আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আত্মঘাতী হামলাকারির মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ



দুনিয়াজুড়ে আত্মঘাতী বোমাহামলা নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে, এখনো চলছে। সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এমনকি মনস্তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণও হয়েছে অঢেল। একদিকে রাষ্ট্রের আইনী সন্ত্রাস, অন্যদিকে জাতীয় সার্বভৌমত্ব, ভূখণ্ডের স্বাধীনতা ইত্যাদির দাবিতে প্রতিষ্ঠিত আইনের বাইরে ‘সন্ত্রাসবাদ’ চলছে দেদারসে। এর মধ্যে সবচেয়ে নির্মম, ভয়াবহ ও নিষ্ঠুর সন্ত্রাসী তৎপরতার মধ্যে পড়ে আত্মঘাতী বোমাহামলা। মনোবিশ্লেষকদের বিশ্লেষণে এমনই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

আর এ ধরনের হামলা ও হামলাকারীর গভীরে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু দিক বের করে আনার চেষ্টা করা হয়েছে। নিউইয়র্ক সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তালাল আসাদ তার অন সুইসাইড বম্বিং বইয়ে কয়েকটি প্রশ্ন পাঠকের উদ্দেশে উত্থাপন করছেন: ১. সহিংস পন্থাগুলোর মধ্যে আত্মঘাতি বোমাহামলা কেন এতো আতঙ্কজনক? ২. যুদ্ধ থেকে কেন এটা ব্যাপকভাবে আলাদা? ৩. ঠিক জিনিসটা সন্ত্রাসবাদকে নৈতিকভাবে সমর্থন করে না, ‘ন্যায়যুদ্ধের’ অন্যান্য হামলার ধরন থেকে আলাদা করে? যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী হামলার বিপে অবস্থান নিয়ে আসাদ আরও প্রশ্ন করছেন, ইরাকের আনুষ্ঠানিক যুদ্ধের নির্মমতা এবং সন্ত্রাসী হামলার নির্মানবিকতা একইরকম ভয়াবহ ব্যাপার নয়। তিনি বলছেন, যুদ্ধ হচ্ছে বিভিন্ন সার্বভৌম দেশের মধ্যকার লড়াই। রাষ্ট্রের সঙ্গে বিমূর্ত সন্ত্রাসের লড়াই নয় তা। ইরাক-আফগান যুদ্ধের সমর্থক ইহুদি দার্শনিক মাইকেল ওয়ালজার-এর বক্তব্য হচ্ছে, সন্ত্রাসবাদ কেবল নিরীহ মানুষই হত্যা করে না, তা দৈনন্দিন জীবনে অনিরাপত্তা ভীতি ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়।

উল্টো আসাদের যুক্তি হচ্ছে, এটা তো ‘ন্যায়যুদ্ধের’ সময়েও ঘটে। রাষ্ট্রীয় সেনাবাহিনী গ্রামের ওপর গুচ্ছ বোমা দিয়ে হামলা করে নিরীহ নারী-পুরুষ-শিশু হত্যা করে। সেনাদের অব্যাহত উপস্থিতি স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। এদিক দিয়ে রাষ্ট্রীয় সেনা ও সন্ত্রাসী হামলাকারীর কোনো পার্থক্য নেই। পার্থক্য কোথায়? এর উত্তর পাঠকের ভাবনার খোরাকের জন্য ছেড়ে দিয়েছেন।

ধর্মতত্ত্বের শিক ইভান স্ট্রেনস্কির উদ্ধৃতি দিয়ে তালাল আসাদ জানান, আত্মঘাতী হামলার অভিযান কেবল ‘ব্যক্তিগত মনস্তাত্ত্বিক প্রণোদনা’র ব্যাপার বলেই পার পাওয়া যাবে না। এর মধ্যে সামাজিক, ধর্মতাত্ত্বিক প্রশ্ন জড়িত রয়েছে, এও বিবেচনায় রাখতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রতত্ত্বের অধ্যাপক রোক্সানা ইউবেন বলেন, আত্মঘাতী বোমাহামলা একটি রাজনৈতিক ব্যাপার, এর সঙ্গে অমরতার সম্পর্ক অবিচ্ছেদ্য। এ কারণে তিনি বলছেন এটা একইসময়ে ধর্মনিরপে ও ধর্মীয় ব্যাপার। ইহজগতের প্রকট বৈষম্য তাকে বিদ্রোহী করে তুলছে আর পরজগতের বেশুমার সুখভোগের বেহেশতের মোহ তার চূড়ান্ত পরিণতিতে নিয়ে যাচ্ছে।

বুকে বোমা বেঁধে মৃত্যু হলে ‘শহীদ’ মর্যাদা তার জন্য বেহেশত নিশ্চিত করে দিচ্ছে। আবার কেউ বলছেন এর সঙ্গে ধর্মের কোনো সম্পর্ক নেই। বঞ্চনা, যন্ত্রণা, নিপীড়নসহ পার্থিব বা বৈষয়িক সব ধরনের বৈষম্যই একজনকে বাধ্য করে বুকে বোমা বেঁধে হামলা চালাতে। তবে যাই হোক, রাজনীতি ও ধর্ম দুটি ত্রেই আত্মহত্যা হামলাকারীদের জন্য অনুপ্রেরণার কাজ করে। প্রাথমিক পর্যায়ে একে প্রতিশোধ বা প্রতিহিংসা বলা হলেও ফিলিস্তিনের পরিস্থিতির বিচারে তাদের এই তৎপরতার পেছনে সমর্থনই পাওয়া যায়।

আত্মঘাতী হামলা কেন এতো ভয়াবহ তার কয়েকটি কারণ তালাল আসাদ উল্লেখ করেছেন। ১. জনতার ভিড়ে আকস্মিক আত্মঘাতী হামলায় প্রচণ্ড অভিঘাত সৃষ্টি করে, দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত করে। এই ধরনের সহিংতায় মৃত্যু আর জাতিরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকে না ২. অপরাধ ও শাস্তি, লোকসান ও পুনর্লাভকে পৃথক করা যায় না। একইসঙ্গে হত্যাকারী তার হত্যাকর্মের জন্য আইনের ছায়াতল থেকে দূরে সরে যায়। ৩. জীবন মানেই মৃত্যু--এ ধরনের বিশ্বাস ও মৃত্যু বিনিময়েই কেবল ইহুদি-খ্রিস্টানদের বিনাশ সম্ভব।

মুসলমানদের এমন ধর্মীয় বিশ্বাসও এক্ষেত্রে কাজ করে। এ মুহূর্তের সাড়া জাগানো মনোবিশ্লেষক ও দার্শনিক স্লাভোজ জিজেক তার একটি লেখায় বলেন, ‘শুধু বসে বসে অপো করুন এবং কিছু না-করার সাহস বুকে বাঁধুন। কেননা, ‘মাঝেমাঝে কিছু না করাই সবচেয়ে সহিংস ব্যাপার। ’ ukbdnews.com

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।