নিজেকে চেনার আছে অনেক বাকি...
‘কেমন আছো মেঘবালক?’মুঠোফোনের পর্দায় লেখাটা দেখে চমকে ওঠে শুভ্র। বার্তাপ্রেরক জলপরী। ‘জলপরী,জলপরী...’,বিড়বিড় করে শুভ্র। তবে কী...
একটু সময় নিয়ে প্রত্যুত্তর লিখে, ‘যেমন ছিলাম। কিন্তু তুমি...কোন জলে বাস তোমার?’
‘আমি অনলাইন জলপরী।
হা হা...আমার হাসি শুনতে পাচ্ছো মেঘ?’
‘মেঘ,মেঘ...’,আবার বিড়বিড় করে শুভ্র। কিন্তু কীভাবে সম্ভব!পাঁচ বছর...হিসেব মিলে না শুভ্রর।
‘কী হলো?চুপ যে?হাসি শুনে ভয় পেলে?পিলে চমকে দিই নি তো!হা হা...’,আবার বার্তা ভেসে আসে মুঠোফোনে।
শুভ্র হারিয়ে যায় অতীতে। পাঁচ বছর আগে...
চারুকলায় ভর্তি হয়েছে বেশিদিন হয়নি।
৬ মাস হবে হয়তো। শুরু থেকেই ভাল লাগত মেয়েটিকে। নামটাও সুন্দর-সীমানা। স্নিগ্ধ মায়াবী চেহারা আর জলের মত টলটলে দুটি চোখ। শুভ্রর মনে হত যেন জলপরী।
ক্লাশে/ক্যাম্পাসে কখনো কথা হয়নি। প্রথম কথা হয়েছিল আঁলিয়স ফ্রঁসেজে এক চিত্রপ্রদর্শনী দেখতে গিয়ে। ঘুরতে ঘুরতে দেখা হয়ে যায় দুজনের। তারপর এটা-সেটা অনেক কথা। দুজনের চিন্তা-চেতনায় মিল দেখে অবাক হয় দুজনেই।
দিন যায়। ক্যাম্পাস-ক্যাফেটেরিয়াতে দুজনের একসাথে আনাগোনা বাড়তে থাকে। বাড়তে থাকে বকুলতলায় কাটানো বিকেলের সংখ্যা। সাথে বাড়ে ভাললাগা। কোনদিক থেকে ভালবাসা প্রকাশের আগেই সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয় সীমানা।
সহপাঠীরা মিলে দেখতে গিয়েছিল সীমানাকে। সীমানা তখন হাসপাতালের বিছানায় অচেতন,কাউকে চেনার মত অবস্থা ছিল না। ডাক্তার বলেছিলেন, ‘সিভিয়ার নিউরোলজিকাল ডেমেজ’,সম্ভব হলে দেশের বাইরে নিয়ে যেতে। সেদিনই সীমানার মা-বাবা সীমানাকে নিয়ে পাড়ি জমান ব্যাংককে-শুভ্রর সীমানা থেকে অনেক অনেক দূরে।
সীমানা হারিয়ে যায় শুভ্রর জীবন থেকে।
কিন্তু মন থেকে হারায় না। মাঝে মাঝেই মনে হতো-কোথায় আছে,কেমন আছে সীমানা!বেঁচে আছে তো জলপরী!
শুভ্রর সাথে পরিচয়ের আগে সীমানা ছিল নিঃসঙ্গ। বড়লোক মা-বাবার একমাত্র মেয়ে। বন্ধু-বান্ধব বলতে তেমন কেউ ছিল না। সবার সাথে সহজে মিশতে পারতো না।
নিজেকে গুটিয়ে রাখতো সবসময়। কেবল একমনে ছবি আঁকতো। মেঘ ছিল ভীষণ প্রিয়। মাঝে মাঝে জানালা দিয়ে তাকিয়ে মেঘদের খেলা দেখতো,কথা বলতো মেঘদের সাথে। শুভ্র যখন মেঘমালা থেকেও প্রিয় হয়ে উঠলো,তখন সে শুভ্রকেই মেঘ বলে ডাকতে শুরু করলো।
শুভ্র প্রায়ই বলত সীমানাকে, ‘তোমার ঝঙ্কার তোলা হাসি শুনলে আমার পিলে চমকে যায়। এভাবে কেউ হাসে!’অথচ সীমানার এই হাসিটাই ছিল শুভ্রর অনেক বেশি প্রিয়। কেমন দোলা দিয়ে যায় মনে। মনে হয় যেন সমস্ত দুঃখকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে আনন্দ এসে জুড়ে বসল।
সীমানা বলতো, ‘তুমি তো হাসতেই জানো না।
সব দাঁত ঠিক আছে তো!’বলেই আবার হাসতো।
শুভ্র হঠাত জোরে হেসে ওঠে। বর্তমানে ফিরে আসে। প্রত্যুত্তর লিখে-‘হা হা...আমিও কিন্তু এখন পিলে চমকানো হাসি হাসতে পারি’।
‘তাই!ঠিক আছে।
তবে জয়নুল গ্যালারীতে চলে এসো ৪:৩০ এ। তোমার হাসি শুনবো’।
বার্তা আসা মাত্রই অফলাইন হয়ে যায় জলপরী। শুভ্র ভাবতে থাকে। এও সত্যি!পাঁচ বছর পর আজ মাত্র ৩/৪ মিনিটের কথোপকথন,তাও ভার্চুয়াল অক্ষরে।
বিকেল ঠিক ৪:২০ এ শুভ্র হাজির হয়ে যায় জয়নুল গ্যালারীতে। ঢুকে অবাক হয়ে যায় শুভ্র। ‘জলপরীর একক চিত্রপ্রদর্শনী’ চলছে। বিশাল আয়োজন। এত শত ছবি... তার মধ্যে প্রায় এক কুড়ি হবে শুধু মেঘের ছবি।
নানা রঙের বিচিত্র সব মেঘ খেলা করছে ক্যানভাসে। হঠাত কাঁধে হালকা হাতের পরশে ঘুরে তাকায় শুভ্র। নীল শাড়ি,নীল চুড়ি আর হাতে অনেকগুলো সাদা গ্লাডিওলাস নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জলপরী। শুভ্র চোখ সরাতে পারে না। হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে জলপরীকে।
শুভ্র অপলক তাকিয়ে থাকে।
শুভ্রর মনে একগাদা প্রশ্ন ছুটোছুটি করতে থাকে। গুছিয়ে কথা শুরু করার আগেই জলপরী শুভ্রর হাত ধরে বলে, ‘কোন প্রশ্ন নয়। সব পরে হবে। শুধু জানো,জলপরী আজও মেঘেরই আছে।
মেঘ আজও জলপরীর আছে তো?’
শুভ্র পূর্ণচোখে তাকায় সীমানার চোখে আর হাত দিয়ে আলতো চাপ দেয় সীমানার হাতে। সীমানার বুঝতে কষ্ট হয় না।
গ্লাডিওলাসগুলো শুভ্রকে দিয়ে বলে, ‘তোমার জন্য। এবার চলো। অ..নে..ক দিন বকুলতলায় যাই না।
অনেক কথা জমে গেছে পেটে। বলতে না পারলে এবার পেট ফেটেই মারা যাবো’।
দুজনেই হাসে। ওদের ঝঙ্কার তোলা হাসি শুনে ঘুরে তাকায় আশেপাশের দর্শণার্থীরা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।