ধর্মভিত্তিক রাজনীতি নিষিদ্ধ হচ্ছে না
:: আদালতের রায়ের আলোকে দ্রুত সংবিধান পুনর্মুদ্রণের নির্দেশ
:: রাষ্ট্রধর্ম বহাল থাকবে, থাকবে বিসমিল্লাহও
:: কোনো ইসলামি দলকেই নিষিদ্ধ করা হবে না
কাগজ প্রতিবেদক : ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করবে না সরকার। ধর্মীয় রাজনীতি বহাল রেখেই দ্রুত সংবিধান পুনর্মুদ্রণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নির্দেশ দেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। আদালতের রায়ের আলোকে সংবিধান পুনর্মুদ্রণকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো বিভ্রান্তির সৃষ্টি না হয় সেজন্য ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে মতবিনিময় করতে মন্ত্রিসভার সদস্যদের নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে বৈঠক সূত্র জানায়, কোনো ইসলামি দলকেই নিষিদ্ধ করা হবে না। রাষ্ট্রধর্ম ইসলামও অক্ষত থাকবে। থাকবে বিসমিল্লাহও। মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর একাধিক মন্ত্রীর সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের আলোকে সংবিধান পুনর্মুদ্রণ হবে। তবে জনগণের আবেগ জড়িত রয়েছে এমন কোনো বিষয়ে হাত দেয়া হবে না বলে সভায় প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন।
একজন মন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, পঞ্চম সংশোধনী বাতিলের রায়ের আলোকে বর্তমানে সংবিধান পুনর্মুদ্রণ করা হবে। পরবর্তীতে সংবিধান সংশোধনে গঠিত কমিটি সংসদে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে। কমিটির প্রতিবেদনের ওপর সংসদে আলোচনা ও সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ওই সিদ্ধান্তের আলোকে পরে আবারো সংবিধান ছাপানো হবে।
সূত্র জানায়, সভা শেষে অনানুষ্ঠানিক আলোচনার সময় স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সংবিধান পুনর্মুদ্রণের বিষয়টি তোলেন।
হাইকোর্টের রায়ে বর্তমান সংবিধানের কিছু কিছু বিষয় অবৈধ হয়ে গেছে। পূর্ণাঙ্গ সংবিধান ছাড়া এ অবস্থায় দেশ চলতে পারে না বলে আশরাফ মন্তব্য করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী দ্রুত সংবিধান পুনর্মুদ্রণের জন্য আইন মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধান সংশোধন নিয়ে জামাতসহ ধর্মভিত্তিক দলগুলো জনগণকে যাতে বিভ্রান্ত করতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। বিসমিল্লাহ, ধর্মীয় রাজনীতি ও ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলসহ যেসব বিষয়ে মানুষের আবেগ-অনুভূতি জড়িত সংবিধান পুনর্মুদ্রণের সময় সেগুলো বিচার-বিশ্লেষণ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংবিধান সব সময়ই পুনর্মুদ্রণ হয়। অতীতেও হয়েছে, আবার যদি প্রয়োজন হয় পুনর্মুদ্রণ হবে। পুনর্মুদ্রণের পর সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ সংসদীয় কমিটির প্রস্তাবের আলোকে তা সংসদে পাস হবে। এ কমিটিও মানুষের আবেগের বিষয়গুলো বিবেচনায় রেখেই সংশোধনীর প্রস্তাব করবে। উল্লেখ্য, সংবিধান সংশোধন কমিটি সংবিধান পুনর্মুদ্রণের প্রস্তাব দিয়েছে।
এছাড়া মন্ত্রিসভার বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোথাও কোথাও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চলছে। এদিকে কড়া সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
মন্ত্রিসভার ৫৫৪ সিদ্ধান্তের মধ্যে বাস্তবায়িত ৪৮৮ এছাড়াও মন্ত্রিসভার বৈঠকে সরকারের সর্বশেষ তিন মাস এবং পুরো ২২ মাস মেয়াদের কর্মতৎপরতা পর্যালোচনা এবং আগামী ২০১১ সালের ছুটির তালিকা অনুমোদন করা হয়। এ ব্যাপারে তথ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ জানান, বর্তমান সরকারের সর্বশেষ তিন মাসে মন্ত্রিসভার ১০টি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে ৫৬টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এর মধ্যে ৩০টি ইতিমধ্যেই বাস্তবায়ন হয়েছে। বাকি ২০টি বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। গত ২২ মাসে মন্ত্রিসভা ৮৪টি সভা করে ৫৫৪টি সিদ্ধান্ত নেয়। এর মধ্যে ৪৮৮টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়েছে।
বাকি ৬৬টি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ সময়ে ১২৬টি আইন প্রণয়ন করা হয়েছে বলেও প্রেস সচিব জানান। এজন্য মন্ত্রী ও সচিবদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী এবং ভবিষ্যতে আরো দ্রুতগতিতে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পরামর্শ দেন। আবুল কালাম আজাদ বলেন, বিগত জোট সরকারের সময় প্রথম ২২ মাসে মন্ত্রিসভার ৭৭টি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে ২৯২টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
একই সময়ে তারা মাত্র ৬৯টি আইন প্রণয়ন করে। প্রেস সচিব আরো জানান, নতুন পঞ্জিকা বর্ষ ২০১১-এর জন্য ১৪ দিনের সরকারি ছুটি, ৮ দিনের নির্বাহী আদেশের ছুটি এবং ৩ দিনের ঐচ্ছিক ছুটির তালিকা অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। এ তালিকা চলতি ২০১০ সালের মতোই রয়েছে। ১৪ দিনের সরকারি ছুটির মধ্যে তিনটি সাপ্তাহিক ছুটি পড়েছে। এর মধ্যে স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস শনিবার এবং জুমাতুল বিদা ও বিজয় দিবস শুক্রবার পড়েছে।
ভোরের কাগজ ;; ১৯ অক্টোবর ২০১০
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।