কেমন করে সময় কেটে যায়...
পিজির বিছানায় শুয়ে আছি... গত কয়েকদিন ধরে ভর্তি...
আশেপাশের দুই-একটা বেডের পেশেন্ট এর সাথে টুক-টাক পরিচয়...
আমার পাশের বিছানার যে চাচা...বেশ মজার মানুষ...আমার বেশ খোঁজ-খবর রাখে...
হস্পিটাল থেকে যে খাবার দাবার দেয়,(যথেষ্ট ভালো খাবার)আমি খুব একটা খাই না...
কেন খাইনা??? খাওয়া উচিত... আমার জন্য খাবার রাখা... বেশ কেয়ারিং...
আবার বেশ দাবীও খাটান... ফোন করার সময়,সরাসরি 'মোবাইলটা দাও'...
মোবাইলে না ঢুকলে,'০২ দিয়া এই নাম্বারটা দাও'...
আমিও দেই... কান্নাকাটি চলে... অভিমান চলে... অভিমান গপ্লে...
মাঝে মাঝে পাশে শুয়ে বকবক করতে থাকে...দেশটার কি হইসে... এইরকম তো হওয়ার কথা ছিলো না... আমি শুনে যাই... ঘুমাই... উঠি... ঘুমাই... চাচা ঘুমায়... চাচা উঠে... বকর বকর চলে...
দুনিয়ার অসুখ চাচার... হস্পিটালে ভর্তি হইসে ৩০ বারের বেশি...'৮৪ সাল থেকে...
ডিউটি ডাক্তাররা হিস্ট্রি নেয়... শুনতে শুনতে আমার মুখস্ত...
বর্তমান কেইস, 'লিভার সিরোসিস'... অবস্থা ভালোনা... টিকবেনা মনে হয়...
শুয়ে আছি একদিন,হটাৎ ওয়ার্ডে একটু হইচই... মোহোনা টিভি থেকে রিপোর্ট করতে আসছে...
আমার পাশের চাচা চিৎকার করছে... 'এদিকে...এদিকে... I am a freedom fighter...' রিপোর্টাররা আসলো... কতো কথা... তার সুবিধা-অসুবিধা... কেউ তারে অসুধ দেয় না... এই সেই কত কি... রিপোর্টার চলে যায়...
চাচা আমার দিকে তাকিয়ে হাসে... তৃপ্তির হাসি!!!
চলে আসবো...রিলিজ নিয়ে... চাচা বলে,তার নাকি মন খারাপ... আমকে স্বান্তনা দেয়...
তার অসুখ ভালো হয়ে যাবে... লিভার ট্রান্সপ্লান্ট হবে... সরকার করে দিবে...
তবে সময় লাগবে... বছর খানেক... মুখে হাসি...
চাচার সাথে শেষ কথোপকথন...
চাচা যাই...
চাচাঃ (মলিন মুখে) যাওন নাই...আসি...
ক্যাম্পাসের ঘটনা...
কলেজের মালী... অনেকদিন ধরে পিছনে ঘুরছে...
মেয়ের শরীরটা নাকি ভালোনা... তারে ভিটামিন দেওয়া লাগবে...
আমি ভিটামিন পাবো কই...ইন্টার্ণীর ভাইয়ারা ফ্রি ভিটামিন পায়...
মেজাজ খারাপ হয়ে যায়...বিরক্ত হই... সামনা সামনি কিছু বলতে পারিনা...
বেটাও পিছু ছাড়েনা...ধৈর্য্য কারে বলে... দেখা হইলেই, দাঁত বের করে হাসি...
'মামা...আনসেন???'
শেষ-মেষ মহা বিরক্ত হয়ে ৪৫ টাকা দিয়ে কিনলাম এক শিশি...
আজব ঘটনা...
এখন আর তারে খুইজ্জা পাইনা...তিন দিন ঘুরলাম...
নাম ও জানিনা... শেষে একজন জিজ্ঞেস করলো,কারে খুজেন,মামা???
মুক্তিযোদ্ধা রে???
আমি একটু অবাক!!! 'অইযে,আপনার কাসে অসুধ খোঁজে??? '
আমি একটু ইতস্তত করে বললাম, হুমম...
হাত দিয়ে দেখায় দিল... অইযে... মুক্তিযোদ্ধা মামা,খালি গায়ে ঘাস কাটছে...
ক্যাম্পাসে মামার নাম ই মুক্তিযোদ্ধা...
আমি আস্তে আস্তে হেঁটে যাই... আরো আস্তে শিশিটা ওনার হাতে দেই...
আরো আস্তে... ধীরে ধীরে রুমে ফিরি...
মুক্তিযুদ্ধ দেখিনাই...
খুব বেশী মুক্তিযোদ্ধা ও দেখিনাই...
আমাদের দেশের মানুষজনরে বলতে শুনি...মানুষজন কেন...আমরাই বলি...
দেশের কি অবস্থা...কি পাইলাম...কি পাচ্ছি...
একটা জিনিশ মনে হয়...
১৬ বছর বয়সের যে মুক্তিযোদ্ধাটা মরে গেছে,যুদ্ধ করতে গিয়ে... ও কি পাইসে???
ওতো মরেই গেসে... কিসের জন্য মরসে????
যুদ্ধটা আসলে শেষ হয়নাই... প্যাটার্ন টা চেইঞ্জ হইসে...
but চলছে... এখনের যোদ্ধা আমরা...
আমাদের আগের প্রজন্ম,যুদ্ধ করে দেশটারে স্বাধীন করে গেছে...আমাদের কাজ দেশটারে গড়া...
যুদ্ধটা যদি ঠিকমত না করি... এখন যেমন আমরা বিচার করছি 'যুদ্ধাপরাধীদের'...
একটা সময় আসবে... আমাদের ও বিচার হবে... 'যুদ্ধাপরাধী' হিসেবেই...
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।