গণমাধ্যমকর্মী, চেয়ারম্যান - উন্নয়নের জন্য প্রচারাভিযান, সদস্য সচিব - সম্মিলিত জলাধার রক্ষা আন্দোলন।
প্রতীকী কিন্তু তাৎপর্যময়
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের এক বড় শিকার বাংলাদেশ। বাংলাদেশসহ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোর জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত য়তির জন্য দায়ী ধনী ও উন্নত দেশগুলো।
বাংলাদেশসহ বিপন্ন দেশগুলোর মানুষের তিপূরণ পাওয়া শুধু উচিত নয়, এটি আন্তর্জাতিক আইনি বাধ্যবাধকতা। কাজেই আবেদন-নিবেদন নয়, তাদের এ তিপূরণ দানে বাধ্য করতে হবে।
গত ৮ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত জলবায়ু সংক্রান্ত প্রথম প্রতীকী আদালতে এ দাবিই প্রবলভাবে উচ্চারিত হয়েছে। বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের প্রধান ভুক্তভোগী হিসেবে আমাদের অধিকারের সপে সোচ্চার অবস্থান প্রকাশের েেত্র প্রতীকী হলেও এই আদালতের তাৎপর্য অনেক।
জলবায়ু পরিবর্তন একটি বৈশ্বিক সমস্যা কিন্তু এর অভিঘাত স্থানীয়। উন্নত দেশগুলো তাদের শিল্পোন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বায়ুমণ্ডলে অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণ করছে। এর ফলে বিশ্বজুড়ে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণায়ন ঘটছে।
বায়ুমণ্ডলের উষ্ণায়নের ফলে বরফগলা পানি বেড়ে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে আর বাংলাদেশের মতো উপকূলবর্তী নিচু ভূ-ভাগ একটু একটু করে ডুবছে। সাগরে সময়-অসময়ে এখন ঝড়-ঝঞ্ঝাও বেড়ে গেছে।
দেখা যায়, কেবল ২০০৭ সালে বঙ্গোপসাগরে ছোট-বড় নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছে ২২টি। এ বছর ৮৯ বার ‘সতর্কতা সংকেত’ ঘোষণা করতে হয়েছে বন্দর কর্তৃপকে। গত আড়াই বছরে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৫০ ও ১০টি।
ঝড়ের সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বেড়েছে মাছ ধরা ট্রলারডুবি এবং জেলেদের নিখোঁজ ও নিহত হওয়ার সংখ্যাও।
বলাই বাহুল্য, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দুর্যোগগুলো এতো ঘনঘন ও ব্যাপক মাত্রায় ঘটছে। জলবায়ু পরিবর্তনের একেবারে প্রত্য শিকার আমাদের উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষ। তাদের জীবন-জীবিকা বিপন্ন। ধনী বিশ্বের বিলাসী জীবন-যাপনের দায় শোধ করতে হচ্ছে বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বের নিরপরাধ মানুষকে।
ল ল মানুষ আজ জলবায়ু-বিপন্ন। আমাদের দেশের সেই তিগ্রস্ত বিপন্ন মানুষগুলো তাদের বিপন্নতার কথা ও তিপূরণের দাবি তুলে ধরেছে ঢাকায় অনুষ্ঠিত জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রতীকী আদালতে। এটি একটি অভিনব ও ব্যতিক্রমী উদ্যোগÑ সন্দেহ নেই।
এই গণশুনানি বা ট্রাইব্যুনালে জলবায়ু পরিবর্তনের ভুক্তভোগী ছাড়াও হাজির ছিলেন দেশ-বিদেশের অনেক পরিবেশ বিজ্ঞানী, গণমাধ্যম কর্মী, আইন বিশেষজ্ঞ এবং জাতীয় নীতিনির্ধারকরা। সবাই সেখানে একমত হন যে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বিশেষভাবে বিপন্ন বাংলাদেশের মানুষ।
তিপূরণ পাওয়া তাদের অধিকার।
জলবায়ু পরিবর্তন রোধ ও তিগ্রস্ত দেশগুলোর তিপূরণ পাওয়ার েেত্র উন্নত দেশগুলোর অসহযোগিতাপূর্ণ মনোভাবের কারণে জলবায়ু সংক্রান্ত ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা অনেকটাই ফিকে হয়ে আছে। উষ্ণায়ন রোধে কার্বন নিঃসরণ কমানোর প্রতিশ্র“তি এখনো পর্যন্ত আদায় করা যায়নি শিল্পোন্নত বিশ্ব থেকে। এ অবস্থায় úৃথিবীর সকল প্রান্তের তিগ্রস্ত দেশের জনগণের তাদের অধিকারের কথা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে তুলে ধরা ও এর সপে বিশ্বজনমত জোরালো করার কোনো বিকল্প নেই।
সে েেত্র ঢাকায় অনুষ্ঠিত প্রতীকী আদালতের শুনানি বিশ্বের অন্য ভুক্তভোগী দেশের জন্যও অনুসরণীয় হতে পারে।
এ আদালত বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশের জলবায়ু পরিবর্তনে তিগ্রস্ত মানুষের তিপূরণ দেয়া, তাদের পুনর্বাসন, জীবন ও জীবিকার ব্যবস্থা করা এবং তাদের আইনি ও মানবিক অধিকার নিশ্চিত করতে স্থায়ী ও স্বাধীন একটি আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল স্থাপনসহ ১৫টি নির্দেশনা দিয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে তিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনের উদ্যোগ, হুমকিগ্রস্তদের অভিবাসনের উদ্যোগ, সম্ভাব্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের তি কমাতে মানবিক ও সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি, তিগ্রস্ত নারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা গ্রহণ, গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা কমিয়ে আনা, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বাস্তুচ্যুতদের জন্য আন্তর্জাতিক ফোরাম গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ ইত্যাদি।
এ নির্দেশনাগুলো সরকারের বিবেচনায় আসা এবং বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত বিপন্নতার দিকে বিশ্বদৃষ্টি আকৃষ্ট হওয়ার মধ্যেই এ প্রতীকী আদালতের সার্থকতা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।