আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাতিসংঘে ইরানি প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদের ভাষণ : ৯/১১’ হামলা মার্কিন ষড়যন্ত্র : যুক্তরাষ্ট্রসহ ৩২ দেশের ওয়াকআউট

বেচে আছি
জাতিসংঘে ইরানি প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদের ভাষণ : ৯/১১’ হামলা মার্কিন ষড়যন্ত্র : যুক্তরাষ্ট্রসহ ৩২ দেশের ওয়াকআউট নাইন-ইলেভেনের হামলা ছিল আমেরিকারই ষড়যন্ত্রের অংশ। কেবল ইসরাইলকে রক্ষা করতে তারা এটা করেছিল। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনে বক্তৃতাকালে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ একথা বলেন। ইরানি প্রেসিডেন্টের এই বোমা ফাটানো বক্তৃতায় জাতিসংঘ সম্মেলনে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে দেয়া এই বক্তব্যে আলোচনার ঝড় উঠেছে বিশ্বব্যাপী।

আহমাদিনেজাদের এই বক্তব্যের প্রতিবাদে জাতিসংঘ সম্মেলন থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ৩২টি পশ্চিমা দেশের প্রতিনিধিরা ওয়াক আউট করেছেন। তবে ইরানের প্রেসিডেন্টের বক্তৃতার সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সম্মেলন কক্ষে ছিলেন না। ওবামা ইরানি প্রেসিডেন্টের বক্তৃতার আগেই বক্তৃতা দিয়ে সম্মেলন কক্ষ ত্যাগ করেন। ওবামা জাতিসংঘে তার বক্তৃতায় আলোচনার মাধ্যমে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বিরোধ নিরসনের প্রস্তাব দেন। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৬৫তম অধিবেশনের উদ্বোধনী দিনে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আলোচনার মাধ্যমে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সংক্রান্ত বিরোধ নিরসনের প্রস্তাব দেয়ার অব্যবহিত পরে ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল ও ইহুদিবাদের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন।

তার বক্তব্যে ৯/১১’র হামলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দিকে অঙ্গুলি নির্দেশ করে বলেন, মার্কিন সরকারের বিচ্ছিন্ন কিছু অংশ এ হামলায় জড়িত ছিল। একটি তত্ত্ব রয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ভেতরে একটি অংশ অবনতিশীল মার্কিন অর্থনীতিকে রক্ষা, মধ্যপ্রাচ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ জোরদার এবং ইহুদিবাদী সরকারকে (ইসরাইল) বাঁচাতে এই হামলা চালিয়েছিল। তিনি বলেন, আমেরিকার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ এবং অন্যান্য দেশ ও রাজনীতিকরা তার বক্তব্যের সঙ্গে একমত পোষণ করেন। টুইন টাওয়ারে ওই হামলাকে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান ও ইরাকে আক্রমণের অজুহাত বলেও উল্লেখ করেন। বক্তৃতায় ইরানের প্রেসিডেন্ট ওয়াশিংটন, পুঁজিবাদ এবং পুরো বিশ্বব্যবস্থারও সমালোচনা করেন।

এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের কিছু কার্যক্রমকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। এসব সমালোচনায় কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা না গেলেও ১১ সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে চক্রান্তকারী বলায় সভাকক্ষে উত্তেজনা দেখা দেয়। ইরানের প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদের এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। এই বক্তব্যের প্রতিবাদে যুক্তরাষ্ট্রসহ ৩২টি দেশের প্রতিনিধিরা অধিবেশন থেকে ওয়াকআউট করেন। ওয়াকআউটে অংশ নেয়া দেশগুলোর মধ্যে ব্রিটেন, সুইডেন, বেলজিয়াম ও স্পেনসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, উরুগুয়ে এবং কোস্টারিকাও ছিল।

তবে তাদের ওয়াকআউট ইরানি প্রেসিডেন্টের উত্তপ্ত বক্তব্যে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। বরং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র ক্ষমতাধর দেশগুলোর প্রতিবাদের মুখেও আহমাদিনেজাদ বক্তব্য চালিয়ে যান। তিনি বলেন, নাইন-ইলেভেনের হামলায় ৩ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে, যার জন্য আমরা শোকাহত; কিন্তু ইরাক ও আফগানিস্তানে মার্কিন হামলায় এ পর্যন্ত হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে আরও লাখ লাখ মানুষ। রাষ্ট্র দুটিতে সংঘর্ষ এখনও চলমান বলে এ সংখ্যা আরও বাড়বে। প্রসঙ্গত, ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দফতর থেকে মাত্র চার মাইল দূরে অবস্থিত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার (টুইন টাওয়ার), ওয়াশিংটন পেন্টাগন ও পেনসিলভেনিয়ায় বিমান হামলায় প্রায় ৩ হাজার লোক মারা যায়।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কয়েক কর্মকর্তার তীব্র সমালোচনা করে আহমাদিনেজাদ বলেন, তারা পরমাণু জ্বালানিকে পরমাণু অস্ত্রের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেন। এতে সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশনের পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে তিনি যে চাপের মুখোমুখি হয়েছেন, তা তিনি বলতে চান না। তিনি এখনও পরমাণু ইস্যু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনায় রাজি বলে জানান। আগামী বছর সন্ত্রাসবিরোধী এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করার উদ্যোগের কথা জানিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ওই বছরই হবে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ বছর।

তিনি ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বিষয়ে সম্প্রতি জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক এবং আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি কমিশনের কাছে জমা দেয়া তার বিবৃতি সম্পর্কেও কথা বলেন। আহমাদিনেজাদ ভোগবাদ ও পুঁজিবাদের সমালোচনা করে বলেন, বিশ্বশান্তির জন্য ধর্মীয় অনুশাসন মেনে জীবন-যাপন করতে হবে। এক্ষেত্রে তিনি হজরত মুহাম্মদ (স.)-এর আদর্শের কথা উল্লেখ করেন। তিনি ফ্লোরিডার যাজকদের মুসলমানদের পবিত্র গ্রন্থ কোরআন শরিফ পোড়ানোর পরিকল্পনার কঠোর সমালোচনা করে কোরআন-বাইবেল উভয় ধর্মগ্রন্থের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। ইরানের প্রেসিডেন্ট বিভিন্ন ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করলেও তিনি পরমাণু ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহ দেখিয়েছেন।

জাতিসংঘ সম্মেলনে তার আগে বক্তৃতা দেয়া মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা উত্থাপিত আলোচনার মাধ্যমে ইরানের পরমাণু বিরোধ নিরসন প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে আহমাদিনেজাদ আগামী অক্টোবরেই এ আলোচনা শুরু হতে পারে বলে মন্তব্য করেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার বক্তৃতার বড় অংশে মধ্যপ্রাচ্য সমস্যা নিয়ে কথা বলেন। তিনি মধ্যপ্রাচ্য সমস্যা সমাধানের জন্য বিশ্ব নেতৃত্বের সর্বশক্তি নিয়োগ করার আহ্বান জানান। মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠায় চলমান মার্কিন উদ্যোগকে সফল করার আহ্বান জানিয়ে বারাক ওবামা বলেন, এই উদ্যোগ ব্যর্থ হলে ফিলিস্তিনিরা যেমন স্বাধীন রাষ্ট্র পাবে না, তেমনি ইসরাইলিদের থাকবে নিরাপত্তা ঘাটতি। মার্কিন প্রেসিডেন্ট এ সময় আলোচনার স্বার্থে অধিকৃত অঞ্চলে বসতি নির্মাণ বন্ধের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য ইসরাইলের প্রতি আহ্বান জানান।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রকে আক্রমণ করে ইরানি প্রেসিডেন্টের ওই বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিশ্বনেতারা। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ৯/১১’র হামলার পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত থাকার বিষয় ইরানের প্রেসিডেন্টের দাবিকে ‘জঘন্য’ এবং ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে অভিহিত করেছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বিভিন্নম্ন দেশের মানুষ জাতিসংঘ অধিবেশনে আহমাদিনেজাদের অংশগ্রহণের প্রতিবাদ জানিয়েছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ কার্যালয়ের সামনে বেশকিছু লোককে আহমাদিনেজাদের অংশগ্রহণের প্রতিবাদ করতে দেখা গেছে। তাদের হাতে ব্যানারে লেখা ছিল ‘আহমাদিনেজাদ একজন সন্ত্রাসী’
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.