতাল প্রত্যাখ্যান করছি। যারা এই হরতালে সমর্থন দেবে, তারাও নব্য রাজাকার।

তাদেরও প্রতিহত করা হবে। ' সমাবেশে আরো মধ্যে বক্তব্য দেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম, জাসদ-ছাত্রলীগের শামসুল ইসলাম সুমন, ছাত্রফ্রন্টের মেহেদী হাসান তমাল, ছাত্রমৈত্রীর তানভির ওসমান, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর হিল্লোল রায়, ছাত্র আন্দোলনের মঞ্জুরুল রহমান মিঠু, ছাত্র ফেডারেশনের সামিয়া রহমান প্রমুখ। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.