আমি তখন সদ্য মাধ্যমিক পাস করিয়া একাদশ শ্রেণীতে ভর্তি হইয়াছি . সেই সময় আমার মনে হইত আমি বড় হইয়া
গিয়াছি বড়দের মত সব কিছু আনন্দ করিবার অধিকার আমার আছে। এই ভাবনা হইতে বড়দের মতো আমাদেরও পাখনা
গজাইলো . এটা যেই দিন ঘটিয়াছিল সেই দিনটা কোন মাসের কত তারিখ ছিল সেই কথা আজ আর আমার স্মরণে নাই ।
সকালে ঘুম ভাঙ্গিয়া দেখিলাম আমার প্রিয় বন্ধু কপিল আসিয়াছে . সোফার ওপর বসিয়া আমার দিকে চাইয়া
আছে .এ কথা সে কথার বলার পর ও আমাকে পর্ণ মুভী দেখিতে যাইবার নিমত্রণ দিলো . আমিও তত্খনাত রাজি হইয়া
গেলাম .ওই বিষয়ে আমার ব্যাপক কৈতুহল ছিল সেই সময় . প্রথমে ঠিক করিলাম স্কুল যাইবো . সেইখান থেকে
কয়েকটা ক্লাস করিয়া বাড়ি ফিরিব , তারপর স্নান করিয়া সেই মুভী দেখিতে যাইবো . স্কুল যাইবার একটা প্রধান কারণ
ছিল গায়ত্রী কে দেখা . সেই সময় আমি আর কপিল দুইজনেই গায়ত্রীকে মনে মনে ভালো বাসিতাম .ওর সামনে গিয়া
ওকে মনের কথা বলিবার সাহস আমাদের দুই জনের মধ্যে কাহারও ছিল না . আমরা খালি দূর হইতে ওকে দেখিয়া মনে
মনে খুশী হইতাম . আমরা ছিলাম মুখ চোরা আর ভিতু প্রকৃতির . যাহা হউক সেদিনের কথায় আসি . সেইদিন স্কুল
হইতে গায়ত্রী কে দেখিয়া খুশী হইয়া বাড়ি ফিরিলাম . কপিল বলিলো ঠিক এগারটার সময় ও আমার বাড়ি আসিবে ,আমি
জেনো প্রস্তুত হইয়া থাকি . বারোটা থেকে শো . বাড়ি আসিয়া স্নান করিয়া খাবার খাইয়া যেই উঠিব ঠিক সেই সময়
বেল বাজিলো ,বুঝিলাম ওই শালা আসিয়াছে. গত পনেরো বছরের বন্ধুত্বে কপিল কোনোও একদিনের জন্য হইলেও
সঠিক সময়ে আসেনাই .কিন্তু সেই দিন ঠিক একেবারে কাটাই কাটাই এগারটার সময় আসিয়া উপস্থিত হইলো . যাহা হউক
আমরা পূর্বপরিকল্পনা মাফিক ঘর হইতে আনন্দ ভিডিও হলের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম । আমরা ঠিক করিলাম শর্ট কাট রাস্তা
ধরিব যাতে শো শুরু হইবার কিঞ্চিত পূর্বেই আমরা আমাদের গন্তব্যস্তলে পৌছিতে পারি । রাস্তাটা আমাদের ভাল জানা ছিলনা ।
তাই নানা রকম ভুল রাস্তা ধরিয়া একে ওকে জিজ্ঞাসা করিয়া আমরা একটা সাইকেল স্ট্যান্ডে আমাদের সাইকেল রাখিয়া বাস
ধরিয়া যখন আনন্দ ভিডিও হলে পৌছিলাম তখন শো শুরু হইবার মিনিট পাঁচেক বাকি । আমরা দুইটা ফাস্ট ক্লাস টিকিট
কাটিলাম । যাতে আমরা সবার ওপরে বসিয়া বহু আকাঙ্ক্ষিত সেই পর্ণ মুভি কোনও রকমের বিঘ্নে বিঘ্নিত না হইয়া
আনন্দের সহিত দেখিতে পারি । আমরা সেই মুভির সামান্য অংশও ছাড়িতে রাজি ছিলাম না । আমরা টিকিট কাটিয়া হলের
পেছনে নাম না জানা এক গাছের পেছনে লুক্কাইত রহিলাম যাতে আমাদের পূর্ব পরিচিত কেহ আমাদের দেখিতে না পায় ।
এবং হলের সম্মুখের গেটের দিকে শকুনের শাণিত দৃষ্টি রাখিলাম যাতে চেনা জানা কাহাকেও আসিতে দেখিলে পলায়ন করিতে পারি ।
কপিল সিনেমার পোস্টার দেখিতে ব্যস্ত হইয়া গেল । ও একখান কালো চশমা পরিয়া ছিল যাতে ওকে পোস্টার দেখাকালীন
কেহ চিনিতে না পারে । ছবির নাম কুমারী দুলহন । ছবির নাম শুনিয়া এবং পোস্টার দেখিয়া আমাদের দুইজনের মনে
কিছু কিছু হইতে লাগিল এবং খুশিতে আমাদের আহল্লাদের সীমা রহিলনা ।
আমরা সশব্যস্ত হইয়া গেলাম কখন শো শুরু হয়
এই ভাবিয়া । কিছুক্ষণ পরে আমি ভূত দেখিবার মতো চমকিয়া উঠিলাম । মনে হইল এই বুঝি ভিরমি খাইব। দেখি কী এক
খান পুলিশ জিপ পো পো করিয়া হলের সম্মুখের গেট দিয়া ভেতরে প্রবেশ করিল । জিপের ভিতরে চাইর পাঁচটা মোটা মোটা
পুলিশ বসিয়া ছিল ।
কপিলের কোনও ভ্রুক্ষেপ নাই , ও পোস্টার দেখিয়া পরম পুলকে পুলকিত হইতেছিল ।
স্পষ্ট দেখিলাম জিপের দরজা খুলিয়া একটা পুলিশ নামিল । তাহার পরে আরেকটা নামিল । কোথা হইতে "সব কটাকে হাতকড়া
পরাইয়া লইয়া চল " এই বাক্যটা শুনিলাম । শুনিয়া আমার তখন অবস্থা খারাপ ।
বুকের ভিতর কে যেন হাতুড়ি পিটিতে ছিল ।
পা দুইটা আমার অনবরত তির তির করিয়া কাম্পিতে লাগিল । ঐ বুঝি ধরা পড়িলাম , কেলেঙ্কারি হইল ,সবাই জানিনা গেল ।
দেখিলাম হলের অন্যান্য দর্শকরা আস্তে আস্তে কাট মারিতে শুরু করিল , প্রথমে একজন হাটিতে লাগিল , তার পেছনে আরেকজন ।
তাহাদের দেখাদেখি আরেকজন ।
একটু পরে সবার হাটার গতি বাড়িল । তারপর দেখিলাম সবাই পাই পাই করিয়া দৌড় দিল ।
আমিও কপিলের কথা ভুলিয়া উর্দ্ধশ্বাসে ওদের পিছু পিছু দৌড় দিলাম। জীবনে অমন জোরে কোনও দিনও দৌড়ি নাই ।
যদি অলিম্পিকে দৌড়ায়তাম তাহা হইলে আমি নিশ্চিত সোনা পাইতাম ।
দৌড়াইতে দৌড়াইতে অনেকটা আসিয়া দেখিলাম
আমার পেছনে পেছনে কপিল ও ছুটছে ওর পায়ে একটাও চটি নাই , আমার পায়ে শুধু একটা চটি । কপিলের সেই কালো চশমা
বেপাত্তা । তখন প্রচণ্ড উত্তাপের দিন , তাস্বত্তেও উত্তাপ আমাদের পর্ণ মুভী দেখিবার বাসনাকে বিন্দু মাত্র কম করিতে পারেনাই।
অনেকটা আসিয়া যখন বুঝিলাম পুলিস আমাদের পেছনে নাই তখন আমরা দৌড় থামাইয়া হাটিতে লাগিলাম । দৌড়ানোর চোটে
হাপাইতে হাপাইতে আমাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত হইয়া গেল।
আমি এক পায়ে চটি নিয়া হাটিতেছিলাম আর কপিল খালি পায়ে । কপিল
কহিল এক পায়ের চটি রাখিয়া কী লাভ ? ফেলিয়া দে . আমি ফেলিয়া দিলাম, তাহার পর দুইজনই সেই গরম পিচের রাস্তায়
খালি পায়ে হাটিতে লাগিলাম । প্রখর তপন তাপে আমাদের পদ যুগল ঝলসিয়া উঠিতে লাগিল । কিছুদূর আসিয়া একখান বাস
পাইলে উহাতে চড়িয়া বসিলাম । তাহারপরে যেইখানে আমরা আমাদের সাইকেল রাখিয়া ছিলাম ওইখানে আসিয়া সাইকেল লইবার
সময় সাইকেল স্টানডের কাকিমা আমাদের খালি পা দেখিয়া বলিল "কা হুআ বাবু" ? আমরা বলিলাম আমরা চটি খুলিয়ে মন্দিরে ঠাকুর প্রণাম করিতে
গিয়াছিলাম , পূজা দিয়া বাহিরে আসিয়া দেখিলাম আমাদের চটি চুরি হইয়া গিয়াছে ।
তায় আমাদের খালি পায়ে আসিতে হইয়াছে ।
বাড়ি আসিয়াও ওই এক কথায় বলিয়া ছিলাম । পরে আমাদের সিনিয়রদের মুখে শুনিয়া ছিলাম আমরা খামোকা ভয় পাইয়া ছিলাম ,
পুলিশ নাকি ঘুষ লইতে আসিয়া ছিল সেদিন । ঘুষ নিয়া চলিয়া যাইত উহারা । উহাদের কহাকেও ধরিবার কোনও রকমের অভিসন্ধি ছিল না ।
যাহা হোউক আমরা সেদিনের পর হইতে আর কখনো আনন্দ ভিডিও হলের মুখো হই নাই । এবং শপত করিয়াছিলাম আর কখনো পর্ণ মুভি দেখিবার ইচ্ছা রাখিব না ।
বি ॰ দ্র - পরে অবশ্য সেই শপত আমারা অক্ষত রাখিতে পারিনাই । ভাঙ্গিতে হইয়াছিল , সেই গল্প আরেক দিন বলিব
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।