আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেনমোহর এক কোটি ২০ লাখ, অতিথি ১৫ হাজার



"বর্তমানে বাংলাদেশে শীতকাল চলছে। উত্তরাঞ্চলে প্রচন্ড শীত ও কুয়াশা। সেখানে মানুষ কত কস্ট করতেছে। আর তারা কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিবাহের আয়োজন করেছে। তাদের কি একটু কস্ট লাগেনা।

গরীব দুখীদের সাহায্য করতে। আসুন আমরা বিলাসীতা না করে প্রয়োজনরে চেয়ে বেশী খরচ না করি। মিতব্যয়ী হওয়ার চেষ্টা করি"। বিয়ের দেনমোহর এক কোটি ২০ লাখ ১ টাকা। কনে পেয়েছেন হীরার আংটি ও ১০০ ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার।

বর আসেন হেলিকপ্টারে চড়ে। বিয়েতে মন্ত্রী ও সাংসদসহ আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন ১৫ হাজারের ওপরে। পুরো অনুষ্ঠান স্থানীয়ভাবে স্যাটেলাইট কেব্ল টেলিভিশনের মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। এটি কোনো গল্প নয়। গতকাল রোববার এ রকমই একটি জাঁকজমকপূর্ণ ও ব্যয়বহুল বিয়ে হয়ে গেল হবিগঞ্জের স্টেডিয়ামে।

কনে আরিফা আক্তার হবিগঞ্জ সদর আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু জাহিরের মেয়ে। বর মহিবুর খন্দকার লন্ডন-প্রবাসী ব্যবসায়ী। বাড়ি জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার বনগাঁও গ্রামে। সিলেটেও তাঁর বাড়ি আছে। আরিফা আক্তারের বিয়ের আয়োজন নিয়ে গত এক সপ্তাহ হবিগঞ্জে উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল।

বিয়ের অনুষ্ঠানস্থল জালাল স্টেডিয়ামকে সাজানো হয় নতুন আঙ্গিকে। রাজধানী ডেকোরেটরের দেড় শতাধিক শ্রমিক এক সপ্তাহেরও বেশি সময় নিয়ে অনুষ্ঠানস্থল সাজান। অত্যাধুনিক এ সাজসজ্জা সবার নজর কাড়ে। ভিভিআইপি, ভিআইপি, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি ও সাধারণ অতিথিদের বসা ও খাওয়ার জন্য পৃথক স্থান নির্ধারণ করা হয়। বিয়ের নিমন্ত্রণপত্রে বলা হয়, ‘উপহার নয়, উপস্থিতি ও দোয়াই কাম্য।

’ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ আব্দুস শহীদ, বেশ কয়েকজন সাংসদ ও সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অতিথি হিসেবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। বিয়ে উপলক্ষে গতকাল জালাল স্টেডিয়ামে কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। জেলা সদরের ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাসহ বেশ কিছু পুলিশ সদস্যকে বেশ তৎপর দেখা যায়। হবিগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক বলেন, আয়োজন বড় হওয়ায় পুলিশের ব্যস্ততা বেড়েছে। গতকাল দুপুরে জালাল স্টেডিয়ামে গিয়ে দেখা যায়, স্টেডিয়ামজুড়ে বিশাল প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে।

প্যান্ডেল সাজানো হয়েছে জাঁকজমকপূর্ণভাবে। ভেতরে প্রবেশ করে মনে হয়নি, এটি কোনো স্টেডিয়াম বা মাঠ। মাঠের চার কোনায় রান্নায় ব্যস্ত চারজন বাবুর্চি। বাবুর্চি বাবুল মিয়া বলেন, সবার জন্য একই রকম খাবার রান্না হয়েছে। প্রায় ১০০ মণ খাসির মাংস, প্রায় চার হাজার দেশি মুরগি জবাই করা হয়।

খাসির মাংস, মুরগির রোস্ট, টিকিয়া ও মাছসহ পাঁচ-সাত পদের খাবার পরিবেশন করা হয়। রাজধানী ডেকোরেটরের শ্রমিক সাইফুল জানান, একসঙ্গে দেড় হাজার লোকের বসার ব্যবস্থা করে প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। এর ভেতরে বর-কনের জন্য অত্যাধুনিক সাজের মঞ্চ তৈরি করতেই এক সপ্তাহের বেশি লেগেছে। অনুষ্ঠানস্থলে ছিলেন হাজারো স্বেচ্ছাসেবক। দুটি পিকআপে করে সার্বক্ষণিক বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা হয়।

সিলেট থেকে হেলিকপ্টারযোগে বর আসেন বেলা একটা ২০ মিনিটে। বরবাহী হেলিকপ্টার অবতরণ করে শহরের ঈদগাহ ময়দানে। সেখান থেকে বর একটি কারযোগে বিয়ের মঞ্চে পৌঁছান। তবে তিনি সিলেটে ফেরেন সড়কপথে। বর আসার পর পরই অনুষ্ঠানস্থলে অতিথিদের উপস্থিতি বেড়ে যায়।

সাংসদ আবু জাহির ব্যস্ত ছিলেন অতিথিদের স্বাগত জানাতে। নিকাহ রেজিস্ট্রার মাওলানা নজমুল হাসান এক কোটি ২০ লাখ ১ টাকা দেনমোহরে বিয়ের নিবন্ধন সম্পন্ন করেন। নজমুল জানান, বর পক্ষ হীরার আংটি ও প্রায় ১০০ ভরি স্বর্ণ উপহার দেয় কনেকে। বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত জেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘এ বিয়ে হবিগঞ্জের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের একত্র করার সুযোগ করে দিয়েছে। তাই আগ্রহ নিয়েই এ বিয়েতে এসেছি।

’ অতিথি গৃহবধূ আয়শা খানম বলেন, ‘এত বড় বিয়ের আয়োজন হবিগঞ্জে এই প্রথম। তাই এতে আসার আগ্রহ ছিল একটু বেশি। ’ সরকারি বিধি অনুযায়ী, ১০০-এর বেশি অতিথি আপ্যায়নের জন্য সরকারি কোষাগারে অর্থ জমা দিতে হয় আয়োজককে। এ বিষয়ে হবিগঞ্জে সোনালী ব্যাংকের প্রধান শাখায় যোগাযোগ করা হলে ব্যবস্থাপক দীপ্তিশ কুমার দাশ প্রথম আলোকে জানান, সাংসদ বা তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারি কোষাগারে কোনো অর্থ গতকাল পর্যন্ত জমা হয়নি। এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসনের কোনো কর্মকর্তা মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তথ্য সূত্র আপনাদের সুচিন্তিত মতামত জানাবেন। ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।