আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বহুমুখী আন্দোলন না করে সিস্টেমটাকেই পরিবর্তন করা হোক

জানি না কেন লিখি! তবু লিখি মনের খেয়ালে, পরিবর্তন করার মানসে, পরিবর্তিত হওয়ার মানসে। যদিও জানি সব ব্যর্থ হচ্ছে। তবুও আমি আছি সেদিনের সেই আলোকময় প্রত্যুষার আগমনের অপেক্ষায়

আমাদের দেশে বহুবিধ সমস্যার জন্য রাজপথে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন হয়। বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শিক্ষকগণ পথে নামেন, অনশন করেন। গার্মেন্ট কর্মীরা বেতন ভাতা সঠিক সময়ে দেওয়ার দাবিতে রাস্তায় নামেন, গাড়ি ভাঙচুর করেন, পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হোন।

পরিবহন শ্রমিকরা চাঁদাবাজি বন্ধের দাবিতে পরিবহন ধর্মঘট করেন। হকারদেরকে ফুটপাত থেকে উচ্ছেদ করা হলে হকাররাও রাস্তায় নেমে আসে এবং ক্ষেত্র বিশেষে পুলিশের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। সাংবাদিক হত্যার বিচার দাবিতে সাংবাদিকরা রাজপথ অবরোধ করেন, মানবন্ধন করেন। সরকারি চাকুরি প্রাপ্তিতে কোটা উঠিয়ে দেওয়ার জন্য চাকুরী প্রার্থীরা রাস্তা অবরোধ করেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে দিনের পর দিন রাস্তা অবরোধ করে রাখা হয়।

আবার বিচারে রায় কাঙ্খিত না হোলে আন্দোলন হয়। রায় বিপক্ষে গেলেও রাজনৈতিক কর্মীরা হরতাল ডাকে, গাড়ি ভাঙচুর করে, বোমা বিস্ফোরণ ঘটায়। শেয়ার বাজারে কেলেঙ্কারী ঘটিয়ে সর্বস্ব লুটে নেওয়ার অভিযোগে রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে ভুক্তভোগীরা। ডেসটিনি, যুবক ইত্যাদি হায় হায় কোম্পাণিগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ও গ্রাহকরা প্রতারিত হয়ে রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ অপসারণে আন্দোলন হয়।

আন্দোলন আর ক্যাম্পাসে সীমাবদ্ধ না থেকে গড়ায় রাজপথে। অর্থাৎ সর্বত্র অন্যায় ও অবিচারের প্রতিবাদে সব সময়ই একটা না একটা আন্দোল চলতেই থাকে। এর ফল হয় এই যে সারা বছর ধরে অস্থিরতা চলতে থাকে। ভোগান্তিতে ডুবে থাকে সাধারণ মানুষ। এটা শুধু যে আমাদের দেশেই হয়, তা নয়।

বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই এই আন্দোলন হচ্ছে। ইউরোপ আমেরিকায় বেকারত্ব বেড়ে যাওয়া ও অর্থনৈতিক বৈষম্যের প্রতিবাদে বড় বড় বিক্ষোভ হচ্ছে। স্বৈরাচারী শাসকদের বিরুদ্ধেও আন্দোলন হচ্ছে দেশে দেশে। কিন্তু যারাই আন্দোলন করেন, রাজপথে নামেন তাদের সকলকে একটা জিনিস ভালো করে বোঝা উচিত যে এইভাবে আন্দোলন করে কখনও দাবি পূরণ করা সম্ভব নয়। একটা মিটবে তো আরো একটা দাবী যুক্ত হবে।

দাবিদাওয়ার শেষ হবে না। সুতরাং আন্দোলনও থামবে না, মানুষের ভোগান্তিও শেষ হবে না। আমাদেরকে সমস্যার গোঁড়ায় যেতে হবে। এইসব সমস্যা আসলে একটা সিস্টেম বা ব্যবস্থার ফল মাত্র। মনে করুন, একটা গাছে খারাপ ফল হয়, কিংবা ঐ গাছে ফল হলে পোকায় ধরে।

আপনি যদি একে লাঠি দিয়ে আঘাত করে ফেলেও দেন, পরের বছর কিন্তু আবারো সে গাছে অনুরূপ খারাপ ফলই হবে। বার বার ফল ফেলে দিলেও কিন্তু ভাল ফল আসবে না। কারণ সমস্যায় ঐ গাছে। এর একমাত্র সমাধান হচ্ছে ঐ গাছের সঠিক চিকিৎসা করা কিংবা তা না করা গেলে উচিত হবে ঐ গাছকে উপড়ে ফেলে নতুন সুস্থ ও ভালো জাতের গাছ রোপন করা। আমরা বর্তমান সময়ে যে অস্থিরতা আর অশান্তি ভোগ করছি তা একমাত্র বর্তমানে প্রচলিত সিস্টেমের ফল।

এই সিস্টেমের অধীনে থেকে যদি কেউ আন্তরিকতার সাথে আপ্রাণ চেষ্টাও করে থাকে- শান্তি আসবে না। এই সিস্টেম এমন সব পরস্পর বিরোধি সিদ্ধান্তকে বৈধতা দিয়ে রেখেছে যে, বর্তমান পরিস্থিতিতে যা ঘটছে এর চেয়ে ভাল কিছু আশা করা আর বোকার স্বর্গে বাস করার মত। তাই এখন এর থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এসব বিচ্ছিন্ন আন্দোলন না করে উচিত এই সিস্টেম উৎখাতের জন্য একত্রিত হয়ে আন্দোলন করা।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.