সকালের মিষ্টি রোদ পেরিয়ে আমি এখন মধ্যগগনে,
নারী অপরাধীরা এখন আর কেবল সহযোগীর ভূমিকায় নেই। কেউ কেউ অপরাধ চক্রের নেতৃত্বও দিচ্ছে। অনেকেই গ্রেপ্তার হচ্ছে বার বার। কিন্তু দুর্বল আইনের কারণে ছাড়া পেয়ে যায়। ছাড়া পেয়ে আবারও ফিরে যায় অপরাধের অন্ধকার এ জগতে।
পাকাপোক্ত হওয়ার চেষ্টা করে। নারী অপরাধীর সংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে এরই মাঝে সংশ্লিষ্টরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
নগদ সাড়ে ৩ লক্ষাধিক টাকা এবং দেশী-বিদেশী মুদ্রা তৈরির সরঞ্জামাদিসহ র্যার ২-এর হাতে গ্রেপ্তার হয় তাছলিমাসহ ৩ জন। তাদের বিরুদ্ধে জাল টাকা তৈরির অভিযোগ। ১২ই অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে মেজর আরিফের নেতৃত্বে একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আদাবর থানার ৫ নম্বর রোডের ৮৩২ নম্বর বাড়ি থেকে তাদের গ্রেপ্তার করে।
জিজ্ঞাসাবাদে তাসলিমা জানায়, টাকা তৈরির কারখানা আমার স্বামী হুমায়ন কবির খানের। আমি স্বামীকে সহযোগিতা করি। কিছুদিন আগে হযরত শাহজালাল (র.) বিমানবন্দর থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাসহ গ্রেপ্তার করা হয় বিমানের কেবিন ক্রু তুতুলকে। ইয়াবা ব্যবসায়ী শিমুকে ১৪০ পিস ইয়াবাসহ গত ১০ই অক্টোবর সূত্রাপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিন বোন সাথী, সুলতানা এবং সিনথিয়ার মূল পেশা চুরি।
চুরির টাকায় তারা ইব্রাহিমপুর, কাফরুল এবং কচুক্ষেতে ৩টি বিউটি পার্লার দিয়েছে। বগুড়ার কাহালো উপজেলার কৃষ্ণপাড়া গ্রামের মৃত আবদুল হামিদের মেয়ে তারা। গত ১লা সেপ্টেম্বর মিরপুর স্বাধীন বাংলা সুপার মার্কেট থেকে সহযোগী তানজিনাসহ সিনথিয়াকে ৪০ হাজার টাকার শাড়ি ও থ্রিপিসসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে ১৩ই আগস্ট মেট্রো শপিংমলের সামনে থেকে ৩ বোনকেই চুরির মালামালসহ গ্রেপ্তার করা হয়। কয়েক দিন কারাভোগের পর তারা আবার ছাড়া পেয়ে যায়।
সখিনার নামে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৫টি মামলা রয়েছে। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের শীর্ষ ২০ মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায় তার নাম ২ নম্বরে। ১৯৯৫ সাল থেকে মাদক ব্যবসায়ে সখিনা। সে মূলত হেরোইন বিক্রি করে। গুলবাহারেরও মূল ব্যবসা হেরোইন।
১৯৯৫ সালে মোহাম্মদপুর টাউন হলে ঝাড়ুদারের কাজের পাশাপাশি সে এ ব্যবসা শুরু করে। এখন সে কোটি কোটি টাকার মালিক। উত্তরখানে তার রয়েছে ১০ কাঠা জমির ওপর ১টি বাড়ি। ব্যবসার শুরুর দিকে সে টিনের চালের ওপর ঘুমাতো। এ কারণে তাকে ধরা কষ্টকর হতো।
পরে সে ৭-৮ বার গ্রেপ্তার হয়েছে। কোন বারই ১ মাসের বেশি জেল খাটেনি। সর্বশেষ ৮ মাস আগে উত্তরখানের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে। ১ সপ্তাহ পরই জামিন পায়। মামলা চলমান থাকলেও থেমে নেই তার হেরোইন ব্যবসা।
চলতি বছরের ২৯শে জানুয়ারি সাড়ে ৬শ’ পিস নেশা জাতীয় ইনজেকশনসহ সূত্রাপুর থেকে গ্রেপ্তার হয়েছে আবেদা এবং রূপজান। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, আমাদের গডফাদার রানী। ২০০৯ সালের ৩১শে মে রানীকে গ্রেপ্তার করা হয়। রানীর নামে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের ৪টি মামলা রয়েছে। ২০০৯ সালের ১৯শে মে ১৪কেজি গাঁজাসহ গ্রেপ্তার করা হয় হোসনে-আরাকে।
ফেনসিডিল ব্যবসায়ী সাজেদা আক্তারকে সূত্রাপুর থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ২০০৯ সালের ১১ই মে। গত ১১ই জুন হেরোইন এবং পুরিয়াসহ গ্রেপ্তার করা হয় সুরাইয়া বেগমকে। চলতি বছরের ৯ই জুন ১০০পিস ইয়াবাসহ গ্রেপ্তার হয় জেসমিন। নেশা জাতীয় ইনজেকশনসহ ৩০শে মে গ্রেপ্তার রোজিনা ও রানী। ১৬ই জুলাই ১৮০পিস ইয়াবাসহ সেগুনবাগিচা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় রুমানা আক্তার তৃণাকে।
ওই দিনই শাহবাগ থানায় মামলা হয়। মামলা নম্বর ২৬। ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে আনা মাদকসহ ৭ই আগস্ট কাপ্তান বাজার থেকে গ্রেপ্তার হয় হালিমা ও রেহানা। ওই দিনই সূত্রাপুর থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। মামলা নম্বর ১৫।
রেহানার নামে এর আগেরও বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। কাপ্তান বাজার থেকে ১কেজি গাঁজাসহ ৩০শে জুলাই গ্রেপ্তার করা হয় নাজমা বেগমকে। জিজ্ঞাসাবাদে নাজমা জানায়, আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে গাঁজা এনে ঢাকায় বিক্রি করি। গত বছরের ১৩ই নভেম্বর শাহজাহানপুরের ১টি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে বিদেশী মদসহ শিউলি এবং তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করা হয়। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক হেলাল উদ্দিন এবং মামুনুর রহমান ক্রেতা সেজে তাদের গ্রেপ্তার করেন।
ওই বছরের ৮ই নভেম্বর গুলশান নিকেতনের ১নম্বর রোডের ৩ নম্বর প্লটের বি ব্লকের ২০৩ নম্বর ফ্ল্যাটে অভিযান চালিয়ে গ্রেপ্তার করা হয় মাদক ব্যবসায়ী উর্মি, লাবলি এবং তানিয়াসহ ১০ জনকে। এ বিষয়ে গুলশান থানায় মামলা করা হয়। একই বছর ১৭ই অক্টোবর বিমানবন্দর রেল স্টেশন থেকে ৫কেজি গাঁজাসহ রিনা বেগম (২০) এবং তার ২ সহযোগীকে আটক করা হয়। মামলা করা হয় জিআরপি থানায়। জিজ্ঞাসাবাদে রিনা পুলিশকে জানায়- গাঁজার চালানটি আনা হয় আখাউড়া থেকে।
২০০৯ সালের ৪ঠা নভেম্বর ধানমন্ডির সোবহানবাগ এলাকা থেকে ৫শ’ বোতল ফেনসিডিলসহ মাদক ব্যবসায়ী আজরতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ৯ই নভেম্বর গুলশান নিকেতনের বি ব্লকের ৩ নম্বর বাসা থেকে (রঙ্গমহল) নারী ব্যবসার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় উরসি (২১), সোনিয়া (২০) এবং লাভলি (২৮) সহ ১০ তরুণ-তরুণীকে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, আমি বদরুন্নেছা কলেজের ছাত্রী। উত্তরার শেখ হেলাল আমাকে মডেল বানানোর আশ্বাস দিয়ে ধর্ষণ করেছে। পরে এ পেশায় আসতে প্রলোভন দেখায়।
আমি সাড়া দেই। চলতি বছরের ১০ই মার্চ ২০৩/২ শান্তিনগরের বাসায় অভিযান চালিয়ে ফেনসিডিল, নেশা জাতীয় ইনজেকশন এবং ইয়াবা টেবলেটসহ গ্রেপ্তার করা হয় মাদক ব্যবসায়ী রোজিনা আক্তার নিশাকে। ২৬শে ফেব্রুয়ারি মিষ্টি কুমড়ার মধ্যে ২কেজি গাঁজাসহ ধরা পড়ে কুলসুম বেগম। তার শরীর থেকে উদ্ধার করা হয় ৫০ বোতল ফেনসিডিল। ১লা জুলাই হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল গেটের সামনে থেকে দুলালী বেগম (২৮) এবং রোজিনা বেগম (২৫)সহ ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের শরীর থেকে ৭০০ লুপজেসিক ইনজেকশন উদ্ধার করা হয়। তাদের বাড়ি জয়পুরহাটে। নিজ জেলার সীমান্ত থেকে নেশা জাতীয় ইনজেকশন তারা দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় বিক্রি করে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়। শিশু অপহরণ বিবি কুলসুমের মূল টার্গেট। রাজধানীর মিরপুরে তার রয়েছে সিন্ডিকেট।
তবে অন্য এলাকাতেও সুযোগ বুঝে অপহরণে নেমে যায়। ২০০৯ সালের ২৭শে জুলাই মিজানুর রহমান নামে এক যুবক রাজধানীর মগবাজার বাসা থেকে নেমে সিএনজি খুঁজছিল। ঠিক সে সময় বিবি কুলসুম নামে মহিলা অপহরণকারী তাকে অপহরণ করে ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। পরে ডিবি পুলিশ অপহরণকারী চক্রের ৩ সদস্য- নাজমা, ঝরনা ও বিবি কুলসুমকে গ্রেপ্তার করে। অপহৃত মিজানকেও উদ্ধার করে।
ওই সময় ঝরনা ও বিবি কুলসুম ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। পুলিশ আদালতের মাধ্যমে তাদের কারাগারে পাঠায়। আর নাজমা বেগমকে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদে নাজমা বলেছে, আমরা মিরপুর এলাকায় প্রতারণা ও অপহরণের কাজ করি। এ পর্যন্ত ৪/৫টি ঘটনা ঘটিয়েছি।
মিষ্টি কথায় প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে ছেলেদের আকৃষ্ট করা ইয়াসমিনের কাজ। এরপর দূরে কোথাও বেড়াতে নিয়ে গিয়ে অপহরণ ফাঁদ। বোন জামাইসহ ১০-১২ জনের সিন্ডিকেট রয়েছে তার। রাজধানীর পুরাতন ঢাকার লোহা ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেন শাহিনকে এভাবে ফাঁদে ফেলে ইয়াসমিন ও তার ৯ সদস্য আরিচা নদীর ফেরিঘাটে নিয়ে যায়। পরে শাহিনের আত্মীয় স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে।
পুলিশ এ চক্রের মূল ইয়াসমিনকে গত বছর গ্রেপ্তার করে ৭ দিনের রিমান্ডে নেয়। রিমান্ডে ইয়াসমিন গোয়েন্দা পুলিশকে জানায়, আমার ভগ্নিপতি মোবাইল নম্বর দেয়। সেসব মোবাইলে ফোন করে ছেলেদের সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করি। ইয়াসমিন জানায়, তবে আগে আমি ছেলেদের চাহিদা মেটাই। ইয়াসমিন এখন জামিনে।
যোগ্য পাত্র চাই বিজ্ঞাপন দিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবসা করে আসছে নাজমা ওয়াহিদা রোজি ও তার চক্র। আজাদ হোসেন নামে এক যুবকে বিয়ে করে ইতালি নিয়ে যাবে। খরচ বাবদ ওই যুবকের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে যুবক রমনা থানায় অভিযোগ করেন। কিছুদিন আগে রমনা থানার পুলিশ মোবাইলে পাত্র সেজে তাকে মগবাজার সিএনজি স্টেশনের সামনে থেকে গ্রেপ্তার করে।
৫ দিনের রিমান্ডে সে পুলিশকে জানায়, আমি মগবাজার প্রিয়াংকা ম্যারেজ মিডিয়া ছাড়া মালিবাগে সৃষ্টি ম্যারেজ মিডিয়ায় ২ বছর ধরে কাজ করেছি। সেখানে ভাগ কম দেয়ায় প্রিয়াংকা ম্যারেজ মিডিয়ায় এসেছি। ২ সতীন শান্তা ও নারগিস জাল টাকা সরবরাহে সক্রিয় নারী অপরাধী। রাজধানীর মোহাম্মদপুর ৪০/৪ জহুরি মহল্লার বাবর রোডে ব্লক ১ এ বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো রাজিব উদ্দিন। তার দুই স্ত্রী সুমা আক্তার শান্তা (২৫) ও নারগিস আক্তার (২৬) দীর্ঘ দিন ধরে জাল টাকা সরবরাহ করে আসছিল।
এ খবর জানতে পেরে র্যাব-৩ এর লে. কমান্ডার এম মাহবুবুল আলম গত বছরের ২রা আগস্ট অভিযান চালিয়ে এ ২ মহিলা প্রতারককে আটক করে। পরে তারা র্যাবকে জানায়, আমাদের স্বামী পুরান ঢাকা থেকে জাল টাকা আনতো। আর আমরা এটা মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করি। তাদের বাড়ি বগুড়া জেলার পশ্চিম পাড়া। কয়েকদিন পর জেল থেকে বের হয়ে তারা বাসা এবং মোবাইল নম্বর পরিবর্তন করে ফেলেছে।
পুলিশ এখন তাদের খুঁজে পাচ্ছে না। পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী কেবল তেজগাঁও এলাকায়ই রয়েছে অর্ধশত শীর্ষ নারী মাদক ব্যবসায়ী। এ এলাকায় প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে কোটি টাকার মাদক। পুলিশের তৈরিকৃত নারী মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে তালিকার প্রথম সারিতে রয়েছে গলাকাটা নাছিমা ও নূরজাহানের নাম। আরও রয়েছে জোলেখা ও তার স্বামী, মেয়ে শিল্পী, ছেলে রুবেল, শাশুড়ি রাফিয়াসহ একই পরিবারের পাঁচ জনের নাম।
তেঁজগাও এলাকার অন্য মহিলা মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে রয়েছে ঝুলি, মাহফুজা, পারভীন, জোলেখা, নীলা, নূরানী, ইদ্রিস, সাজেদা, খুশী, সেলিনা, জনির মা, মাজেদা, ওরাকেয়া প্রমুখ।
মহিলা অপরাধীদের বিষয়ে র্যাব মহা-পরিচালক মোখলেছুর রহমান জানান, নারীরা এখন সব বিষয়ে সক্রিয় হচ্ছে। সে হিসেবে তারা অপরাধেও জড়িয়ে পড়ছে। তারা ভাল কাজের পাশাপাশি মন্দ কাজেও সংশ্লিষ্ট হচ্ছে। তিনি বলেন, অপরাধের সঙ্গে যে-ই জড়িত থাকুক না কেন তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।
দুর্বল আইনের কারণে অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যাচ্ছে বলেও মনে করেন তিনি।
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।