আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিভাবে কিনবেন : একটি ভালো দূরবীন

নাহিদুল ইসলাম

একটি ভালো দূরবীনের শখ অনেকেরই। বিশেষ করে কিশোর ও তরুনদের কাছে দূরবীন একটি আকর্ষনীয় বস্তু। একটি জিনিস যেটা কিনা বহু দুরের দৃশ্যকেও কাছের করে তোলে। অনেকেই দূরবীন কিনতে চান, কিন্তু বাজারে আছে অনেক ব্রান্ড এবং প্রত্যেক ব্রান্ডেরই আছে অনেক রকম বিশেষত্বের দূরবীন। কোনটা পাখি বিশারদদের জন্য, আবার কোনটা হয়ত সাধারণ ব্যবহারের জন্যে।

এর মধ্যে থেকে একটি বেছে নেয়া যে খুবই কঠিন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। এই লেখাটির উদ্দেশ্য হলো যারা দুরবীন কিনতে চান, কিন্তু বুঝে উঠতে পারছেন না কোন ধরনের দূরবীন তাদের কেনা উচিত, তাদের বুঝতে সাহায্য করা। একটি ভালো দূরবীন কিনতে গেলে সবার আগে যে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে হবে তা হল, এটা কেন, কি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার জন্যে কেনা হচ্ছে। তবে এ বিষয়টি বিবেচনা করার আগে দূরবীন এর ব্যপারে কিছু জানা থাকলে সুবিধা হবে। একটি সাধারণ দূরবীন হলো দুটি লেন্স এর সমন্বয়।

একটি লেন্স থাকে সামনে, যাকে বলা হয় অবজেকটিভ লেন্স। এটি আকারে অনেক বড় হয়ে থাকে। যাকে দেখতে চাই, এটি তার দিকে তাক করে রাখতে হবে। অপর লেন্সটি হলো আইপিস বা যে লেন্সটিতে আমরা চোখ রাখি। এর আকার অনেক ছোট হয়।

এই লেন্স দুটিকে একটি টিউবের সাহায্যে এক সাথে এবং এক লাইনে ধরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। আলো এসে সামনের লেন্সটিতে পড়ে এবং কেন্দ্রীভুত হয় পেছনের লেন্সটিতে। পেছনের লেন্সটিতে আমরা চোখ রেখে দেখতে পাই। সাধারণত একটি দূরবীনে দুটি টিউব যুক্ত অবস্থায় থাকে দু'চোখের জন্যে। আমরা কোনো দুরবীন হাতে নিলে তার গায়ে কিছু সংখ্যা লেখা দেখতে পাই।

যেমন,10*25 অথবা 8*40 ইত্যাদি। এ দুটি সংখ্যা দ্বারা দুরবীনের ক্ষমতা বোঝানো হয়ে থাকে। প্রথম সংখ্যাটি দ্বারা বোঝানো হয় যে সেই নির্দিষ্ট দুরবীনটি তার লক্ষবস্তুকে তার দুরত্বের 10 গুন কাছে নিয়ে আসতে পারে। অর্থাৎ বিষয়বস্তু যদি 100 মিটার দুরত্বে থাকে, তবে দূরবীন দিয়ে তাকালে তাকে 10 মিটার কাছে দেখা যাবে। যদি তার গায়ে 8*40 লেখা থাকে তাহলে দূরবীনটি বিষয়বস্তুকে 8 গুন কাছে নিয়ে আসতে পারবে।

দ্বিতীয় সংখ্যাটি বলে দূরবীনের অবজেকটিভ লেন্সটি কত বড় হবে। লেন্সটি যত বড় হবে, তার মধ্যে দিয়ে আসা দৃশ্যটি ততই উজ্বল হবে। তার মানে দাড়ায়, যদি একটি 25mm লেন্স যুক্ত দূরবীন দিয়ে কোন দৃশ্য অন্ধকারচ্ছন্য দেখায়, যেমন অল্প আলোতে, তবে একটি 40mm অথবা 80mm লেন্স যুক্ত দূরবীন দিয়ে দৃশ্যটি অনেক আলোকিত দেখাবে। 100mm অথবা তারচেয়েও বেশি বড় আকারের লেন্স ব্যাবহৃত হয়ে থাকে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ টেলিস্কোপগুলোতে। তৃত্বীয় যে বিষয়টি বিবেচনায় আনতে হবে তা হলো, দূরবীনটির ফিল্ড অফ ভিউ।

কোন দৃশ্যাবলীর দিকে তাকালে ডানে বামে কতটুকু এলাকা এক নজরে দেখা যায় তাকেই বলে ফিল্ড অফ ভিউ। কোন দূরবীনে যদি লেখা থাকে 390' তবে এর মানে হলো 3000 ফিট দুরত্বে যদি দূরবীনটির ফোকাস করা হয়, তবে ফিল্ড অভ ভিউ হবে 390 ফিট। ম্যাগনিফিকেশন ক্ষমতা যত বাড়তে থাকবে, দূরবীনের ফিল্ড অভ ভিউ ততই কম হবে। কম ক্ষমতার দূরবীনগুলোর ফিল্ড অভ ভিউ অনেক বেশি থাকে। আমরা যখন জানতে পারলাম যে, প্রথম সংখ্যাটি মানে হলো দূরবীনটি কত দুরের বস্তুকে কতটা কাছে আনতে পারে, তারই হিসাব, তখন আমরা ধারনা করতে পারি, এ সংখ্যাটি যত বেশি হবে দূরবীনটি ততই ভালো এবং ক্ষমতাশালী হবে।

ব্যাপারটি অনেকখানিই তাই। এটি অনেক ক্ষমতাশালী হবে তাতে সন্দেহ নেই, তবে ভালো হবে কিনা সেটা বিতর্কের বিষয়। একটি দূরবীন যত ক্ষমতাশালী হবে, এর ওজন ও সেই হারে বাড়তে থাকবে। একটা ভীষণ ভারী জিনিস লম্বা সময়ের জন্যে চোখের সামনে ধরে রাখা কষ্টকর ও বিরক্তিকর হতে পারে অনেকের জন্যে। এরপরেও আকার একটি বিষয়।

অনেক ক্ষমতাশালী দূরবীনগুলো সাধারণত আকারেও বড় হয়ে থাকে। এগুলো নিয়ে নড়া-চড়া করা বা চলাফেরা করা একটা ঝক্কি বিশেষ। আর সবচেয়ে বেশি সমস্যা করবে দূরবীনটির ম্যাগনিফিকেশন ক্ষমতা অর্থাৎ এর দূরকে কাছে আনবার ক্ষমতা। অনেক ক্ষমতাশালী দূরবীনের মাঝে দিয়ে তাকালে লক্ষবস্তুটিকে স্থির ভাবে দেখাটা হয়ে পড়ে অনেক কঠিন। সামান্যতম নড়াচড়াও দূরবীনের ছবিকে অনেক বেশি কাপিয়ে দেয়।

50x ক্ষমতার দূরবীন গুলোতে এমনকি হার্টবিটও ছবিকে কম্পমান করে দিতে পারে। এই সমস্যার সমাধান একটিই। তা হলো দূরবীনের জন্যে একটি ট্রাইপড ব্যাবহার করা। যার মানে হলো একটা বড়সড় আকারের ও বেশ ভারী ওজনের একটি বাড়তি বোঝা। যে দূরবীনটি একজন পাখি বিশারদ অথবা আকাশ পর্যবেক্ষকের জন্য আদর্শ বলে বিবেচিত হয়ে থাকে, তা একজন সাধারণ ব্যবহারকারীর জন্য খুবই বাজে হতে পারে।

আবার এটাও হিসেবের মধ্যে রাখতে হবে যে অবজেকটিভ লেন্স এ মাপটি ঠিক মতো হলো কিনা। আমরা জেনেছি বড় মাপের লেন্স দূরবীনের ছবিকে উজ্বল করে। এই লেন্স যদি বেশি বড় হয়ে যায় তবে তা দিয়ে সন্ধ্যা বা রাতের ছবি নিঃসন্দেহে অনেক চমৎকার আসবে, তবে সমস্যা হবে দিনের বেলা। ছবি হয়ত এত উজ্বল আসবে যে তার দিকে তাকানো হয়ে উঠবে মুশকিল। যারা অল্প আলোতে দূরবীন নিয়ে কাজ করেন, অল্প আলোতে দূরবীন কতটা ভালো কাজ করবে তা বুঝে নিতে পারবেন একটি বিষয় হিসেব করে।

দূরবীনের প্রথম সংখ্যা ও দিত্বীয় সংখ্যা কে গুন দিয়ে যা পাওয়া যায় তা তুলনা করুন অন্য দূরবীনের গুনফলের সাথে। যে দূরবীনের গুনফল বেশি হবে, অল্প আলোতে কাজ করার জন্যে সেই দূরবীনটিই সবচেয়ে ভালো হবে। একে বলা হয় টোয়াইলাইট জোন। তাই আগে বুঝে নিতে হবে জিনিসটি কোন কাজের জন্য ব্যাবহৃত হবে। তবেই একটি সহজে ব্যবহার উপযোগী ও আরামদায়ক জিনিস কেনা সম্ভব হবে।

যদি সাধারণ ব্যাবহারের জন্যে হয়, তবে 10*25, 12*30 অথবা 8*21 ক্ষমতার দূরবীন গুলোই অনেক বেশি ভালো হবে। যারা পাখি দেখার কাজে দূরবীন ব্যাবহার করেন তাদের দরকার হবে বড় মাপের লেন্স সহ বেশি ম্যাগনিফিকেশন ক্ষমতার দূরবীন। যারা রাতের আকাশ দেখার কাজে দূরবীন ব্যাবহার করেন তাদের দরকার হবে সবচেয়ে বড় মাপের লেন্স সহ দূরবীন। আর যারা স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখার মজা পেতে চান, তাদের জন্যে উপযোগী হবে নিচু ক্ষমতার দূরবীন। কারণ খেলা দেখার সময় কাছে এনে দেখার চেয়ে অনেকটা এলাকা এক সাথে দেখতে পাবার গুরুত্ব বেশি।

আমরা জানি নিচু ক্ষমতার লেন্স এ ফিল্ড অভ ভিউ বেশি থাকার কারণে অনেকটা এলাকা এক নজরে চোখে পড়ে। তবে কেউ যদি খেলার খুটিয়ে দেখতে চান, তবে তার বেশি ক্ষমতার দূরবীন কেনা ছাড়া বুদ্ধি নেই। বাংলাদেশের মতো আর্দ্র জলবায়ুর দেশের জন্যে আর একটি যে বিষয় জেনে নিতে হবে তা হলো দূরবীনটি পানি ও আর্দ্রতা রোধক কিনা। বিশেষ করে বর্ষাকালে দূরবীনগুলোর অবস্থা হতে পারে খুবই করুণ। লেন্স এর ভেতর ফাঙ্গাস পড়েলেন্সের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যেতে পারে অথবা ছবি ঝপসা হয়ে যেতে পারে।

এ জন্যে সম্ভব হলে পানি ও আর্দ্রতারোধক দূরবীন কিনতে হবে। এগুলো মূল্য তুলনামূলক বেশিই হয়ে থাকে। যারা এ ধরণের দূরবীন কিনতে পারছেন না, তারা বর্ষাকালে বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে দূরবীন আর্দ্রতা মুক্ত পরিবেশে বর্ষাকালের জন্যে তুলে রাখতে পারেন। আশাকরা যায় যে তথ্য গুলো এখানে দেয়া হয়েছে সেগুলো পড়ে দূরবীন আগ্রহীরা উপকৃত হবেন। যদি আরও বিস্তারিত জানবার দরকার হয়, তবে গুগলে "how to buy a binoculer" অথবা "what to know when buy a binoculer" এ দিয়ে সার্চ দিলে প্রচুর তথ্য পেতে পারেন।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.