আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দেশে আইনশৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতি

জানি না

সাভারে মুক্তিযোদ্ধাকে কুপিয়ে হত্যা, রাঙামাটিতে ইউপিডিএফ-জেএসএস সংঘর্ষে কমপক্ষে দুজন নিহত, আহত কয়েকজন; কুষ্টিয়ায় দু’পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত, আহত ১০; চট্টগ্রামের রাউজানে ক্ষমতাসীন দলের দু’গ্রুপের সংঘর্ষে যুবলীগ কর্মী খুন, কুষ্টিয়ায় ক্রসফায়ারে নিহত একজন; রাজশাহীর বাঘায় কৃষক খুন, ঢাকার সবুজবাগে গৃহবধূর লাশ উদ্ধার, নড়াইলে গণপিটুনিতে যুবক নিহত, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় কিশোর হত্যা, ঠাকুরগাঁওয়ে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন, ঢাকার ধামরাইয়ে মাথাবিহীন লাশ উদ্ধার, রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালের সামনে থেকে যুবক অপহরণ, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জে দুর্ধর্ষ ডাকাতি, নবীগঞ্জে ত্রিমুখী সংঘর্ষ, মুন্সীগঞ্জে ডাকাতিকালে দুজন গুলিবিদ্ধ, কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরে মামলা করায় বাদীকে হত্যার হুমকি, ময়মনসিংহের গৌরীপুরে চাঁদা না দেয়ায় কবর খুঁড়ে ব্যবসায়ীকে হুমকি, টঙ্গী থেকে বিস্ফোরকসহ দুই যুবক গ্রেফতার—এ ঘটনাগুলো গতকালের। এর আগে শুক্রবারের ঘটনাগুলো যা গতকালের পত্রিকায় শিরোনাম ছিল—২৮ অক্টোবর স্টাইলে নাটোরে উপজেলা চেয়ারম্যানকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যা করল আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা, রাজপথে বিএনপির মিছিলে হামলা, ৪ সাংবাদিকসহ আহত ৪০; রাঙামাটিতে জনসংহতি সমিতির নেতা খুন, টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগ নেতা খুন, টঙ্গীতে রাজমিস্ত্রি খুন, মানিকগঞ্জে স্কুলছাত্রীকে হত্যা, কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে এতিমখানার ছাত্র খুন, হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে এক ব্যক্তির খুন হওয়া গলিত লাশ উদ্ধার, রাজশাহীর বাঘায় শিশুপুত্রের সামনে বাবাকে খুন, অভয়নগরে স্ত্রীকে খুন করে স্বামীর আত্মহত্যা, নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় সন্ত্রাসী হামলায় নিহত এক, আহত ৩; শেরপুরে ভারতীয় পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশী নাগরিক হত্যা, যশোরে বিএনপি নেতার রগ কর্তন, রংপুরে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষে ৫ জন আহত, নোয়াখালীতে থানার অদূরে ডাকাতি, নোয়াখালীতে ধানের চারা কেটে নিয়েছে সন্ত্রাসীরা, নাটোরে মাদ্রাসা কমিটি নিয়ে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষে হামলা, লুটপাট, আহত ২; পিরোজপুরের জিয়ানগরে একরাতে ৭ বাড়িতে ডাকাতি, আগৈলঝাড়ায় সুদের টাকা নিয়ে দু’দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষ, হবিগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা অফিসে আওয়ামী লীগ নেতাদের হামলা, হবিগঞ্জের চুনারুঘাটে ধানক্ষেত ধ্বংস, ফরিদপুরে পুলিশের আত্মহত্যা, জামালপুরে বাকি না দেয়ায় রেস্তোরাঁয় হামলা, লুটপাট, নবীগঞ্জে ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করছে বখাটেরা, কাউখালীতে একজনের চক্ষু উত্পাটন, নওয়াপাড়ায় একজনকে কুপিয়ে জখম, বাজিতপুরে ডাক্তারের আত্মহত্যা, লক্ষ্মীপুরে চাইনিজ রেস্টুরেন্টে হামলা, ভাংচুর ও পুলিশের এসআইসহ গ্রেফতার ৩। এ ঘটনাগুলো আজ ও গতকাল দৈনিক আমার দেশ-এ এসেছে। এর বাইরেও আইনশৃঙ্খলার অবনতির বহু ঘটনা রয়ে গেছে। যা পত্রিকায় পাতায় আসেনি।

মাত্র দু’দিনে এতগুলো হত্যা, সংঘর্ষ, ডাকাতি, অপহরণের ঘটনা পিলে চমকানো শুধু নয়, রীতিমত উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা ও আতঙ্কিত হওয়ার মতো। এ দু’দিনের মতোই প্রতিদিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির শত শত খবর ছাপা হচ্ছে পত্রিকায়। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, রাহাজানিই শুধু নয়, প্রতিদিন নৃশংস মার্ডার, ডাবল মার্ডার, ট্রিপল মার্ডার, পরিকল্পিত খুন, খুনের পর লাশ গুম, অজ্ঞাত লাশ উদ্ধার, অপহরণ, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, বাজার দখল, দোকান দখল, ঘের দখল, হল দখল, বিল, বাঁওড়, পুকুর, জলাশয় দখল, দ্বিমুখী-ত্রিমুখী সংঘর্ষ, রগকাটা, হাত-পা কেটে দেয়া, চোখ উপড়ে ফেলার মতো অসংখ্য লোমহর্ষক ঘটনার খবর আসছে। এসব পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে নিশ্চিত বলা যায়, দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি হয়েছে। বেড়েই চলেছে সামাজিক, রাজনৈতিক সহিংসতা ও ভয়ঙ্কর অপরাধ।

পরিস্থিতি এমন হয়েছে, এখন শাসক দলের নেতাকর্মীদের হাতেই নিজ দলের এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, নিজের ও বিরোধী দলের নেতাকর্মী, থানা পুলিশ, শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী, দিনমজুর, পেশাজীবী কেউই নিরাপদ নন। কারোরই নিরাপদে ঘরে ফেরার নিশ্চয়তা নেই-ই; বরং বাসায়ও নিশ্চিন্তে থাকার উপায় নেই। শাসক দলের সুবিধাভোগীদের স্বার্থে সামান্য ব্যাঘাত ঘটলেই যে কারও ভয়ঙ্কর পরিণতিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, এসব ঘটনায় অধিকাংশ ক্ষেত্রেই পুলিশ থাকে নীরব। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলায় নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান বাবু নিহত হওয়াসহ রাজধানী ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে আলোচিত অসংখ্য খুনের ঘটনার পরও গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

তিনি বলেছেন, সবার সহযোগিতায় দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। ভবিষ্যতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানের চেয়ে আরও ভালো অবস্থায় নিয়ে আসা হবে। গতরাতে বঙ্গবন্ধু ভবনে শেখ রাসেল জন্মবার্ষিকী উদযাপন পরিষদের সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন। এদিকে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) হাসান মাহমুদ খন্দকার গতকাল আমার দেশকে বলেন, মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে—এমনটি বলা যাবে না।

তবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিচ্ছিন্নভাবে কিছু খুন-খারাবি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশের নিজ নিজ ইউনিট এবং থানার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, অপরাধী যে-ই বা যে দলেরই হোক তাদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আসতে হবে। ভুক্তভোগী মানুষের অভিযোগ, থানায় জিডি করে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, সিলেটের গোলাপগঞ্জ থানার নগর গ্রামের বাসিন্দা সালেহ আহম্মদ সাচ্ছুর কথা।

তিনি সন্ত্রাসীদের হুমকিতে ভীত হয়ে গোলাপগঞ্জ মডেল থানায় কয়েকটি জিডি করেন। স্বামীকে নিরাপত্তা দেয়ার আকুল আবেদন জানিয়ে থানায় জিডি করেন স্ত্রী এবং ছোটভাই জিল্লুর রহমানও। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি সাচ্ছুর। গত ১৭ আগস্ট তাকে নির্মমভাবে কুপিয়ে জখম করে মৃত ভেবে ফেলে যায় সন্ত্রাসীরা। চিকিত্সাধীন তার মৃত্যু হয় ২১ আগস্ট।

সাচ্ছুর ছোটভাই জিল্লুর রহমান জানান, তারা প্রভূত ভূ-সম্পত্তির মালিক। সেই জমি দখলের উদ্দেশ্যে তার ভাইকে খুন করে এখন পরিবারের অন্য লোকদেরও হুমকি দেয়া হচ্ছে। চাকরির কারণে তাকে শহরে থাকতে হয়। জিডি ছাড়াও পরবর্তী সময়ে আইনের আশ্রয় চেয়ে থানায় মামলা, জেলার এসপির কাছে আবেদন, পুলিশ সদর দফতরেও আবেদন জানিয়েছেন। আবেদন জানিয়েছেন ভাই হত্যার মামলাটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চাঞ্চল্যকর মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করার।

কিন্তু এতকিছুর পরও এজাহারভুক্ত ৩০ আসামির কাউকেই গ্রেফতার করা হয়নি। উল্টো ঘর পোড়ানোর পরিকল্পিত মামলায় তাকে ও পরিবারের লোকজনকে হয়রানি করা হচ্ছে। জিল্লুরের প্রশ্ন, থানা পুলিশের কাছে সহযোগিতা না পেলে কোথায় যাব, কার কাছে নিরাপত্তা চাইব? অসহায় এ পরিবারটির মতোই অবস্থা দেশের ভুক্তভোগী অসংখ্য মানুষের। কেউ শুনছে না তাদের ফরিয়াদ। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে বলা যায়, থানা পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা পুলিশ সবাই ব্যস্ত রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের তোষণে।

তাদের ফরমায়েশ খাটতেই দিন যায় পুলিশের। দেশের অধিকাংশ থানায় কার নামে মামলা হবে, কোন মামলা নেয়া যাবে, কার এজাহার নেয়া যাবে না, কোন মামলায় কাকে আসামি করা হবে—এসব নির্দেশনা আসে সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের কাছ থেকে। ফলে পুলিশ মামলার তদন্ত, মামলার প্রকৃত আসামি গ্রেফতার, চার্জশিট কোনোটিই সঠিকভাবে দিতে পারছে না। রাজধানীর পার্শ্ববর্তী একটি থানার ওসি বলেন, পরিস্থিতি এ পর্যায়ে পৌঁছেছে, সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের কথা না শুনলেই বদলি; এমনকি মার খাওয়ারও আশঙ্কা আছে। তিনি আশুলিয়া, যশোর ও কক্সবাজারে এমপি এবং সরকারদলীয় নেতার হাতে পুলিশ মার খাওয়ার উদাহরণ দিয়ে বলেন, ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থে সামান্যতম ব্যাঘাত ঘটলে যে কারোরই এ পরিস্থিতির শিকার হওয়ার আশঙ্কা আছে।

তাই তারাও ভীত-সন্ত্রস্ত। শাসক দলের সুবিধাভোগী নেতাকর্মীদের বেপরোয়া আচরণে দেশের আইনশৃঙ্খলার এ পরিস্থিতি বলে মনে করছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা। তাদের হাতে প্রতিনিয়ত নিজ দলের নেতারাও খুন, জখম ও হামলার শিকার হচ্ছেন। বরিশালের বানারীপাড়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের হাতে গত ২২ সেপ্টেম্বর ছুরিকাহত হয়েছেন এমপি মনিরুল ইসলাম মনি। এসব ঘটনা থেকে বোঝা যায়, সাধারণ মানুষ কতটা অসহায়।

Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.