আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেনমোহর স্ত্রীর বিশেষ অধিকার

Mahmood Khan

মুসলিম আইন অনুযায়ী দেনমোহর বা মোহরানা হলো বিয়ের একটি অন্যতম শর্ত। এ শর্ত হিসেবে অর্থ বা সম্পত্তি স্ত্রী স্বামীর কাছ থেকে পাওয়ার অধিকারী। এটি স্ত্রীর এক প্রকার বিশেষ অধিকার এবং স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণস্বরূপ। দেনমোহর ২ ধরনের হয়। তাৎক্ষণিক এবং বিলম্বিত।

তাৎক্ষণিক দেনমোহর চাওয়া মাত্র পরিশোধ করতে হয়। বিলম্বিত দেনমোহর বিবাহ পরবর্তী যে কোনো সময়ে পরিশোধ করলে চলে। তবে মৃত্যু বা বিবাহ বিচ্ছেদের পর এ দেনমোহর অবশ্যই পরিশোধযোগ্য। প্রচলিত ধারণা রয়েছে, তালাকের কারণে দেনমোহর দিতে হয়, কিন্তু এটি একটি ভুল ধারণা। দেনমোহর বিয়ের শর্ত।

তালাকের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই। বিবাহিত অবস্থায় দেনমোহর পরিশোধ করা না হলে বিবাহ বিচ্ছেদের পর দেনমোহর পরিশোধের দাবি ওঠে। দেনমোহর স্বামীর ওপর আইনগত আরোপিত একটি দায়। এটি স্ত্রীর অধিকার সংরক্ষণের জন্য এবং স্ত্রীর অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য দেয়া হয়। দেনমোহরের কোনো সুনির্দিষ্ট পরিমাণ নেই।

দেনমোহর বিয়ের সময় নির্ধারণ করা হয়। দেনমোহর বিয়ের পরও নির্ধারণ করা যায়। উপযুক্ত দেনমোহর নির্ধারিত হয় স্ত্রীর পারিবারিক অবস্থান, বংশ মর্যাদা, আর্থিক অবস্থা, ব্যক্তিগত যোগ্যতা বা স্ত্রীর পরিবারের অন্য নারীদের ( যেমন- ফুফু, বোন) দেনমোহরের পরিমাণ দেখে। দেনমোহর একবার নির্ধারিত হয়ে গেলে তার পরিমাণ কমানো যাবে না। তবে বিয়ের পরবর্তী সময়ে স্বামী ইচ্ছা করলে বাড়াতে পারে।

দেনমোহর বিয়ের আগে, বিয়ের সময় বা বিয়ের পরও নির্ধারণ করা যায়। দেনমোহর ছাড়া বিয়ে হলে বিয়েটি বাতিল হবে না। তবে এ ক্ষেত্রে বিয়ের পর উপযুক্ত দেনমোহর দিতে হবে। যদি বিয়ের সময় দেনমোহর নির্ধারিত না হয়, এমনকি স্ত্রী কোনো দেনমোহর দাবি করবে না, এমন শর্তেও যদি বিয়ে সম্পাদিত হয়, তবুও স্ত্রীকে উপযুক্ত দেনমোহর দিতে হবে। অর্থাৎ কোনো শর্তই এ ক্ষেত্রে আইনে গ্রাহ্য হবে না।

দেনমোহর দিতেই হবে। তাৎক্ষণিক দেনমোহর চাওয়ামাত্র পরিশোধ করতে হয়। কাজেই তালাক বা স্বামীর মৃত্যুর আগেই স্ত্রী দেনমোহর দাবি করতে পারে এবং স্বামী তখন তাৎক্ষণিক দেনমোহর পরিশোধ করতে বাধ্য। যেহেতু দেনমোহর স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণ, তাই যে কোনো সময় স্ত্রী তা দাবি করতে পারে। যদি কোনো স্ত্রী স্বামীর কাছে তাৎক্ষণিক দেনমোহর চেয়ে না পায়, তবে সেই স্ত্রী স্বামীর সঙ্গে বসবাস করতে ও দাম্পত্য মিলনে অস্বীকৃতি জানাতে পারে।

এমনকি সে পৃথক-আলাদা বসবাস করতে পারে এবং এ সময় স্বামী স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে বাধ্য থাকবে। প্রায়ই এমন ঘটনা দেখা যায় যে, স্ত্রী তার প্রাপ্য দেনমোহর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেশির ভাগ বঞ্চিত স্ত্রী অজ্ঞানতাবশত অথবা জানা সত্ত্বেও দেনমোহর আদায়ে উৎসাহী হয় না। কিন্তু স্বামী দেনমোহর দিতে অস্বীকার করলে স্ত্রী তা আদায়ের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হতে পারে। তবে ২ ধরনের দেনমোহরের ক্ষেত্রে আদালতে আবেদন করার সময়সীমা ২ রকম।

যেমন- তাৎক্ষণিক দেনমোহরের যে মুহূর্তে স্ত্রী দেনমোহর দাবি করবে এবং স্বামী তা দিতে অস্বীকার করবে, তখন থেকে ৩ বছরের মধ্যে পারিবারিক আদালতে মামলা করতে হবে। আর বিলম্বিত দেনমোহরের ক্ষেত্রে যেহেতু এটা পরিশোধের কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়া নেই, সেহেতু স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে তালাক বা স্বামীর মৃত্যু হলে তার ৩ বছরের মোহরানার জন্য মামলা করতে হয়। তালাকের পর স্ত্রীকে পরিশোধযোগ্য দেনমোহর অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে এবং স্ত্রীকে ভরণপোষণ দিতে হবে। দেনমোহরের সঙ্গে ভরণপোষণের কোনো সম্পর্ক নেই। বিয়ের পর স্ত্রীর ভরণপোষণের যাবতীয় খরচ কোনোভাবেই দেনমোহরের অংশ বলে ধরে নেয়া যাবে না।

তালাকের পর আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ ৯০ দিন আইনানুযায়ী তালাক উচ্চারণের পর তালাক কার্যকর হওয়ার আগ পর্যন্ত যে ভরণপোষণ দিতে হয় তা দেনমোহরের অংশ হিসেবে পরিশোধ করা হচ্ছে বলে ধরা যাবে না। স্বামী স্ত্রীকে যে উপহার দেবে তা অবশ্যই দেনমোহর নয়। বিয়ের পর স্বামী স্ত্রীকে অনেক কিছুই দিতে পারে। স্বামী যদি দেনমোহর হিসেবে স্ত্রীকে কিছু দেয়, তবেই তা দেনমোহর বলে বিবেচিত হবে। জমি হস্তান্তরের দলিলে ‘দেনমোহর বাবদ’ কথাটি লেখা না থাকলে এরূপ জমি দেনমোহর হিসেবে ধরা হবে না।

স্বামীর মৃত্যুর পর দেনমোহর স্ত্রীর কাছে স্বামীর ঋণ হিসেবে ধরা হবে। অন্যান্য ঋণের মতোই এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে, দাফন-কাফনের খরচ করার পর অবশিষ্ট সম্পত্তি থেকে দেনমোহর ও অন্যান্য ঋণ পরিশোধ না করলে স্ত্রী স্বামীর উত্তরাধিকারীদের বিরুদ্ধে দেনমোহরের জন্য মামলা করতে পারবে। স্বামীর আগে স্ত্রীর মৃত্যু হলেও দেনমোহর দিতে হবে। স্ত্রীর উত্তরাধিকারীরা এ দেনমোহর পাওয়ার অধিকারী। তারা দেনমোহর পাওয়ার জন্য মামলাও করতে পারে।

দেনমোহর পরিশোধিত না হলে স্ত্রী মৃত স্বামীর সম্পত্তি বৈধভাবে দখলে রাখতে পারে। স্বামীর জীবদ্দশায় স্ত্রী তার সম্পত্তি দখলে রাখলে এবং স্বামীর মৃত্যুর পর দখলভোগ করতে থাকলে তার দখলটি আইনানুগ এবং বৈধ হবে। সে দখলকৃত সম্পত্তির খাজনা, লাভ বা আয় থেকে দেনমোহরের টাকা আদায় করতে পারবে। যদি দখলভোগী বিধবাকে অবৈধভাবে দখলভোগের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়, তবে সে দখল উদ্ধারের জন্য মামলা করতে পারবে। যদি স্ত্রী দখল নেয়ার আগে অন্য উত্তরাধিকারীরা দখলের দাবি করে বা দখল নেয়, তবে সে তাদের বঞ্চিত করে একা দখল দাবি করতে পারবে না।

অন্য উত্তরাধিকারীদের হস্তক্ষেপের আগে যতটুকু তার দখলে ছিল, সে ততটুকু রাখতে পারবে। দেনমোহর সংক্রান্ত মামলাগুলো স্থানীয় সহকারী জজের আদালতে দায়ের করতে হয়, যা ১৯৮৫ সাল থেকে পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ অনুযায়ী পারিবারিক আদালত হিসেবে কাজ করছে। স্ত্রী যেখানে বসবাস করে, তিনি সেই এলাকার পারিবারিক আদালতে দেনমোহর সংক্রান্ত মামলা দায়ের করতে পারেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।