যে শিক্ষক বুদ্ধিজীবী কবি ও কেরানী প্রকাশ্য পথে হত্যার প্রতিশোধ চায়না আমি তাদের ঘৃণা করি
লোহার গেটটি পেরিয়ে ভেতরে ঢুকলাম। সিরামিক ইঁটের সার দেওয়া বাঁধানো চত্তর। চারিদিকে অদ্ভুতরকম সৌম্য শান্ত বাতাবরণ। ধীর পায়ে হেঁটে গেলাম শান বাঁধানো জলাশয়ের দিকে। নোংরা জলের ভেতর কুঁকড়ে শুয়ে আছে লাশগুলো! হাত-পা বাঁধা!অধিকাংশই খালি গায়ে, লুঙ্গি পরণে।
অধিকাংশই উপুড় হয়ে বেঢপ ভঙ্গিতে শুয়ে আছে। কালো রঙের রেলিংয়ের পাশে দাঁড়াতেই লাশগুলো খুব শান্ত অথচ দৃঢ ভঙ্গিতে উঠে এলো! গা থেকে টপ টপ করে জল ঝরে পড়ছে! কোনরকম জড়তা ছাড়াই তারা সার দিয়ে আমার পাশে বসে পড়ল। একটা অদ্ভুত ধরণের ভীতি এবং শূণ্যতায় দম বন্ধ হয়ে আসল আমার! প্রাণ পণে ওখান থেকে সরে যেতে চাইছি....দিগবিদিক ছুঁটছি...চিৎকার করে সরে আসতে চাইছি সেই একাত্তরের ভয়াল রাতের ঘোর থেকে! কিন্তু কিছুতেই দৌঁড়ানো হচ্ছে না!কতক্ষণ এভাবে কেটেছে জানিনা...হঠাৎ সামনে দেখলাম আমাদের ছেলেরা দাঁড়িয়ে আছে। খুশি হওয়া মুখগুলো অব্যক্ত জানাচ্ছে...দাদা তোমাকে পেয়ে ভাললাগছে.....
মাহমুদুল হাসান রুবেল,অরণ্য আনাম,রোমাস,মার্শাল,সেলিম, রুবেলের বন্ধুরা,আরো কয়েকজন যাদের নাম মনে পড়ছে না, আর আছে খুবই সাধারণ গরিব মানুষেরা। তারা সবাই গোল হয়ে সগর্ব ঘোষণা দিচ্ছে.........আমরা এসেছি,দেখ হে বীর আত্মত্যাগী ভাই-বন্ধুরা।
রায়ের বাজার! বাঙালির এক জন্মক্ষতের নাম। আজন্ম ব্যথা বয়ে বেড়ানোর স্মৃতি বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সিরামিক ইঁটের ব্যথাতুর স্মৃতিসৌধ। একটা নিঃসঙ্গ বটগাছ আর কালো মনুমেন্ট যেন সারাক্ষণ কেঁদেই চলেছে!
এক কোটি কুড়ি লাখ মানুষের বিশাল বোঝা নিয়ে রোজকার ঢাকা তার আপন ছন্দে, আপন গতিতে বয়ে চলেছে। নাগরিকরা ভয়ানক রকম ব্যস্ত। কোন কারণ ছাড়াই ভয়ংকর ভাবে ব্যস্ত সবাই।
স্পাইরাল বাইন্ডিং ফাইলে শেষ স্বাক্ষর করা সচিব থেকে ঝামা ইঁট দিয়ে ঘসে ঘসে টিউবের ময়লা তুলে টিউবে পট্টি লাগিয়ে মেরামত করা মেকার পর্যন্ত সকলেই বেশুমার ব্যস্ত এই নগরীতে। এরই ভেতর আঠারো থেকে পঁচিশের মধ্যে বয়সী এই ছেলেগুলো ঠিকই তাদের মাল পত্তর নিয়ে কর্মসূচী সফল করতে হাজির। তারা কোন ভাবেই চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে যায়নি কোন বড় ভাইয়া এসেছেন, আর আসেননি!
এরপর একে একে আমাদের কর্মসূচী গুলো চলতে থাকল। দেওয়ালজুড়ে কালো কাপড়ের ওপর যুদ্ধাপরাধীদের কৃতকর্মের প্রমান সম্বলিত পেষ্টার সাঁটা। অচেনা ছেলে মেয়েরা নিজ হাতে লিখে ফেলল যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে শ্লোগান দেওয়া পোষ্টার।
সেই সাথে চলতে থাকল স্বাক্ষর গ্রহণ। সূর্য ডুবে যাওয়ার পর আমরা মোমবাতি জ্বাললাম। বেদীর ওপর সার দেওয়া মোমবাতির আলোচ্ছটা ঠিকরে পড়ছে সেই শহীদদের শয়ানে, যেখানে এখন টলটলে জল। আমাদের সাথে মানববন্ধনে অংশ নেওয়া শতশত সাধারণ মানুষ আমাদের সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে উচ্চারণ করল আমাদের শেষ রক্তবিন্দু থাকতে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবই করব।
কাল ২৬ মার্চ থেকে আমাদের কর্মসূচী ঢাকার বাইরে নতুন উদ্যোমে শুরু হচ্ছে।
সিলেট প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ড.মোহাম্মদ জাফর ইকবাল উদ্বোধন করবেন সিলেটের গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচী। একই সাথে খুলনা, রাজশাহী, ময়মনসিংহ চট্টগ্রামেও স্বাক্ষর গ্রহণ চলবে। সেখানে আমাদের সাথীরা এই কর্মসূচী এগিয়ে নেবেন। আর ঢাকায় আগের ঘোষিত কর্মসূচী চালু থাকছে। আমরা আশা করছি, আমাদের স্বাক্ষর গ্রহণের স্থান এবং আয়তন ক্রমাগতভাবে বেড়েই যাবে।
দ্রষ্টব্যঃ রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে তোলা ছবি কিছুক্ষণ পরে আপলোড করা হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।