হুইলচেয়ারে বসে গবেষণাকারী বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং
আজমাল হোসেন মামুন
প্রতিবন্ধকতা মানুষের মেধা ও ইচ্ছা শক্তিকে কখনও দমিয়ে রাখতে পারে না। সুযোগ ও সহযোগিতা পেলে অসাধ্য কে সাধন করতে পারে। সৃষ্টি করতে পারে জাতির জন্য নতুন নতুন আশ্চর্য বস্তু। স্টিফেন উইলিয়াম হকিং তাদের মধ্যে একজন। তিনি আধুনিক কালের বিশ্বের একজন নামকরা বিজ্ঞানী হিসেবে পরিচিত।
যার নাম বিজ্ঞানের জগতে আইজ্যাক নিউটন ও আইনষ্টাইনের সঙ্গে উচ্চারিত। তিনি মহাবিজ্ঞানী গ্যালিলিওর উত্তরসূরী হিসেবে তিন’শ বছর পরে ১৯৪২ সালে ৮ জানুয়ারী ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড নগরে জন্ম গ্রহণ করেন। তার বাবার নাম ফ্রাঙ্ক হকিং এবং মায়ের নাম ইসোবেল।
যখন তার বয়স মাত্র আট বছর, তখন তার মা-বাবা লন্ডনে চলে আসে। বাবার ইচ্ছা ছেলেকে সে সময়ের নামকরা স্কুল ওয়েস্টমিনিষ্টারে ভর্তি করবেন।
কিন্তু স্টিফিন রোগে আক্রান্ত হওয়ায় সেন্ট আলবানস স্কুলে ভর্তি করেন। ১৯৫৯ সালে ১৭ বছর বয়সে অক্সফোর্ডে পড়বেন বলে মন স্থির করেন। বাবা চায় ছেলে ডাক্তার হোক। কিন্তু স্টিফেন চান অঙ্ক নিয়ে লেখা-পড়া করতে। ভর্তির পরীক্ষায় পদার্থ বিদ্যার অল সাবজেক্টে সে একশ’র মধ্যে শতকরা পচানববই ভাগ নম্বর পেয়েছে।
বাবার উৎসাহে সে ভর্তি হল অক্সফোর্ডে। অক্সফোর্ডে পড়ার শেষ দিকে চলা-ফেরা করতে তার অসুবিধা হতে লাগল। ফলে ১৯৬২ সালে কেমব্রিজে সে মহাকাষ বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা কাজ আরম্ভ করে। সেখানে আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতা তত্ত্ব। স্বপ্ন ছিলো হয়েলকে শিক্ষক হিসেবে পাবেন।
কিন্তু হয়েল এদেশ-ওদেশ করে বেড়ান। তাই গবেষণা কাজ করলেন ডেনিস সিয়ামার কাছে। এদিকে তার শরীর খারাপের দিকে যাচ্ছে। ফলে আবার ফিরে এলেন কেমব্রিজে। হাসপাতালে ভর্তি করা হলো।
ডাক্তারেরা জানালেন তিনি মোটর নিউরন রোগে আক্রান্ত। এই রোগ হলে মস্তিষ্ক ও স্নায়ু ধীরে ধীরে নিঃসাড় হয়ে পড়ে। পেশি হয় অক্ষম। তবে মস্তিষ্কের কেন্দীয় ভাগ প্রাণশক্তিপূর্ণ থাকে। স্মৃতি শক্তি ঠিক থাকে।
সৃজনচিন্তা ঠিকই থাকে। মানুষ বেশি দিন বাঁচে না। দু’ থেকে তিন বছর বাঁচে।
তখন এ রোগের চিকিৎসা আবিষ্কৃত হয় নি। স্টিফিন হকিং-এর শরীরের অবস্থা দিন-দিন খারাপ হতে থাকে।
লাঠি ব্যতীত হাঁটতে পারছে না। তবুও গবেষণা কাজ চালিয়ে যান। তার গবেষণার ক্ষেত্র হচ্ছে তত্ত্বীয় পদার্থবিদ্যা। পদার্থ বিজ্ঞান জগতে তার তিনটি বিষয় সির্বজন পরিচিত। ‘নিউটন পদার্থ বিদ্যা’, ‘কোয়ানআম পদার্থ বিদ্যা’ এবং ‘আইনস্টাইনের আপেক্ষিকতা তত্ত্ব’।
১৯৬৭ সালে মহাকাশে ধরা পড়ে পালসার-এর অস্তিত্ব। পালসার থেকে আসে ‘ব¬্যাক হোল’-এর ধারণা। ব¬্যাক হোল নিয়ে তিনি কাজ করেছেন। নিউটনীয় পদার্থ বিদ্যা, কোয়ান্টাম পদার্থ বিদ্যা ও আপেক্ষিকতা তত্ত্ব কিছুতেই একসাথে মেলাবার নয়। তবুও ‘বিগ ব্যাকং’ তত্ত্ব আর কোয়ান্টাম তত্ত্বকে মেলাবার কথা স্টিফেনই ভেবেছেন সর্বপ্রথম।
উদ্ভাবিত হয়েছে তার হাতে ‘একত্রিতকরণ তত্ত্ব’। সব কিছুকে ব্যাখ্যা করবে এই তত্ত্ব।
মাত্র ২৩ বছর বয়সে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করলেন স্টিফেন হকিং। কিছুদিন পর বান্ধবী জেন কে বিয়ে করেন। ১৯৬৬ সালে তিনি লিখলেন গবেষণাপত্র ‘সিঙ্গুলারিটি ও স্পেসটাইমের জ্যামিতিক ধারণা’।
সম্মানিত হলেন অ্যাডাম পুরস্কারে।
তিনি বিজ্ঞানের বই লিখেছেন। প্রথম বই ‘দি লার্জ স্কেল স্ট্রাকচার অব স্পেস টাইম’, দ্বিতীয় বই ‘এ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম’ এবং তৃতীয় বই ‘ ব¬াক হোল ইউনিভার্স অ্যান্ড আদার এসেজ’ রেকর্ড সংখ্যক বাজারে বিক্রি হয়েছে। তিনি মোট ১২ টি সম্মানীয় ডিগ্রী অর্জন করেছেন। ১৯৮২ সালে সিবিই পুরস্কার পেয়েছেন এবং ১৯৮৯ সালে ‘কমপেনিয়ন অব অনারি’ খেতাবে ভূষিত হয়েছেন।
এছাড়াও তিনি অসংখ্য পুরস্কার অর্জন করেছেন।
লাঠি ছেড়ে ক্রাচ, ক্রাচ ছেড়ে হুইল চেয়ার নিয়েছেন। কিন্তু ব্যর্থ হন নি। ২০০৭ সালে তিনি ভ্রমণ করেছেন মহাশূন্যে শূন্য অভিকর্ষজ ত্বরণে। সহসাই তিনি মহাশূন্যে বড় ধরণের অভিযানে যাবেন।
তারই প্রস্তুতি হিসেবে। তারই প্রস্তুতি হিসেবে গত ২৬ এপ্রিল, ২০০৭ ইং তারিখে আটলান্টিক নামের নভোতরীতে চরে ২ ঘণ্টার ভ্রমণে বের হন। ভ্রমণ শেষে তিনি পৃথিবীতে ফিরে বলেন, শূন্য অভিকর্ষজ ত্বরণে অর্থাৎ ওজনহীন অবস্থাটা খুবই ছিলো চমৎকার। তিনি হুইল চেয়ারে চরে ভ্রমণে যান। যা বিশ্বের সাধারণ মানুষকে অবাক করেছে।
তিনি বর্তমানে কথা বলতে ও চলাফেরা করতে পারে না। তারপরেও জীবনের প্রতিবন্ধকতা নিয়ে পদে-পদে তার গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা আশা রাখি সৃষ্টিকর্তা তাকে দীর্ঘজীবি করুক।
লেখক-
আজমাল হোসেন মামুন
উন্নয়নকর্মী. ব্লগার ও সাংবাদিক
বিপিকেএস কমপ্লেক্স দক্ষিণখান, উত্তরা, ঢাকা-১২৩০।
মোবাইল নং-০১১৯১০৮৯০৭৫।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।