তুমি যে আছ তাই,আমি ব্লগে লিখে যাই...... অনেকদিন যাবত চলে আসলেও অনেকটা হঠাৎ করেই যেন আমাদের নাড়া দিয়ে যাচ্ছে ধর্ষণ নামের এক অমানবিক এবং বীভৎস- কলুষিত নৃশংসতা। প্রতিদিনই পত্রিকার পাতায় আর টিভির পর্দায় জায়গা করে নিচ্ছে কিছু মানসিক বৈকল্যের শিকার পুরুষ এবং তাদের শিকার আমাদেরই কিছু বোন। এর পিছনের ঠিক কারণটা কি তা পুরোপুরি স্পষ্ট না হলেও আমরা অনেকটাই বুঝতে পারছি যে নৈতিকতার জায়গাটা ক্ষয় হতে হতে আমরা জানোয়ারের কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছি। শুধু ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না এইসব নরপশুরা,সেই সাথে এই নির্যাতনের ভিডিও ধারণ করে ইন্টারনেটে আপলোড করে সারা পৃথিবীকে জানিয়ে দিচ্ছে তাদের বর্বরতা আর পশুত্বকে। ব্যক্তিগতভাবে আমার ধারণা,আমরা যা দেখছি ঠিক সেটাই সম্ভবত আমাদের নিজেদের অজান্তে নিজেদের মধ্যেই ধারণ করে নিচ্ছি।
আরেকটু স্পষ্ট করে বললে বলতে হয়,মিডিয়াগুলো আমাদের যা দেখাচ্ছে এবং তার সাথে সাথে ইন্টারনেট আর মোবাইল প্রযুক্তির কারণে সহজলভ্য পর্ণ আমাদের মানসিকতা আর চারপাশ অনেকটাই বদলে দিচ্ছে । আপাতদৃষ্টিতে নিজের মনের অবদমিত বাসনা পূর্ণ হলেও সেই সাথে বিকার ঘটাচ্ছে স্বাভাবিক অথচ অনেকটা ট্যাবু করে রাখা ‘যৌনতাকে’। যৌন শিক্ষা ভালো না মন্দ সেই তর্কে আমি এই মুহূর্তে যেতে চাচ্ছি না। তবে এতটুকু বুঝতে পারছি পর্ণ বা অশ্লীল ভিডিওচিত্র কিংবা চটি নামের যৌন সাহিত্যর মন্দ দিকগুলো যদি আমাদের চোখের সামনে ধরা পড়ে,তবে এই ভয়ঙ্কর আসক্তির ব্যাপারে সচেতনতার হারটা হয়তো বাড়লেও বাড়তে পারে। সেই সাথে কমে আসতে পারে যৌন নির্যাতন।
পর্ণ ঠিক কিভাবে আমাদের ক্ষতি করে?একনজরে দেখে আসা যাকঃ
১.পর্ণ দেখার ফলে যৌন-সন্তুষ্টি অনেকটাই কমে আসে। যৌন সম্পর্ক গড়ে উঠার সময় পর্ণ আসক্ত ব্যক্তি তার সঙ্গীকে পর্ণস্টার হিসেবেই বিবেচনা করে। প্লেবয় কিংবা পেন্টহাউজের মডেলদের দেখে সাধারণ গড়পড়তা মানুষদের প্রতি ‘আকর্ষণ’ কম অনুভব করাটাই স্বাভাবিক। যৌনতার স্বাভাবিক রূপকে ছাপিয়ে নানা বিচিত্র সব কায়দায় যৌনতাকে উপভোগ করতে আর ‘সেক্স ডিজাইনার’ হিসেবে গড়ে উঠতে পর্ণের জুড়ি নেই!স্বাভাবিক সব সম্পর্ক ছাপিয়ে নিজের বিকৃত চাহিদাটাই মুখ্য হয়ে উঠে।
২.পর্ণ আপনাকে সত্যিকারের সম্পর্ক থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।
পর্ণ যৌনতার অভিজ্ঞতা থেকে আবেগের জায়গাটাকে ক্রমশ দূরে ঠেলে দেয়। পর্ণ শুধু যৌনতাটাকেই ফ্রেমে কিংবা পিক্সেলে তুলে ধরে,মানব-মানবীর অন্তরঙ্গতাকে নয়।
৩.নারীর প্রতি স্বাভাবিক আর শ্রদ্ধার দৃষ্টিভঙ্গি অনেকটাই দূরে ঠেলে দেয় পর্ণ। নারীকে স্রষ্টার সৃষ্টি হিসেবে না দেখে স্রেফ ভোগ্যপণ্য হিসেবে পর্ণের ভুমিকা অনেকখানি। ‘ফ্রি পর্ণ’ একটা ভুয়া ব্যাপার ছাড়া আর বেশি কিছু নয়।
পর্ণগ্রাফির মূল্য কিছু না কিছু রয়েছে এবং তা কাউকে না কাউকে শোধ করতে হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে মূল্য চুকাতে হয় আমাদের চারপাশে থাকা তরুণী আর নারীদের। পর্ণ আসক্ত পুরুষদের বিষাক্ত লালসার শিকার হতে হয় মানবপ্রজাতির ধারা বজিয়ে রাখা নারীকুলকে।
৪.পর্ণ ভাষাগত এবং শারীরিক দিক থেকে ধীরে ধীরে আগ্রাসী করে তোলে।
সর্বোপরি পর্ণ দেখলে তা নিয়মিত দেখার জন্য আপনার মস্তিস্ক সর্বদা নতুন চাহিদা তৈরি করতে থাকে।
অনেকটা রক্তে মিশে যাওয়ার মত। আপনাকে রীতিমত ‘আসক্ত’ করে তুলবে। ঠিক আসক্তি বলা যায় না একে। কারণ এর সরাসরি কোন চিকিৎসা নেই। কিভাবে পর্ণ আসক্তি থেকে সে ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দেওয়াটা কিছুটা মুশকিল বৈকি!পার্সোনাল কম্পিউটার-স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটে সহজে পর্ণ পাওয়া এই প্রাদুর্ভাবকে অনেকটাই বাড়িয়ে দিয়েছে।
তারপরেও ইন্টারনেট ঘেঁটে এই সাহায্যনামা পাওয়া গেলঃ
নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রাখুন। শুধু এইটুকু মনে রাখুন এই বদঅভ্যাস অপেক্ষা আপনার মন-বিবেক অনেক বেশি শক্তিশালী। আপনি যেহেতু সমস্যাটা বুঝতে পেরেছেন,শুধু মনের জোর আর প্রবল ইচ্ছা থাকলে আপনি এর থেকে মুক্তি পাবেনই!
পর্ণের যাবতীয় সব উৎস দূরে ঠেলে রাখুন। পর্ণের উৎস যদি হয় ডিভিডি কিংবা ম্যাগাজিন তবে তা নষ্ট করে ফেলুন। আর যদি হয় ইন্টারনেট তবে এমন জায়গায় ব্যবহার করুন যেখানে আপনার পরিবারের সবাই যাতায়াত করেন।
পিসিতে প্যারেন্টাল কন্ট্রোল সেট করুন। ইন্টারনেটে এমন সব ফ্রি সফটওয়্যার পাওয়া যায় যেগুলো কিনা বাজে এবং মন্দ ওয়েবসাইট গুলোতে এক্সেস বন্ধ করে দিতে পারে।
যে সময়টা আপনি হয়তো পর্ণ দেখে নষ্ট করতেন সেটা অন্য কোন কাজে লাগান। নিজেকে অভ্যস্ত করে নিন নতুন কোন শখে কিংবা কাজে। এই সময়টায় বই পড়তে পারেন, নতুন কোন কাজ শিখতে পারেন,পারেন পুরাতন শখ আবার নতুন করে শুরু করতে অথবা খেলাধুলা করতে,আত্মউন্নয়নে ব্যয় করতে এমনকি ধর্মচর্চাও করতে পারেন।
অর্থাৎ আপনি এই সময়টা কোন ভাবেই ফাঁকা রাখবেন না।
বন্ধু কিংবা মিডিয়া(যেমন গান,মুভি) পর্ণ আসক্তিতে বড় ভুমিকা রাখে। সুতরাং আপনার যেসব বন্ধু এইসব ব্যাপারে অতি আগ্রহি,তাদের এড়িয়ে চলুন। সেইসব মুভি দেখা বন্ধ করুন যাতে উত্তেজক বিষয় রয়েছে।
শুধু বলি সাহসী হন।
আপনার মত হাজারো-লাখো জন এই আসক্তিতে ভুগছেন। শুধু আপনার লক্ষ্য ঠিক রাখুন যে আপনি এই আসক্তি থেকে মুক্তি পাবেনই। দেখবেন আসক্তি থেকে মুক্তি পাওয়া কতটা আনন্দের। নিরন্তর শুভকামনা আপনার জন্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।