আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আশরাফুল ছাড়া আর কে

আকসু কর্মকর্তাদের কাছে মোহাম্মদ আশরাফুল প্রথম যখন স্বীকার করেন ম্যাচ ফিঙ্ংিয়ের কথা, তখনো ভাবেননি তার স্বীকারোক্তি ঝড় তুলবে দেশের ক্রীড়াঙ্গনে। তার স্বীকারোক্তিই সিডরের মতো দুমড়ে মুচড়ে দিয়েছে দেশের ক্রিকেটাঙ্গনকে। অবশ্য বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ স্বীকার করায় দেশের ক্রিকেটপ্রেমীরা বিভক্ত হয়ে পড়েন দুই শিবিরে। কেউ তার সাফাই গাইছেন। অন্য পক্ষ আবার তুলাধোনা করছেন অহরহ।

গত তিন-চার মাস পক্ষ-বিপক্ষের মাতামাতি নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাননি আশরাফুল। অপেক্ষা করেছেন রিপোর্টের জন্য। তবে গতকাল নির্ঘুম রাত পার করেছেন টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান। ভেবেছেন শাস্তির কথা।

শোনা যাচ্ছে মূল রিপোর্টের কপি গতকাল রাতেই আশরাফুলের হাতে বিসিবি পেঁৗছে দিয়েছে।

এতে নাকি তার শাস্তির মেয়াদ দুই বছরের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। বিপিএলের দ্বিতীয় আসর শেষে ম্যাচ ফিঙ্ংি তদন্ত করতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ১ কোটি ৬৪ লাখ টাকায় নিয়োগ দেয় আকসুকে। সেই তদন্তের মুখোমুখি হয়েছেন আশরাফুল, মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, সাবেক ক্রিকেটার খালেদ মাসুদ পাইলট, খালেদ মাহমুদ সুজন, মোহাম্মদ রফিক, সানোয়ার হোসেন, ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের কর্ণধার সেলিম চৌধুরী, তার ছেলে শিহাব চৌধুরীসহ অনেকেই। আকসু কর্মকর্তাদের জেরায় আশরাফুল স্বীকার করেন ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটরসের দুটি ম্যাচ পাতানোর কথা। ম্যাচ দুটির অধিনায়ক ছিলেন তিনি।

জানিয়েছেন ম্যাচ পাতিয়েছেন ফ্র্যাঞ্চাইজি কর্ণধার সেলিম চৌধুরীর ইচ্ছায়। শুধু এটুকু বলেই ক্ষান্ত হননি সাবেক অধিনায়ক, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও বাংলাদেশের ম্যাচ পাতানো হয়েছে বলে স্বীকার করেন স্থানীয় এক মিডিয়ার কাছে। তার এই স্বীকারোক্তি দেশের ক্রিকেট মর্যাদাকে মুহূর্তেই মাটিতে নামিয়ে আনে। তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ম্যাচ পাতানোর সঙ্গে এমন তিন ক্রিকেটারের নাম বলেন, যারা দেশের তিন লিজেন্ড ক্রিকেটার।

গত তিন মাস তদন্ত করতে পাঁচবার ঢাকায় আসেন আকসু কর্মকর্তারা।

প্রতিবারই বিভিন্ন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তদন্তের সময় বার বার শোনা যাচ্ছিল রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা। কিন্তু জমা দেননি। আইসিসির বার্ষিক সাধারণ সভায় বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে জানানো হয়, তদন্ত সম্পন্ন করে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে। ২৯ জুলাই বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সভা শেষে বিসিবি সভাপতি জানান ঈদের পর রিপোর্ট হাতে পাবেন এবং এর পরই প্রকাশ করবেন।

আজ রিপোর্ট হাতে পাবে বিসিবি। অ্যাডহক কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলন করে রিপোর্ট আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করবে ক্রিকেট বোর্ড। তাতেই অপেক্ষার শেষ হবে ক্রীড়ামোদীদের।

ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ স্বীকার করার পর আশরাফুলকে সব ধরনের ক্রিকেটে সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করে বিসিবি। নিষিদ্ধ হওয়ার পর একঘরে হয়ে পড়েন তিনি।

বন্ধ করে দেন জনসম্মুখে আসা। অফুরন্ত সময় পার করছেন মাদারটেক বনশ্রীর নিজ বাসায় পরিবার ছাড়া ছোটবেলার বন্ধুদের সঙ্গে। তার পরও চোখ রাখতেন পত্রপত্রিকা, টেলিভিশনের দিকে। অপেক্ষায় থাকতেন রিপোর্টের। অনেকের কাছেই জানতে চাইতেন রিপোর্ট সম্পর্কে।

আজ সেই বহু প্রতীক্ষিত রিপোর্ট প্রকাশ করবে বিসিবি। এ নিয়ে জানতে চাইলে টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান বলেন, 'টেনশন হচ্ছে। তবে যা হওয়ার তা তো হবেই। বেশি ভেবে কী লাভ?'

ম্যাচ ফিঙ্ংিয়ে জড়িত থাকায় আজীবন নিষিদ্ধ হয়েছেন মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন, সেলিম মালিক, হ্যান্সি ক্রোনিয়াদের মতো লিজেন্ড ক্রিকেটাররা। স্পট ফিঙ্ংিয়ের জন্য জেল খেটেছেন সালমান বাট, মুহাম্মদ আসিফ, মুহাম্মদ আমেররা।

স্বীকারোক্তির পরও সেই হিসেবে কোনো বড় ধরনের শাস্তি ঘোষিত হয়নি আশরাফুলের বিরুদ্ধে। আজ রিপোর্ট প্রকাশের পর স্পষ্ট হবে কী ধরনের শাস্তি পেতে যাচ্ছেন তিনি। শাস্তি প্রসঙ্গে আশরাফুল বলেন, 'আমি জানি না শাস্তি কী রকম হবে? তবে আমি আবারও ক্রিকেটে ফিরতে চাই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বহু ক্রিকেটার ম্যাচ ফিঙ্ংিয়ে জড়িত থাকার পর শাস্তি ভোগ করে আবারও ক্রিকেটে ফিরেছেন। আমিও ফিরতে চাই ক্রিকেটে।

খেলতে চাই। ' শাস্তি ঘোষণা করা হলে আপিল করবেন কি না- এ প্রসঙ্গে বলেন, 'আগে শাস্তির মেয়াদ ঘোষণা হোক। তারপর চিন্তা করব আপিল করব কি না। '

 

রিপোর্টে যে শাস্তির উল্লেখই থাকুক না কেন, তা মেনে নিতে মানসিকভাবে প্রস্তুত বাংলাদেশ ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান।

এখন শুধু রাত পোহানোর পালা।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।