দূষলেন মিডিয়াকে
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে সাংবাদিকদের ডেকে মতবিনিময় সভা করার জন্য পাবনার জেলা প্রশাসন কর্মকর্তাদের তিরস্কার করলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম। গতকাল সোমবার জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে পাবনা পরিস্থিতি সম্পর্কে জেলা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রীর সংস্থাপন ও প্রশাসন বিষয়ক এই উপদেষ্টা। এ সময় তিনি পুরো ঘটনার জন্য মিডিয়াকে অভিযুক্ত করে বলেন, শাসক দলের সঙ্গে জেলা প্রশাসনের বিরোধ টিকিয়ে রাখার জন্য মিডিয়াই এককভাবে দায়ী। যা ঘটেনি, তাই কল্পনায় রঙ লাগিয়ে পরিস্থিতি জটিল করে তুলেছে মিডিয়া। তিনি আরো বলেন, জেলা প্রশাসনের পরীক্ষায় হামলায় আওয়ামী লীগ জড়িত নয়।
এ হামলায় ছাত্র ও যুবলীগের কর্মীরা জড়িত বলা হলেও তারা আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন নয়। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, জেলা প্রশাসনের সাথে যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল তা মিটে গেছে।
এইচটি ইমাম জেলা প্রশাসনের সাথে আওয়ামী লীগের সাংঘর্ষিক অবস্থা নিরসনে গতকাল পাবনায় আসেন। তার সাথে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট শামসুল হক টুকুও ছিলেন। তারা বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত জেলা প্রশাসন সম্মেলন কক্ষে রুদ্ধদার বৈঠক করেন।
বৈঠকে এইচ.টি ইমাম সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে সমস্ত ঘটনা ধৈর্য সহকারে শোনেন। এরপর তিনি সরকারি কর্মকর্তাদের নির্ভয়ে নিয়ম নীতি মেনে কাজ করার আহবান জানিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতি সম্পর্কে বলেন, দুই পক্ষেরই ভুল-ক্রটি হয়েছে। তবে সুধী সমাবেশের সংবাদ দেখে মনে হয়েছে জনপ্রশাসন ও আওয়ামী লীগ মুখোমুখি হয়েছে। তিনি জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে সমন্বয় করে ভিশন টুয়েন্টি ওয়ান বাস্তবায়নের উপর কর্মকর্তাদের জোর দেয়ার পরামর্শ দেন। তিনি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা ও যোগ্যতাকে প্রাধান্য দিয়ে জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশের বিষয়েও লক্ষ্য রাখতে বলেন।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু কর্মকর্তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, সন্ত্রাসী ঘটনায় মামলা হয়েছে, তা চলবে। দোষ পেলে কাউকে ছাড়া হবে না। রাজশাহী বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত কমিশনার স্বপন কুমার রায়ের সভাপতিত্বে সভায় আরো বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক ড.এএফএম মনজুর কাদির, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক বিজয় ভূষণ পাল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) সাইদুর রহমান, জেলা সেটেলমেন্ট অফিসার সেলিনা শাহাদত প্রমুখ।
সভায় সরকারি কর্মকর্তারা বিভিন্ন মিডিয়ায় সুধী সমাবেশে কান্নার যে খবর প্রকাশিত হয়েছে তা অস্বীকার করে বলেন, আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু কাঁদিনি। মিডিয়া ভুল তথ্য দিয়ে সংবাদ পরিবেশন করেছে।
সরকারি কর্মকর্তারা মিডিয়ার সংবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আরো বলেন, আমরা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি সেখানে আওয়ামী লীগের কোন নেতা-কর্মীর নাম ছিল না। সাংবাদিকরা আওয়ামী লীগকে জড়িয়ে মিথ্যা সংবাদ পরিবেশন করায় তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যেখানে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি সেখানে মিডিয়া ভুল তথ্য পরিবেশন করে বিভ্রান্ত করছেÑএটা কাম্য নয়। তিনি দেশকে এগিয়ে নিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে বলেন, পরীক্ষা কেন্দ্রে হামলার সংস্কৃতি নতুন নয়। সেদিন জঙ্গিরাই হামলা চালিয়ে পরীক্ষা পন্ড করেছে।
প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকরা স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে ঘটনার ১০ দিন পর আসার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনার পরপরই মামলা হয়েছে, ওসিকে ক্লোজড করা হয়েছে। আসামিদের আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পুলিশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছে। পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় আমরা এসেছি।
কান্নার বিষয়ে জেলা প্রশাসককে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি এ বিষয়ে নিরুত্তর থাকেন।
তবে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সুধী বৈঠকে সাংবাদিকদের ডেকে আনায় ঊর্ধ্বতন কতৃপক্ষ জেলা প্রশাসকের উপর নাখোশ হয়েছেন। এছাড়া বৈঠকে পাবনার বর্তমান জেলা প্রশাসকের বদলীর দাবি উঠেছে বলে জানা গেছে। এর জবাবে সরকারি বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন এইচটি ইমাম। ব্রিফিং শেষে দুই নেতা সার্কিট হাউসে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হন। এ বৈঠকে নেতৃদ্বয় জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে আর সভা-সমাবেশ না করার জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন বলে জানা গেছে।
পাবনা সদরের ইউএনও বদলি
এদিকে বিডিনিউজ জানায়, পাবনা সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুল আলীমসহ প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তার পদে রদবদল করা হয়েছে। সোমবার সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের পৃথক আদেশে এসব রদবদল করা হয়। পাবনা সদরের ইউএনও আবদুল আলীমকে ভোলা মনপুরার ইউএনও করা হয়েছে।
এছাড়া অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (এলপিআর) থাকা জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা (এনএসআই) অধিদপ্তরের প্রাক্তন উপ-পরিচালক আওলাদ হোসেন ও আবুল খায়েরকে একই পদে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কাজে যোগ দেয়ার দিন থেকেই এ নিয়োগ কার্যকর হবে।
জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের উপ-পরিচালক পদে প্রেষণে কর্মরত তথ্য ক্যাডারের কর্মকর্তা বজলুর রহমানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। পূর্ব কর্মস্থলে ফেরত পাঠাতে তার চাকরি তথ্য মন্ত্রণালয়ে ন্যস্ত করা হয়।
এছাড়া বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) সিনিয়র সহকারী সচিব সিদ্দিকুর রহমানকে সাভারের লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের (বিপিএটিসি) উপ-পরিচালক পদে প্রেষণে নিয়োগ দেয়া হয়েছে
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।