আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মহান বীর আলেকজান্ডার

গ্রীস তখন অসংখ্য ছোট ছোট রাষ্ট্রে বিভক্ত। এমন একটি রাষ্ট্রের অধিপতি ছিলেন ফিলিপ। তিনি ছিলেন বীর ও সাহসী যোদ্ধা। সিংহাসন অধিকার করার অল্প দিনের মধ্যেই গড়ে তুললেন সুদক্ষ সৈন্যবাহিনী। ফিলিপের পুত্রই বীর আলেকজান্ডার।

আলেকজান্ডারের জন্ম ৩৫৬ সালে। মা ছিলেন অস্বাভাবিক মানুষ। আলেকজান্ডার বেঁচেছিলেন মাত্র ৩৩ বছর। তিনি চেয়েছিলেন পৃথিবীরব্যাপী রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করতে। তার মনের অতিমানবীয় এই ইচ্ছাকে পূর্ণ করার জন্য স্বল্পকালীন জীবনের অর্ধেকেই প্রায় অতিবাহিত করেছেন যুদ্ধক্ষেত্রে।

তার বীরত্ব ও সাহসিকতার জন্য ঐতিহাসিকরা তাকে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ নৃপতি আসনে বসিয়েছেন। তাকে ‘আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট’ নামে অভিহিত করা হয়। আলেকজান্ডারের মৃত্যুর অব্যবহিত পরেই চন্দ্রগুপ্ত গ্রীক শাসকদের বিতাড়নের প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। আলেকজান্ডারের প্রথম শিক্ষক ছিলেন লিওনিদোস নামে অলিম্পিয়াসের এক আত্মীয়। আলেকজান্ডার ছিলেন অশান্ত এবং একরোখা।

শিশু আলেকজান্ডারকে পড়াশোনায় মনোযোগী করতে হিমশিম খেতে হয়েছে লিওনিদোসকে। তবে তার আন্তরিকতায় একসময় পড়াশোনায় মনোযোগী হয়ে ওঠেন আলেকজান্ডার। অংক, ইতিহাস এবং ঐতিহাসিক বিষয়ে আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। প্রায় ১২ বছরের সামরিক অভিযানের পর আলেকজান্ডার মৃত্যুবরণ করেন। ধারণা করা হয় হয়ত তিনি ম্যালেরিয়া, টাইফয়েড অথবা ভাইরাল এনকেফালাইটিস্‌ এর আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

হেলেনেস্টিক যুগে তার অভিযানের কাহিনী লোকের মুখে মুখে প্রচলিত ছিল। কিশোর বয়স থেকেই তার মধ্যে ফুটে উঠেছিল বীরোচিত সাহস। এই সাহসের সাথে সংমিশ্রণ ঘটেছিল তীক্ষ্ণ বুদ্ধির। একদিন একজন ব্যবসায়ী একটি ঘোড়া বিক্রি করেছিল ফিলিপের কাছে। এমন সুন্দর ঘোড়া সচরাচর দেখা যায় না।

ফিলিপের লোকজন ঘোড়াটিকে মাঠে নিয়ে যেতেই হিংস্র হয়ে উঠল। যতবারই লোকেরা তার পিঠের উপর চড়তে যায়, ততবারই সে লাফিয়ে সবাইকে দূরে পাঠিয়ে দেয়। এসময় পুরো ঘটনাটি দেখছিল ফিলিপ এবং আলেকজান্ডার। আলেকজান্ডার খেয়াল করলো ঘোড়াটি তার ছায়া দেখে ভয় পাচ্ছে। তাই ঘোড়ার পাশে গিয়ে আস্তে আস্তে তার মুখটা সূর্যের দিকে ঘুরিয়ে দিলেন।

তারপর ঘোড়াটিকে আদর করতে করতে একলাফে পিঠের উপর উঠে বসেন। এসময় ছেলের সাহস ও বুদ্ধি দেখে মুগ্ধ হন ফিলিপ। তিনি ছেলেকে জেড়িয়ে ধরে বললেন, তোমাকে এভাবেই নতুন রাজ্য জয় করতে হবে। গ্রীসের সভ্যতা ছিল মূলতঃ নগর কেন্দ্রিক। এটি নগরসমূহে বিকাশ লাভ করেছিল এবং নগরবাসীদের দ্বারা বিস্তার লাভ করেছিল।

প্রাচ্যের নগরগুলি কিছু সংখ্যক দালান-কোঠা নিয়ে গড়ে উঠেছিল। জনগণের মধ্যে কোন সুষ্ঠ পরিকল্পণা ছিল না। একজন স্বৈরাচারী শাসকের দ্বারা সেগুলি শাসিত হত। তাই জনগণের অবস্থা ছিল প্রায় ক্রীতদাস পর্যায়ের। অপরদিকে গ্রীসের নগরগুলি ছিল সুপরিকল্পিত এবং শিল্পমন্ডিতভাবে নির্মিত।

সাহিত্য ও শিল্পকলা গ্রীকদের জীবনে একটি বিরাট স্থান দখল করেছিল। বুদ্ধিগত বিকাশ সম্পর্কে সতর্ক ছিল বিধায়, তারা বিভিন্ন শিক্ষালয় স্থাপন করেছিল। প্রাচ্যের অন্যান্য জাতিসমূহ থেকে গ্রীকদের জীবন-যাপনের পদ্ধতি ও রীতিনীতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরণের। তাদের পোশাক ছিল জমকাল, ঢিলে-ঢালা এবং তারা চওড়া কান বিশিষ্ট টুপি মাথায় দিত। তাদের জীবন দর্শন ছিল এই ধরণের যে, জীবনকে আজই উপভোগ করতে হবে, আগামীকাল আমরা নাও থাকতে পারি।

এই কারণে গ্রীকেরা ভোগ-বিলাসকে তাদের অন্যতম প্রধান বিষয় মনে করত। তদের কাছে ধর্ম ছিল ভবিষ্যৎ জীবনের বিষয় তাই তাদের চিন্তা-ভাবনায় এর স্থান ছিল সামান্য মাত্র। দীর্ঘ তিন বছর ধরে অ্যারিস্টটলের কাছে শিক্ষালাভ করেন আলেকজান্ডার। পরবর্তীকালে অনেক ঐতিহাসিকের অভিমত,নিজেকে বিশ্বজয়ী হিসেবে গড়ে তোলার শিক্ষা আলেকজান্ডার পেয়েছিলেন অ্যারিস্টটলের কাছে। আমৃত্য গুরুকে গভীর সম্মান করেছেন আলেকজান্ডার।

আলেকজান্ডারের যখন ষোল বছর বয়স, ফিলিপ বাইজানটাইন অভিযানে বের হলেন। পুত্রের উপর রাজ্যের সমস্ত ভার অর্পণ করলেন। ফিলিপের অনুপস্থিতিতে কিছু অধিনন্থ অঞ্চলের নেতারা বিদ্রোহ ঘোষণা করল। কিশোর আলেকজান্ডার চুপ করে বসে রইলেন না। বীরদর্পে সৈন্যবাহিনী নিয়ে হামলা করলেন শত্রুদের দূর্গে।

পরাজিত করলেন বিদ্রোহীদের। এমনকি বন্দী করে ম্যাসিডনে নিয়ে আসলেন। যুদ্ধে জয়ী হয়ে আলেকজান্ডার মাতাল হয়ে পড়লেন। তিনি বিজয়ের নেশায় মত্ত হয়ে একের পর এক রাজ্য দখলের খেলায় নামলেন। এ বিষয়টি পিতা ফিলিপের পছন্দ হয়নি।

এ নিয়ে শুরু হয় পিতা-পুত্রের দ্বন্দ। আলেকজান্ডারের কুড়ি বছর বয়সে ফিলিপ আততায়ীদের হাতে নিহত হন। ইতিহাসবিদদের মতে অবশ্য, এ হত্যার পেছনে রাণী অলিম্পিয়াসের হাত আছে বলে বলা হয়। ফিলিপের মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে রাজমহলের অভ্যন্তরে শুরু হয় কোন্দল। নতুন রাণীর মেয়েকে হত্যা করা হয়।

এমনকি নতুন রাণীও আত্মহত্যা করেন। রাষ্ট্রে দেখা যায় অরাজকতা। আশেপাশের রাষ্ট্রগুলো শত্রুতায় রুপান্তরিত হয়। মিসরের পথে আলেকজান্ডার জেরুজালেমে প্রবেশ করলেন এবং বিনা বাঁধায় তা দখল করে নিলেন। জেরুজালেমের বাইরে সেইসময় একদল ধর্মীয়নেতা তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন।

এদের মধ্যে এমন একজন ছিলেন, যিনি পূর্বেই তার সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন যে, তিনি বিশ্বজয় করবেন। আলেকজান্ডার তাদের দ্বারা প্রভাবিত হলেন এবং পবিত্র নগরী সম্পর্কীত যুক্তিসঙ্গত শর্তাবলী তিনি মঞ্জুর করলেন। সম্রাট আলেকজান্ডার সুদূর গ্রিস থেকে একের পর এক রাজ্য জয় করে ইরান আফগানিস্তান হয়ে ভারতের পাঞ্জাবে পৌছে যায়। সুদর্শন তরুণ সম্রাটের চোখে সারা পৃথিবী জয়ের স্বপ্ন। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তিশালী সেনাবাহিনীর অধিকারি তিনি।

বিখ্যাত ইরান সম্রাট দারায়ুস থেকে শুরু করে উত্তর পশ্চিম ভারতের পরাক্রমশালী রাজা পুরু পর্যন্ত কেউ তার সামনে দাড়াতে পারে নাই। এখন তার সামনে মাত্র একটা বাধা, বিপাশা নদীর ওপারের গঙ্গারিডই রাজ্য। ভারতের মূল ভুখন্ড। এটুকু করতলগত হলেই সমগ্র ভারত তার দখল হয়ে গেল। আলেকজান্ডারের পিতা দ্বিতীয় ফিলিপ তার শাসনামলে গ্রিসের নগর রাষ্ট্রগুলোকে নিজের শাসনাধীনে আনেন।

আলজান্ডার নিজেও এই নগররাষ্ট্রগুলিকে একত্রিত করতে অভিযান চালান কারণ ফিলিপের মৃত্যুর পর এগুলো বিদ্রোহ করেছিল। এরপর আলেকজান্ডার একে একে পারস্য, আনাতোলিয়া, সিরিয়া, ফোনিসিয়া, জুডিয়া, গাজা, মিশর, ব্যাক্ট্রিয়া এবং মেসোপটেমিয়া জয় করেন। তার সাম্রাজ্য মেসিডোনিয়া থেকে পাঞ্জাব পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। পিতার মৃত্যুর পর আলেকজান্ডার পশ্চিমে অভিযান চালান ইউরোপ জয় করার জন্য। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.