একজন বাংলাদেশি....................
গভীর সঙ্কটে বাংলাদেশ। এখানে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো যে মাত্রায় ভেঙে পড়েছে তা অকল্পনীয়। দুর্নীতি সর্বব্যাপী। ৫ বছর পর পর নির্বাচনে ভোট দেয়া ছাড়া বড় কোন ভূমিকা নেই সাধারণ মানুষের। স্থানীয় মিডিয়ার খবর অনুযায়ী ‘অধিকার’ সম্পাদক আদিলুর রহমান খানকে আটকের ঘটনাকে অবৈধ বলা হয়েছে।
তার মুক্তি দাবি জোরালো হয়েছে। আদিলই বর্বরতার প্রথম শিকার বা শেষ শিকার নন। এ ঘটনা ঘটতেই থাকবে। এতে রক্তপাত বাড়বে। শ্রীলঙ্কার সাংবাদিক ও শ্রীলঙ্কান গার্ডিয়ানের সম্পাদক নীলান্ত হাঙ্গামুওয়া একথা লিখেছেন।
‘বাংলাদেশ: আদিল, দ্য ম্যান আই নো’ শীর্ষক একটি মন্তব্যধর্মী প্রতিবেদন লিখেছেন তিনি। এতে তিনি আরও লিখেছেন, মাত্র কয়েকদিন আগের কথা। তারা এলেন এবং তাকে (আদিল) তাদের গাড়িতে তুলে নিলেন। আদালতে হাজির করার আগেই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হলো গোপন স্থানে। এরই মধ্যে বহির্বিশ্বের ক্রমাগত চাপে পড়তে থাকে সরকার।
এরপর তাকে হাজির করা হয় আদালতে। বর্তমানে আদিল কারাগারে আছেন। এই মানুষটি কি অন্যায় করেছেন? তার কাজের মাধ্যমে তিনি কাকে রাগান্বিত করেছেন? দেশের নির্যাতিত মানুষের স্বাধীনতার প্রতি তিনি ছিলেন সোচ্চার। এতে তিনি কার রোষানলে পড়েছেন? এই ‘অনুঘটক’-এর মতো কাজ করা এই ব্যক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার প্রয়োজন হলো কার? স্থানীয় মিডিয়ায় বলা হয়েছে, ভুয়া তথ্য দেয়ার অভিযোগে তাকে অবৈধ উপায়ে খেয়ালখুশিমতো গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন দেশে এ ঘটনা এখন খুব সাধারণ।
নীলান্ত আরও লিখেছেন, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি প্রামাণ্য আকারে তুলে ধরার জন্য স্থানীয় শীর্ষ স্থানীয় একটি মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’। এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান। ১০ই আগস্ট নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা তাকে গ্রেপ্তার করেছে। এ খবর মুহূর্তে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। তার মুক্তি দাবি জোরালো হতে থাকে।
সরকার যে টার্গেট নির্ধারণ করেছে তা প্রমাণ করতে তড়িঘড়ি করতে থাকে। আদিলের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয় গত বছর। তখন আমরা দীর্ঘ আলোচনা করেছি বাংলাদেশ সম্পর্কে। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে বর্তমান বাংলাদেশ যে দুর্নীতি ও কট্টরপন্থার কারণে দুর্বল হয়ে পড়ছে তা তিনি পয়েন্ট টু পয়েন্ট আমাকে বর্ণনা করেছেন। আদিল আসলে একজন ক্যারিশম্যাটিক মানবাধিকার কর্মী ও মুখখোলা মানুষ।
তিনি খোলামেলা কথা বলতে ভালবাসেন। যে কোন পরিস্থিতিতে তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে সৎ মতামত তুলে ধরেন। মানুষ বুঝতে ও শিখতে পারে এমন স্থানে তিনি স্পষ্ট উচ্চারণ করতে, বিতর্ক করতে জানেন। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তার এসব মন্তব্যে তার বন্ধুর চেয়ে শত্রুর সংখ্যা বেশি। তাই সরকার যখন তাকে গ্রেপ্তার করেছে এ খবর শুনতে পাই তখন বিস্মিত হই নি।
এতে শুধু আমি বাংলাদেশের বর্তমান নাজুক রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছি। এখানে যারাই ক্ষমতায় থাকে তারাই জনগণের মধ্যে সামাজিক ভীতি ছড়িয়ে দেয়।
তিনি আরও লিখেছেন, পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জনের বিষয়ে অনেক মানুষই কথা বলেছেন। কিন্তু বাস্তব কথা হলো- বাংলাদেশের মানুষ সত্যিকার স্বাধীনতা কখনও পায় নি। ব্যক্তিগত স্বাধীনতা হলো দিবাস্বপ্ন।
রাজনৈতিক ঘটনা ঘটে পর্দার আড়ালে। এর উদ্দেশ্য একটাই। তাহলো- জনগণের সম্পদ কেড়ে নেয়া। ৫ বছর পর পর নির্বাচনে শুধু ভোট দেয়া ছাড়া জনসাধারণের আর কোন ভূমিকা নেই। একেই বলা হচ্ছে গণতন্ত্র।
এর মাধ্যমে শুধু নির্বাচনে বিজয়ীদের ‘ক্রেজি’ হওয়ার অনুমোদন দেয়া হয়। দুর্নীতি এখন নিত্য ঘটনা। সমাজের প্রতিটি স্তরে মানুষ এ অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন। ঢাকার একটি বড় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের সিনিয়র প্রফেসর কয়েক বছর আগে বলেছিলেন, যেখানে ন্যায়বিচার সস্তা দামে বিক্রি হয়ে যায় সেখানে কে সুবিচার আশা করতে পারে? আদিলকে এখন আটকে রাখার কারণ এর মধ্যেই নিহিত।
গত বছর নির্যাতনবিরোধী একটি মিটিংয়ে আদিল উপস্থিত হয়েছিলেন।
সেখানে তিনি সমাজের অসঙ্গতিগুলো তুলে ধরেন এভাবে- ৯/১১-এর পর ১০ বছরের মধ্যে এশিয়ার দেশগুলো জাতীয় নিরাপত্তা ও জরুরি আইন সম্পর্কে অনেক আইন কার্যকর করেছে। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ একই কাজ করেছিল। আইন দিয়ে নির্যাতনকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। তাই আমরা শুধু আইনের শাসন নিয়েই কথা বলতে পারি না। ১৯৮২ সালের নাগরিকত্ব আইনে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা নাগরিক নন বলে ঘোষণা দেয়া হয়, যদিও তারা সেখানে ৫০০-৭০০ বছর ধরে বসবাস করছে।
রোহিঙ্গারা এখনও রাষ্ট্রহীন। এতে আসিয়ানের ব্যর্থতা ফুটে ওঠে। একই সময়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে ব্যর্থ হয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৭০ থেকে ১৯৯০-এর দশকে মানবাধিকার আন্দোলন বিকশিত হয়। কিন্তু ৯/১১-এর ঘটনায় সে ধারা ব্যাহত হয়।
এসব আন্দোলন কিভাবে পুনর্জাগরিত করা যায় তা নিয়ে আমাদের আলোচনা করা দরকার। ভিয়েনা ডিক্লারেশন অ্যান্ড প্রোগ্রাম অব অ্যাকশন-এর ২০ বছর পূর্ণ হচ্ছে এ বছর। তখন থেকে এশিয়ার দেশগুলো কতটুকু করতে পেরেছে বলে দাবি করা যায়?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।