আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দাগনভূঞার উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতনের কাণ্ড!

mojnu@ymail.com

ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি দিদারুল করিব রতন অনৈতিক সুবিধা আদায় করতে না পেরে এক নিরপরাধ কানাডা প্রবাসীকে হয়রানির অপচেষ্টা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে গত দুইদিন দাগনভূঞায় তোলপাড় চলছে। জানাগেছে, শুক্রবার রাতে উপজেলার আলাইয়ারপুর গ্রামের কানাডা প্রবাসী সিরাজ উল্যাহকে (৪০) উপজেলা চত্ত্বরে ইটভাটার এক মহিলা শ্রমিক দিয়ে আটকের নাটক সাজিয়ে পুলিশে খবর দেন উপজেলা চেয়ারম্যান। এসময় আটকাবস্থায় প্রবাসী সিরাজ উল্যাকে ছেড়ে দেয়ার শর্তে তার নিকট একটি মহল পাঁচলাখ টাকাও দাবি করেছে বলে অনুসন্ধানে জানাগেছে। খবর পেয়ে ফেনী পুলিশ সুপার মোঃ ইমাম হোসেন দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে অনুসন্ধান করে দেখেন ওই প্রবাসী নির্দোষ।

পরে তিনি প্রবাসী ও আটককৃত মহিলাকে থানা থেকে ছেড়ে দেন। এতে এলাকার সূধী সমাজের কাছে পুলিশ সুপার মোঃ ইমাম হোসেন প্রশংসিতও হয়েছেন। এলাকার লোকজন এ ঘটনার সঠিকভাবে তদন্তকরে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবিও জানিয়েছে। এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতনের দেয়া তথ্যমতে কানাডা প্রবাসীকে ধরে নেয়ার পর পুলিশ সুপার নিজে উপস্থিত হয়ে তাকে ছেড়ে দেয়ায় নাখোশ হয়েছে দিদার। তিনি এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক ও চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি’র কাছে পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে নালিশও করেছেন বলে নোয়াখলী ওয়েবকে জানিয়েছেন।

এছাড়া এ ঘটনার সঙ্গে দাগনভূঞা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন আরা বেগমের গাড়ি চালক আহসান উল্যাহ ও বিআরডিবির নৈশ প্রহরী আনোয়ার হোসেনকে জড়িত করার চেষ্টাও করছেন বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। প্রবাসী সিরাজ উল্যাহ নোয়াখালী ওয়েবকে জানান, আমাদের পরিবারের অনেকেই কানাডাতে বসবাস করে। এরমধ্যে কিছুদিন আগে আমরা বেড়াতে দেশে আসি এবং দাগনভূঞা বাজারে একটি বহুতল ভবন নির্মাণে কাজে হাত দেই। এ ভবন নির্মাণকে কেন্দ্র করে অনেকে আমাদের পরিবার থেকে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করে আসছে। পরে কোন সুবিধা না পেয়ে আমাদের পরিবারকে হেয় করার জন্য পাঁয়তারা করতে থাকে।

তিনি বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় আমি অন্যান্য কয়েকজনসহ উপজেলার সামনে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এসময় কানাডা থেকে আমার এক ভাবী ফোন করলে আমি উপজেলা চত্ত্বরে বিআরডিবি মিলনায়তনের সামনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলি। কিছুক্ষণ পর বিদ্যুৎ চলে গেলে অন্ধকারের মধ্যে কয়েকজন পুলিশ এসে পাশ্ববর্তী স্থান থেকে একজন অপরিচিত মহিলাকে আটক করে এবং আমাকেসহ থানায় যেতে বলে। পরে ওখান থেকে থানায় নেয়ার আগে আমাকে ছেড়ে দেয়ার শর্তে অপরিচিত লোকজন আমার কাছে পাঁচলাখ টাকাও দাবি করেন। এ ব্যাপারে দাগনভূঞা থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিজান মোঃ ফেরদৌস জানান, উপজেলা পরিষদের অভ্যন্তরে বিআরডিবি ভবন এলাকায় অস্ত্রধারী ক্যাডার রয়েছে মর্মে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তিনি ফোর্স নিয়ে বিআরডিবি এলাকায় অভিযান চালান।

এসময় সিরাজ নামের প্যান্ট-শার্ট পরা যুবক ও বোরকাপরা ইটভাটার শ্রমিক মোক্তার আক্তারকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। পরে সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষ থানা থেকে তাদেরকে ছেড়ে দেন। তিনি তখন কর্তব্য কাজে থানার বাইরে ছিলেন। এদিকে ফেনীর পুলিশ সুপার মোঃ ইমাম হোসেন নোয়াখালী ওয়েবকে জানান, একজন প্রবাসীকে কিছু চি‎হ্নিত লোক ব্লাকমেইলিং করছে খবর পেয়ে আমি পুলিশ সুপার হিসেবে বসে থাকতে পারি না। তাই খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে যাই।

সেখানে ঘটনার বিবরণ শুনে মনে হয়েছে ওই প্রবাসী নির্দোষ এবং প্রতিহিংসার শিকার। তিনি বলেন, যেহেতু আমার কাছে মনে হয়েছে প্রবাসী নির্দোষ তাই আমি তাদের ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছি। এতে কেউ নাখোশ হলে আমার কিছু করার নেই। এলাকাবাসী সূত্রে জানাগেছে, উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন বিভিন্ন কারণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি চালক আহসান উল্যাহ ও বিআরডিবির নৈশ প্রহরী আনোয়ার হোসেন সহ্য করতে পারছেন না। তাই তিনি এদেরকে অন্যত্র বদলীর জন্য উঠেপড়ে লেগেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সূত্র জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় কানাডা প্রবাসী সিরাজ ও এ দুই কর্মচারীকে ফাঁসানোর জন্যই চেয়ারম্যান দিদার এ ফাঁদ পাতেন। এদিকে উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল করিব রতন উল্লেখিত অভিযোগ অস্বীকার করে নোয়াখালী ওয়েবকে বলেন, বিআরডিবি অফিসে অনৈতিক কর্মকান্ডের খবর পেয়ে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলেছিলাম। পুলিশ সেখান থেকে সিরাজ ও একজন মহিলাকে আটক করে থানায় নিয়ে ছেড়ে দেয়। তিনি বলেন, তার দেয়া তথ্যমতে প্রবাসীকে আটক করা হলেও তাকে (দিদার) না জানিয়ে ছেড়ে দেয়ায় তিনি পুলিশের ডিআইজিসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে ফেনীর পুলিশ সুপার মোঃ ইমাম হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান দিদার নিজেকে উপজেলার প্রধান কর্তা দাবি করে বলেন, আমি চাইলেই ড্রাইভার ও নৈশ প্রহরী যে কোন মুহূর্তে বদলী করতে পারি।

নাটক সাজানোর প্রয়োজন হয় না। তিনি ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে থানায় পুলিশ সুপারের আকষ্মিক উপস্থিতি এবং আটককৃতদের ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি রহস্যজনক বলে মন্তব্য করেন। এ ছাড়া এ ঘটনার সঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি চালক আহসান উল্যাহ ও বিআরডিবির নৈশ প্রহরী আনোয়ার হোসেন জড়িত বলেও তিনি দাবি করেন। তবে, এ প্রসঙ্গে দাগনভূঞার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহীন আরা বেগম স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেন, তার ড্রাইভারের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ভিত্তিহীন। এরবেশি তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

তথ্যসূত্র: নোয়াখালী ওয়েব- Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।