দেশের মানুষকে ভালোবাসি
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম।
.................................................................
................................................................
সরল অনুবাদঃ
আশ্রয় চাই আল্লাহর যেন ময়তান দূরে রয়,
শুরু করি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়।
১.সময়ের কসম।
২.নিশ্চই মানুষ বড় ক্ষতির মধ্যে রয়েছে।
৩.তবে ঐ সকল লোক ব্যতীত যারা ঈমান এনেছে,নেক আমল করেছে,একে অপরকে সত্য কথার উপদেশ দিয়েছে,এবং একে অপরকে ধৈর্য ধারনের উপদেশ দিয়েছে।
*নামকরণঃ
উল্লেখিত আয়াতে কারীমাগুলো মহাগ্রন্হ আল কোরআনের ১০৩ নং সুরা, ক্ষুদ্র সুরাগুলোর অন্যতম সুরা আসর এর সবগুলো আয়াত। সুরার প্রথম শব্দে ব্যবহৃত আল আসর শব্দ থেকে সুরার নামকরণ করা হয়েছে। মক্কায় অবতীর্ণ এই সুরাটি ৩ টি আয়াত ও ১ টি রুকুতে সন্নেবেশিত।
*সুরা আসরের বিষশষ ফজীলতঃ
হযরত উবাইদুল্লাহ বিন হিসন (রা বলেন,রাসুল (স এর সাহাবীগনের মাঝে এমন দুইজন ব্যক্তি ছিলেন তারা পরষ্পরে মিলে একজন অন্য জনকে সুরা আসর পাঠ করে শুনানো ছাড়া বিচ্ছিন্ন হতেন না।
ইমাম শাফেয়ী (র বলেন যদি মানুষকেবল এ সুরাটি চিন্তা করত,তবে এটাই তাদের জন্য যথেষ্ট ছিল।
*ব্যাখ্যা বিশ্লেষনঃ
সুরার শুরুতেই প্রজ্ঞাময় আল্লাহ তায়ালা সময়ের কসম করে বলেছেন নিশ্চই মানুষ বড় ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো মানবজাতির ক্ষতিগ্রস্হতায় যুগ ও কালের প্রভাব কি?
চিন্তা করলে দেখা যায় আয়ুষ্কালের সাল,মাস,সপ্তাহ দিবা,রাত্র বরং ঘন্টা ও মিনিটই মানুষর একমাত্র পুঁজি। যার সাহায্যে সে ইহকাল ও পরকালের বিরাট এবং বিস্ময়কর মুনাফা অর্জন করতে পারে। এবং ভ্রান্ত পথে চললে এটাই তার জন্য বিপদজনক হয়ে যেতে পারে। সেই জন্য মানুষের ভালো মন্দ সবকিছুর জন্যই যুগ অনন্ত কাল ধরে সাক্ষী হয়ে রয়েছে।
আর সেই "যুগের" কসম দ্বারা বলা যেতে পারে পরের আয়াতে যে কথা বলা হচ্ছে তা খাঁটি সত্য ও নির্ভেজাল কথা।
*সুরার শেষ আযাতে বলা হয়েছে উপরোক্ত ক্ষতি বা ধ্বংয়সের হাত থেকে তারাই বাঁচতে পারে যারা চারটি কাজ করে। মুলত এই চারটি কাজ দ্বারাই মানুষের ইহকাল ও পরকালীন জীবনে শান্তি আসতে পারে। চারটি থেকে কোন একটি কম হলে প্রকৃত সফলতা সম্ভব নয়। চারটি কাজ হলোঃ
১.ঈমান আনা।
২.নেক আমল করা।
৩.একে অপরকে সত্য কথার উপদেশ দেয়া।
৪.একে অপরকে ধৈর্য ধারনের উপদেশ দেয়া।
.......বিষয় গুলোর বিষদ ব্যাখ্যা বিশ্লেষন প্রয়োজন.................
*প্রথম কাজ হলো ঈমান। এর শাব্দিক অর্থ বিশ্বাস।
মুখে মাত্র স্বীকার করলেই ঈমানের দাবী আদায় হয় না। মনে প্রাণে স্বীকার করাকেই ঈমান বলে। কোরআনের বাণীঃ
"নিশ্চয়ই ঈমানদার তো তারাই যারা আল্লাহ এবং তার রাসূলের (স এর প্রতি বিশ্বাস স্হাপন করে,অতপর তারা এতে সন্দেহ পোষণ করে না,এবং তাদের মাল ও জান দ্বারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে। ( )"
"নিশ্চয়ই আল্লাহর মসজিদ সমূহ তারাই আবাদ করে যারা বিশ্বাস স্হাপন করে আল্লাহর প্রতি,পরকালের প্রতি,এবং তারা নামাজ কাযয়ম করে,যাকাত আদায় করে,আর একমাত্র আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ভয় করে না। "(তাওবাহঃ )
"নিশ্চয়ই ঈমানদার তো তারাই যখন তাদের সামনে আল্লাহর কথা স্মরণ করা হয়,তখন আল্লাহর ভয়ে তাদের অন্তর প্রকম্পিত হয়ে উঠে।
"(আনফালঃ )
"নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা ঈমানদারদের থেকে জান্নাতের বিনিময়ে তাদের জান এবং মাল খরিদ করে নিয়েছেন। "(তাওবাহঃ )
"হে রাসুল আপনার রবের কসম তারা ততক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার হতে পারবে না,যতক্ষণ না তারা তাদের যাবতীয় কাজে আপনার ফায়সালাকে প্রশান্তিপূর্ণ মনে মেনে নিবে। "(নিসাঃ৬৫)
*ঈমান হালকা কোন জিনিস নয়,বরং এর ভারীত্ব অনেক বেশী। কোরআনের বাণীঃ
"মানুষ কি মনে করে আমি ঈমান এনেছি এ কথা বললেই তাকে ছেড়ে দেয়া হবে,অথচ তাকে পরীক্ষা করা হবে না ?"(আনকাবুতঃ০২)
*ঈমানের প্রতিফলন বাস্তব জীবনে থাকতে হবে। নিজের জীবন কোন পথে আছে তা পর্যালোচনা করতে হবে।
হাদীসের বাণীঃ
"যখন তোমাকে তোমার ভালো কাজে আনন্দ দিবে,এবং খারাপ কাজে ব্যথা দিবে বুঝতে হবে তুমি ঈমানদার । "
"সে ঈমানের প্রকৃত স্বাদ অনুভব করেছে যে আল্লাহ তায়ালাকে রব হিসেবে,ইসলামকে জীবন ব্যবস্হা হিসেবে,এবং মুহাম্মদ (স কে রাসুল হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছে। "
*দ্বিতীয় কাজটি হলো নেক আমল্। কোরআন ও হাদীসের প্রায় জায়গায়ই ঈমানের সাথে সাথে নেক আমল্ করার কথা বলা হয়েছে। কারণ নেক আমল ছাড়া ঈমানের যথাযোগ্য মূল্যায়ণ নেই।
উদাহরণ স্বরুপ বলা যায ব্যাংকে একাউন্ট ও টাকা জমা রাখার কথা,একটি ছাড়া অপরটি অচল। কোরআনের বাণীঃ
"তবে ঐ সকল লোক ব্যতীত যারা ঈমান এনেছে,নেক আমল করেছে তাদের জন্য রয়েছে অশেষ পুরষ্কার "(ত্বীনঃ০৬)
"ঈমানদারগণ সফলকাম হয়েছে,যারা তাদের নামাজে বিনম্র। .........."(মুমিনুনঃ১,২)
*কোন নেক আমল করার ক্ষেত্রে রাসুল (স এর জীবনাদর্শের প্রতি তাকাতে হবে। যদি রাসুল (স এর জীবনীতে কোনভাবেই সমর্থন পাওয়া না যায়, তাহলে যত ভালো কাজ হোক না কেন তা নেক আমল হবে না। কারণ কোরআনের বাণীঃ
"তোমাদের জন্য রাসুল (স এর জীবনেই রয়েছে সর্বোত্তম আদর্শ "(আহযাবঃ২১)
"রাসুল (স তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ কর,আর যা নিষেধ করেছেন তা বর্জন কর।
"( )
হাদীসের বাণীঃকেউ কোন ভালো কাজ করল অথচ এ ব্যাপারে আমার কোন বিধান নেই তাহলে তা প্রত্যাখাত।
*তৃতীয় কাজটি হলো তাওয়াসী বিল হাক্ব তথা সত্যের উপদেশ দেয়া। তাওয়াসী শব্দটি আরবী অসিয়্যত শব্দ থেকে নির্গত। অথৃ বিশেষ উপদেশ। এই জন্য মৃত ব্যক্তির মৃতু্্য পূর্ব মূহর্তে যেই উপদেশ দেয়া হয় সেটাকে বলা হয় অসিয়্যত।
কারণ এই ধরনের উপদেশে রয়েছে এক হৃদয়গ্রাহী প্রভাব্।
আর সত্যের উপদেশ মানেই হলো অসত্যের মুলোঃপাটন। কেননা সত্যও অসত্য এক সাথে চলতে পারে না। তাওহীদ ও শিরক আসতে পারে না একই প্লাটফর্মে। কারণ সূর্য উদিত হলেই অন্ধকারের পতন ঘটে।
কোরআনের বাণীঃ
" হে রাসুল আমি আপনার নিকট এই কোরআন এই কারণেই অবতীর্ণ করেছি যে আপনি মানুষদেরকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসবেন। "( )
*আর এই সত্যের ব্যপক প্রচার প্রসার করে সর্বোত্তম কথার অধিকারী হতে হবে। কোরআনের বাণীঃ
"আর তার কথার চেয়ে আর কার কথা উত্তম হতে পারে ,যে আল্লাহর দিকে আহবান করে এবং বলে নিশ্চয়ই আমি মুসলমানদের অন্তর্ভূক্ত্। "(হা-মীম সাজদাহ ৩৩)
........সত্য গোপন করা চলবে না। ক্রণ এটা মারাত্নক জুলমী কর্মকান্ড।
কোরআনের বাণীঃ
"আর তার চেয়ে বড় জালিম আর কে হবে যে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত সত্য সাক্ষ্যকে গোপন করে"( )
..........প্রথম দুটি কাজ ব্যক্তিগতভাবে করা গেলে ও তৃতীয় কাজটি তথা সত্যের উপদেশ দিতে হবে সঙঘবদ্ধভাবে। কারণ সত্যের উপদেশ দিতে থাকলে বাতিল শক্তি চাইবে এটাকে অস্তমিত করতে। কেননা এতে তাদের স্বার্থে আঘাত লাগা অনিবার্য। সেই জন্য সংঘবদ্ধতার চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে বাতিলের রক্তচক্ষুকে উপড়ে ফেলতে হবে। কোরআনের বাণীঃ
"তিনি তো সেই সত্তা যিনি তার রাসুলকে সত্য দ্বীন সহ পাঠিয়েছেন যাতে তাকে সকল মতাদর্শের উপর বিজয়ী করা যায়।
"(আস সফ ১১)
...............চতুর্থ কাজটি হলো একে অপরকে ধৈর্য ধারনের উপদেশ দেয়া। কারণ সত্যের উপদেশ দিতে থাকলে অবশ্যই বাতিলের তোপের মুখে পড়তে হবে। কেননা তারা সহজে সত্যকে মাথা পেতে নেবে না। আর এ ক্ষেত্রে অপপ্রচার,গালিগালাজ,তিরষ্কার,সংঘর্ষ হবে অনিবার্য। এ সকল ক্ষেত্রে পরষ্পর ধৈর্য্যের পাহাড় হিসেবে উপস্হাপিত হতে হবে।
সাহায্য চাইতে হবে আল্লাহর কাছে।
কোরআনের বাণীঃ
"আর তোমরা ধৈর্য্য ্বং সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রাথৃণা কর,নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা ধৈর্য্যশীলদের সাথেই আছেন। "(বাকারাহঃ )
..........মনে রাখতে হবে বাতিলের ভয়ে মসজিদে বসা থাকার নাম ধৈর্য্যধারণ নয়। বরং ময়দানে নেমে তাদের মোকাবিলা করে টিকে থাকাই প্রকৃত ধৈর্য্য।
*দারসের শিক্ষাঃ
১.সময়ের আবর্তনে গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে ক্ষতিগ্রস্হদের দলে শামিল হওয়া যাবে না।
২
২এর থেকে বাঁচতে হলে ঈমানের পাশাপাশি রাসুল(স এর প্রদর্শিত নেক আমল করতে হবে।
৩.সঙঘবদ্ধভাবে সত্যের দাওয়াত দিয়ে বাতিলের স্বপ্ন সাধ চুরমার করতে হবে।
৪. অনিবার্য সংঘর্ষের ফলে পরষ্পর ধৈর্য্যের পাহাড় হিসেবে উপস্হাপিত হতে হবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।