আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বর্ণময় আনন্দময় রঙিন সময়


ঋতু বৈচিত্রময় বর্ণময় হয়ে আসে করনাডায়। চারটি ঋতু আবিরভূত হয় ভিন্নতার স্বাদ নিয়ে। শীতের শুভ্রতা কাটে ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে বসন্তের আগমনে। পাতা নয় গাছ ভর্তি হয়ে যায় ফুলে। এরপর সবুজের উচ্ছাস দেখে মনে হয় না কোন শ্যামল চির সবুজ দেশ নয় এ।

গ্রীষ্মের সবুজ উষ্ণ উজ্জ্বল দীর্ঘ দিন ধীরে ধীরে ছোট হতে থাকে শরতের আগমনে। দুই মাসের লম্বা ছুটি কাটিয়ে শরতের রঙিন পাতার দোলায় শুরু হয় স্কুল আবার সেপ্টেম্বরে। নতুন ক্লাসের পড়ালেখায় মনযোগ দেয় শিক্ষার্থী। পাখিরা আয়োজন করে দক্ষিণে উড়াল দেয়ার আর গাছের সবুজ পাতায় লাগতে থাকে হলুদ, মেরুণ, কমলা, লালের ছোঁপ। অপরূপ সাজে সেজে উঠে প্রকৃতি নতুন বধুর মতন।

ঝরে পড়ার আগে গাছে গাছে আগুন লাগে যেন। আগুন রঙা শরতের রূপ দেখতে হিমেল হাওয়া সাথে করে অনেকে বেড়িয়ে পরেন আরো উত্তরের দিকে। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে উজ্জাপিত হয় ‘থ্যাংসগিভিং ’। এ অনুষ্ঠান অনেকটা আমাদের নবান্ন উৎসবের কথা মনে করিয়ে দেয়। গ্রীষ্মের তাপ হাওয়ায় উৎপন্ন নতুন ফসল সংগ্রহ এবং কানাডার প্রচন্ড শীতে বরফ ঢাকা সময়ের জন্য খাদ্য সঞ্চয় এই নতুন ফসল তোলা আর প্রার্থণা।

বহু বছর পূর্বে যখন কানাডায় ছিল না, এত আধুনিক উন্নত প্রযুক্তি, ছিল না বিদ্যুৎ এর সহজ ব্যবহার, ছিল না গরম করার হিটিং ব্যবস্থা, কাঠ জ্বালিয়ে গরম করা হতো ঘর সনাতনি পদ্ধতিতে। বরফের ঘরে পশুর চামড়া দিয়ে ঢেকে গরম রাখা হতো ঘর। বেঁচে থাকত মানুষ প্রকৃতির প্রচণ্ড প্রতিকুলতা ঠেলে। প্রচন্ড শীত বরফ ছেয়ে থাকত প্রায় সাত,আট মাস। মানুষ বিজ্ঞানের চেয়ে অনেক বেশী ঈশ্বরে এবং আলৌকিক শক্তির উপর বিশ্বাসী ছিল, সমস্ত অসুবিধা থেকে রক্ষা করার জন্য অদেখা বিশাল শক্তির কাছে র্নিভর করত।

সে সময় ইউরোপের পাইরেট শ্রেনীর র্নিবাসিত মানুষ ডিঙ্গায় ভাসতে ভাসতে অভিভাসনের এই দেশ কানাডায় পৌঁছায়। অভিভাসনের এত নিয়ম কানুন ও ছিল না তখন। শীতের আগে আগে তারা বাসা বাঁধে উত্তরের শীত প্রধান এই ভূখণ্ডে। নতুন এই দেশের আবহাওয়া সম্পর্কে যাদের ছিল না কোন ধারনা। প্রচন্ড কনকনে ঠান্ডা,শীতে ও খাদ্যের অভাবে মারা যায় এই নতুন দেশে আশ্রয় গ্রহণকারীর অধিকাংশ।

যারা বেঁচে থাকে তারা পরবর্তী বছর প্রস্তুতি নিতে থাকে শীতকালের খাদ্য মওজুদ করে রাখা আর শীত নিবারণের পদক্ষেপ নিয়ে। এই প্রচেষ্টায় শুরু হয় গ্রীষ্মকালে ফলানো ফসলের সংরক্ষণ আর শীত শুরু হওয়ার আগে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা। যে খাদ্য উদপাদিত হয়েছে যা সংরক্ষিত হয়েছে শীতকালের জন্য তা যেন আমাদের এই শীত পারি দেয়ার জন্য সহায়ক হয় হে ঈশ্বর। প্রথম উৎপাদিত ফসল পরিবার, আত্মিয়-পরিজন, গ্রামবাসি সবাই একত্রে প্রার্থণার মাধ্যমে, ভোজের মাধ্যমে প্রভুকে থ্যাংস দেয়ার মাধ্যমে থ্যাংসগিভিং এর প্রচলন শুরু হয়। বর্তমানে এই উৎসব টারকি (তিতির) খাওয়ার বিশেষ প্রচলনের মধ্যে পর্যবেসিত হয়েছে।

কেনাকাটার ধূম লেগে যায় গ্রোসারী দোকান গুলোতে। এখন নানান ধরনের খাদ্য তৈরী হলেও প্রচলিত খাদ্য মেনু টারকি,ক্র্যানবেরী সস, স্টাফিং, ম্যাস্ড আলু আর মিষ্টি আলু বা মিষ্টি কুমরোর পাই। যত কেনা কাটা হোক বন্ধ থাকে গ্রোসারী দোকানগুলোও থ্যাংস গিভিং এর দিনে। এছাড়া শত ব্যাস্ততার মাঝে পরিবারের আত্মিয় স্বজন একত্রিত হওয়ার চেষ্টা করে এই দিনটিকে কেন্দ্র করে আনন্দে উৎসবে মেতে উঠার জন্য। তিনদিনের লং উইকএন্ড শনি রবিবারের সাথে সোমবার মিলিয়ে।

দূরদূরান্ত থেকে ছেলে মেয়ে, মা বাবার বাড়িতে সাধারণত এ সময়ে চলে যায়। অথবা মা বাবা আসে সন্তানের কাছে। নাতি নাতনী পরিচিত হয় প্রচলিত প্রথার সাথে। আগে থেকেই ঠিক করে রাখা হয় সবাই কোথায় মিলিত হবে এবার। অনেকে চলে যায় কটেজ কান্ট্রিতে।

ব্যস্ততা কোলাহল মুক্ত ছোট্ট সুন্দর প্রকৃতির সৌন্দর্যময় কোন গ্রামে শরতের রঙিন প্রকৃতি উপভোগ হয় বাড়তি যোগ। ঝরাপাতার মর্মর ধ্বনী, আর লাল, হলুদেও সমারোহ শহুরে জীবনের বাইরে এক প্রশান্তিময় আনন্দময় স্বস্থি । এই সনাতনী পদ্ধতি এখনো অনেক গুরুত্ব বহন করে এখানের মানুষের জীবনে। ঐতিহ্য বাহি এই নবান্ন উৎসব ভালোবেসে গ্রহণ করছেন অনেক নতুন অভিবাসি, উপভোগ করেন নিজেদের মধ্যে নবান্ন উৎসবের এই দিনটি। রঙে রঙে রঙ্গীন পাতার ঝরে পরার সাথে ন্যাড়া গাছগুলে দাঁড়িয়ে থাকে তুষার আলিঙ্গনের অপেক্ষায়।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।