একট হাসি, অলস দুপুর, এক ফোঁটায় জলের পুকুর।
নিউমার্কেটের অলিগলিতে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে তুহিন সময় দেখে- আধ ঘন্টা, তিরিশ মিনিট, তিন হাজার ছয়শ সেকেন্ড।
দুই বছর সময় কিভাবে পার হয়েছে সে জানে না- কিন্তু এই তিরিশ মিনিট কিভাবে পার করবে সে চিন্তায় অস্থির হয়ে ওঠে। কিন্তু তার থেকেও বড় চিন্তা তার সঙ্গীর কাছ থেকে পিছু ছাড়াতে হবে। থিওরিটিক্যালি এই কাজটা বেশি কঠিন হওয়ার কথা, কারণ এই মুহূর্তে তাকে একা ছাড়ার কথা না।
তুহিন আবারও ঘড়ি দেখে। দুই সেকেন্ড পরে এক মিনিট হবে। কি আজিব সময় যখন পার করা দরকার, তখন সময় আস্তে যায় সে জানে- অপেক্ষার অভিজ্ঞতা তার কম নেই, কিন্তু আজকে কি আরো বেশি ধীরে চলছে নাকি ঘড়ি? কি করে সম্ভব যে মাত্র এক মিনিট হয়েছে?
তুহিন হাতের কাজ গুলো শেষ করা শুরু করে, যত তাড়াতাড়ি শেষ হবে তত তাড়াতাড়ি সে ছাড়া পাবে। দোকানের মানুষগুলোকে কি কেউ স্লোমোতে সেট করে দিয়েছে নাকি ওকে বিরক্ত করার জন্য সবাই এমন ধীরে চলা শুরু করেছে?
সন্ধ্যা তখন অস্থির হয়ে সিএনজি খুঁজছে- প্রয়োজনের সময় কই যে হাওয়া হয়ে যা য়? মোবাইলের ডিজিটাল ঘড়ি বলেই মেনে নিচ্ছে কিন্তু তাও তার বিশ্বাস হচ্ছে না এত তাড়াতাড়ি সময় যাচ্ছে, কেন যাচ্ছে? আধ ঘন্টায় নিঊমার্কেট কি করে পৌছানো সম্ভব সে বুঝেই পাচ্ছেনা। কিন্তু আজ যে তাকে আধ ঘন্টার মাঝেই পৌঁছুতে হবে।
আজ যে দেরি হওয়া চলবে না।
একটা সিএনজি পেয়ে উঠে পড়ে সন্ধ্যা, এখন ভাড়া নিয়ে বাড়াবাড়ি করার সময় নাই। মোবাইলে আরেকবার সময় দেখে নেয়।
তুহিন এখন একা। বহুত ঝাড়িপট্টি দিয়ে পার পেতে হয়েছে ওকে এই যাত্রা, তাও যে পেরেছে এতেই সে খুশি।
নিজে নিজেই অবাক হয়েছে পেরেছে বলে- একটু যে মন খারাপ হয়নি এমনও না, কিন্তু নিজের কৃতিত্বে নিজেই মুগ্ধ হয়ে যায় সে। ঘড়ি দেখে, এখনও বিশ মিনিট। একা একা খানিকক্ষণ হেটে বেড়ায় সে এগলিওগলি। দশ বছর পরে নিজের অতি পরিচিত জায়গায় ঘুরে বেড়াতে বেশ লাগছে ওর। কিন্তু কোনও কিছুই ভিতরের চাপা অস্থিরতাটা কমাতে পারছে না।
চার বছরের বন্ধুত্ব তাদের। নানান গল্প নানান ঘটনার মাঝে একসময় সে বন্ধুত্ব তার সংজ্ঞা বদল করে। তারও প্রায় দু'বছর পার হয়ে গেছে। খুব কাছের, খুব নিজের, খুব বেশি চেনা একটা মানুষের সাথে প্রথম দেখা করার মত সৃষ্টিছাড়া বিষয়টার অসামান্যতা তার কাছে পরিষ্কার হতে থাকে। নিজের কাছেই অবাক লাগতে থাকে তার।
আরো দু'টা দোকান পার করে তুহিন খেয়াল করলো মোবাইলটা কেমন করে যেন হাতের মুঠোয় চলে এসেছে- আর সন্ধ্যার নাম্বারটা কেমন করে যেন নিজে নিজেই ডায়াল হয়ে গেছে। ফোনটা কানে লাগিয়ে তুহিন অপেক্ষা করতে থাকে।
সময় আর ঢাকার ভীড়ের সাথে পাল্লা দিতে দিতে বার বার মোবাইলের ঘড়ি দেখতে থাকে সন্ধ্যা- কোনভাবে কি সম্ভব তার পক্ষে সময়মত নিউমার্কেটে পৌঁছানো? যেতে পারবে কি সে?
তুহিনের ছবি ভেসে ওঠে মোবাইলের স্ক্রীনে- হাসছে মহা দুষ্টুমি করে, একটা নিশ্বাস ফেলে কলটা নেয় সন্ধ্যা। রাগ হতে থাকে তার তুহিনের ওপরে- না হয় ছিলি না তুই, তাই বলে কি ঢাকার জ্যামের কথা কি তুই জানিস না?
হেসে ফেলে তুহিন- আস্তে ধীরে আয় না, কি সমস্যা?
আরো রেগে যায় সন্ধ্যা- কোনও সমস্যা না। তুই আমাকে আরেকটু আগে বলতে পারলি না? আধ ঘন্টায় কি সম্ভব এ শহরে কোথাও যাওয়া?
তুহিন আবারো হাসে, নিজের ভিতরের অস্থিরতার পুরোটুক সে শুনতে পায় সন্ধ্যার গলায়।
সন্ধ্যা রেগে বলে- হাসবি না।
তুহিন বলে- বেশি দেরি হবে?
অস্থির হয়ে সন্ধ্যা বলে- জানি না। তুই কি করিস?
- কিছুই না। ঘুরে বেড়াই।
- নিউমার্কেটে কই ঘুরিস?
- এইতো, অলিগলি তে।
একথা সেকথায় সময়টা পার করে দেয় দু'জনে।
তুহিন নিউমার্কেটের ভিতরের গলিতে আর সন্ধ্যা ঢাকার গলিতে।
নিলক্ষেত পার করে এক নম্বর গেটের কাছে এসে নামে সিএনজি থেকে- কোনও রকমে ভাড়াটা মিটিয়ে গেটের দিকে এগিয়ে যায় সে। গেট পেরুলেই দেখতে পাবে তুহিনকে।
তুহিন তখন ভিতরের গলি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে গেটের কাছে- আসে পাশে সব কিছু তখন তার কাছে ঝাপ্সা হয়ে ওঠে।
সামনে ডানে ঘুরলেই সে গেটের কাছে পৌঁছে যাবে- পৌঁছে যাবে সন্ধ্যার কাছে।
ফটো লিংক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।