মিয়া মুস্তাফিজ
ইউরোপের মেঘমুক্ত নীলাভ আকাশ । অক্টোবরের রোদেলা ঝলমল দিনগুলো হলান্ডবাসীর জীবনে সুখের ফোয়ারা নিয়ে ফিরে আসে। কখনো ১৮ কখনো বা ১৯ ডিগ্রি তাপমাত্রার হিমেল হাওয়া আর রোদ্রউজ্জল আবহাওয়া। এমন দিনে আমি আবার নেদারল্যান্ডে পা দিয়েছি। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল র্কোট - আই সি সি'র একটি প্রজেক্টে কাজ করার উপলক্ষ্যে টিউলিপের দেশে ফিরে আসা।
গত এপ্রিলে লম্বা এক বরফ শীতে ডালপালাহীন গাছ আর শীতের আবরনে জড়িয়ে থাকা যে হলান্ডকে রেখে গিয়েছেলাম; অক্টেবরের এই হলান্ড সম্পূর্ণই উল্টো। মানুষগুলোর হাসি মাখা মুখ, বাচ্চাগুলো হৈ হল্লোড় করছে। যে দিকে তাকায় নানা রকম ফুল, সবুজ গাছ পালা। ফসলভরা মাঠ। ছুটির দিনগুলোতে ছেলে বুড়ো্ নেমে আসে রাস্তায়।
দুপুরে বা বিকেলে হোটেল গুলোর সামনে আলো ঝলমল খোলা আকাশের নিচে বসে খাবার খাওয়ার মজায় আলাদা। গরু, ভেড়া, ঘোড়া গুলো ইচ্ছামতো ঘাস খাচ্ছে আর যাবর কাটছে। পড়ন্ত বিকেলে শীত আসবে বলে সোনালী রঙের পাতা গুলো ঝরে পড়ে বাতাসে।
এবার আমার হলান্ড আসার কারণ আগেই বলেছি ইন্টারন্যাশনাল ক্সিমিনাল র্কোটে- আইসিসিতে কাজ করার সুযোগ। আইসিসি সর্ম্পকে আমি প্রথম জানতে পারি এ বছরের শুরুতে রেডিও নেদারল্যান্ড ট্রেনিং সেন্টার-আরএনটিসিতে সাংবাদিকতার কোর্স করার সময়।
গত ফেব্রেয়ারীতে আরএনটিসিতে ইন্টরন্যাশনাল ব্রডকাস্ট জানালিম কোর্স করার সময় আইসিসি ভিজিট করার সুযোগ হয়। তখন আইসিসিতে কাজ করার জন্য আবেদন করি। আইসিসি একটি স্বতন্ত্র আর্ন্তজাতিক সংস্থা যা জাতিসংঘের সাথে যুক্ত নয়। আইসিসি জেনোসাইড,মানবতার বিরুদ্ধে সন্ত্রাস,ওয়ার ক্রাইমের জন্য একটি স্থায়ী ট্রাইবু্নাল। আইসিসির সদস্য ১১২ টি দেশ।
বাংলাদেশ আইসিসিতে যোগ দিয়েছে গত মার্চে।
হলান্ডে আমার সবচেয়ে ভালো লাগে গ্রাম । গ্রামগুলো যেন ছবির মতো । সবকিছু সাজানো, শান্ত। গাছাগাছালী, চমৎকার সব বাড়ী, খামার, মাঠের পর মাঠ ।
ভূট্টা, শাক সবজি আর নানা রকম ফসল।
গরুর খামার, ভেড়ার আর ঘোড়ার খামার। হলান্ডের সবুজ ক্ষেত, দুরের ঐ বাড়িগুলো বার বার আমার গ্রামের মতো। চট্টগ্রামের একটি অনগ্রসর গ্রামের এক কৃষক পরিবারে আমার জন্ম। মাঠির সাথে মিলে মিশে আমার বেড়ে ওঠা।
নদীর চরে ফুবটল খেলা। গ্রীস্মে ফসল কাটা সারলে ধান ক্ষেতের নারা কেটে ক্রিকেট পীচ তৈরী করে তাতে ক্রিকেট খেলা।
নগরজীবন আমার কাছে দুর্বিষহ হয়ে ওঠে গত চারমাস ঢাকায় থাকার পর। আমার পড়ালেখা এবং কাজ করার সুবাধে, আমার গ্রামছাড়া হওয়ার পরে সবগুলো বছরই চট্টগ্রাম শহরে থেকেছি। চট্টগ্রাম শহরকে কখনোই দুর্বিষহ মনে হয়নি।
গত মার্চে হলান্ড থেকে বাংলাদেশে ফেরার পর ঢাকাতেই আমার কর্মজীবন শুরু হয়। সবসময় মনে হতো ঢাকায় চলে যেতে হবে। ঢাকা ছাড়া ক্যরিয়ার হবেনা। চট্টগ্রামের সিনিয়ল কলিগরাও বলতেন ঢাকা চলে যাও। তরুণ বয়স ।
ঢাকায় তোমাদের অনেক সম্ভাবনা। কিন্তু ঢাকায় আসার পর মনে হলো ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। এত মানুষ এত গাড়ির ঢাকা শহর ! তার উপর নানান অসংগতি,দূষণ !
আইসিসি বিশাল এক সংস্থা যেখানে কাজ করে আমেরিকান, কানাডিয়ান, ব্রিটিশ, ইউরোপিয়ান, এশিয়ান এবং আফ্রিকান নাগরিক। রোমানিয়ার এক তরুণীর সাথে পরিচয় হলো যে কিনা অক্সর্ফোড ইউনিভার্সিটি থেকে 'কনফ্লিক্ট এন্ড ক্রিমিনালিটি' বিষয়ে মার্স্টাস করে আইসিসি তে যোগ দিয়েছে। আমেরিকান,অষ্ট্রেলিয়ান,ইটালিয়ান তিন ভদ্রমহিলা আমার সুপারভাইজার যাদের তত্ত্বাবধানে আমি কাজ করি।
মাঝে মাঝে ভাবি, আল্লাহর কি রহমত কোথাকার এক অবহেলিত জনপদের কৃষক পরিবারের এই আমি একটি আর্ন্তজাতিক সংস্থায় উন্নত বিশ্বের উচ্চ শিক্ষিত মেধাবী মানুষগুলোর সাথে কাজ করছি। লেখাপড়া না করলে আমি তো কৃষকই হতাম! বড় কোন কৃষক নয়। অন্যের জমি বর্গা নিয়ে লাঙ্গল জোয়াল কাদে করে জীবনের গানি টানতাম!
* আমার তোলা ছবি থেকে কয়েকটি সংযুক্ত করলাম ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।