জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র সম্পর্কিত আন্ডার সেক্রেটারী জেনারেল জিয়ান চন্দ্র আচার্য জাতিসংঘ ফোরামে মতামত ব্যক্তকালে অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বলেছেন, 'রাজনৈতিক অঙ্গিকারের প্রতি আপামর জনতার আস্থা রচনা এবং সরকারের নীতি-নিদ্ধারকদের প্রচন্ড আগ্রহ বিদ্যমান থাকায় শতপ্রতিকূলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এমডিজির প্রায় সবকটি অর্জন কিংবা অর্জনের পথে রয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন পরিক্রমায় বাংলাদেশ আজ মডেল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। '
সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য (এমডিজি) অর্জনে বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা জাতিসংঘ ফোরামে বিস্তৃত করার অভিপ্রায়ে ১৫ নভেম্বর অপরাহ্নে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে বিশেষ একটি সভা হয়।
এতে মূল বক্তা ছিলেন আন্ডার সেক্রেটারী জেনারেল জিয়ান চন্দ্র আচার্য এবং অতিথি বক্তা ছিলেন বাংলাদেশের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চেৌধুরী। প্যানেলিস্ট ছিলেন ইকসকের প্রেসিডেন্ট নেস্টার অসরিয়ো লন্ডনো এবং জাতিসংঘে ইউরোপিয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের প্রধান থমাস মায়ার-হার্টিং।
সমগ্র অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ছিলেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত ড. এ কে এ মোমেন।
সকলের বক্তব্য শেষে উপস্থিত রাষ্ট্রদূতগণের পক্ষ থেকে সোমালিয়ার স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এলমি আহমেদ দুয়াল প্যানেলিস্টদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন রাখেন,'বিশ্বব্যাপী মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ এমডিজির অধিকাংশই অর্জনে সক্ষম হয়েছে কীভাবে? এর নেপথ্যে কী মন্ত্র কাজ করেছে?' জবাব দেন আন্ডার সেক্রেটারী জেনারেল মি. আচার্য। তিনি এমডিজি অর্জনে স্বল্পোন্নত দেশের মধ্যে বাংলাদেশ শীর্ষে রয়েছে তা উল্লেখ করে বলেন, 'এটি সম্ভব হয়েছে দেশটির নেতৃত্ব প্রদানকারী রাজনৈতিক শক্তির একান্ত আগ্রহে এবং সে আগ্রহে সম্মিলন ঘটেছে সমগ্র জনগোষ্ঠি এবং প্রশাসনের। এটি হচ্ছে রহস্য কথা। ' মি. আচার্য উল্লেখ করেন, 'একইভাবে সারাবিশ্বের টেকসই উন্নয়নের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাতে পারস্পরিক আস্থা ও সহযোগিতার দিগন্ত বিস্তৃত করতে হবে।
'
এ সময় ফ্লোর নিয়ে বাংলাদেশের স্পিকার উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, 'বিগত ৫ বছরে বাংলাদেশের সরকার এবং সমগ্র জনগোষ্টির উন্নয়নের প্রত্যাশা অর্জনে আন্তরিক উদ্যোগের কথা জাতিসংঘ ফোরামে উচ্চারিত হচ্ছে, এটি বাঙালির এগিয়ে চলার ক্ষেত্রে পাথেয় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশে দারিদ্য বিমোচনের পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা বলয় রচনায় বর্তমান সরকার সুদূর প্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ' স্পিকার বলেন, 'সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ (এমডিজি) এর ৮টি সেক্টরেই বাংলাদেশের অগ্রগতি সকলের চেয়ে ভালো। ' তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠির প্রতিনিধিত্ব করেন নারীরা। বিরাট এই জনগোষ্ঠির উন্নয়ন ছাড়া বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন চিন্তা করা সম্ভব নয় জেনেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সমগ্র প্রশাসন থেকে নারী শিক্ষা বিস্তারে ঐতিহাসিক পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
শিক্ষিত হয়ে কেউ যাতে কর্মহীন না থাকেন সে ব্যাপারে কর্মসংস্থানের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রসার ঘটানো হয়েছে। গার্মেন্ট সেক্টরে যারা কাজ করছেন তার ৮৫% হলেন মহিলা। এই শ্রমিকদের সিংহভাগই প্রত্যন্ত অঞ্চলের একেবারেই গরিব পরিবারের সদস্য। তারা এখন উপার্জনের মাধ্যমে গরিবের চেয়েও গরিব পরিবারগুলোতে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন ডেকে এসেছেন। এসব পরিবারের শিশুরা এখন কাপড় পরে স্কুলে যাচ্ছে।
' শিক্ষার আলো প্রবেশ করার সাথে সাথে ঐ পরিবারে স্বাস্থ্য সচেতনা সৃষ্টি হচ্ছে। মানুষ হিসেবে নিজের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হচ্ছেন এবং জাতীয় রাজনীতির আবর্তেও তারা জড়িয়ে পড়ছেন'-মন্তব্য স্পিকারের।
এমডিজি অর্জনের পরিসংখ্যান উল্লেখকালে স্পিকার বলেন, '১৯৯০ সালে বাংলাদেশে দারিদ্রসীমার নীচে বসবাসরকারী মানুষের সংখ্যা ছিল ৫৬.৭%। এখন সেটি কমে ২৬% হয়েছে। মাতৃ প্রসূতি কমেছে।
শিশু মৃত্যুরও হার কমেছে। '
অনুষ্ঠানের মডারেটর রাষ্ট্রদূত ড. এ কে মোমেন এ সময় উল্লেখ করেন, 'ভুলে গেলে চলবে না যে, ১৯৭১ সালে স্বল্পোন্নত রাষ্ট্রেও সংখ্যা ছিল ২৫। বর্তমানে তা বেড়ে ৪৯ হয়েছে। এখনও এই ৪৯ দেশের ৪৪০ মিলিয়ন মানুষ চরম দারিদ্যকে সঙ্গি করে বেঁচে আছেন। ' রাষ্ট্রদূত মোমেন উল্লেখ করেন, গরিব দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে উন্নত রাষ্ট্রগুলো আর্থিক সহায়তার একটি হার নির্ণয় করা হয়েছে।
সেটি হচ্ছে উন্নত দেশের গ্রস ইনকামের ০.৭ ভাগ স্বল্পোন্নত রাষ্ট্রেও জন্যে প্রদান করার। জাতিসংঘের এ কর্মসূচির নাম হচ্ছে 'অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট এ্যাস্ট্যিান্স' (অডিএ)। ২০১২ সালে অডিএ'র আওতায় স্বল্পোন্নত দেশের কল্যাণে ধনী দেশগুলোর দেয়ার কথা ৩০০.৬ বিলিয়ন ডলার। সে স্থলে দেয়া হয়েছে ১২৫.৯ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ অর্ধেকেরই কম।
' এভাবে ধনী-গরিবের ব্যবধান ঘূচানোর পরিকল্পনা কতটা বাস্তবায়ন ঘটানো সম্ভব-প্রশ্ন রাখেন ড. মোমেন।
স্পিকার তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন, 'উন্নয়ন সহযোগীরা আমাদেরকে ডিউটি ফ্রি, কোটা ফ্রি সুবিধা দেয়ার কথা। তারও প্রতিফলন তেমন একটা ঘটেনি। '
২০১৫ সালে এমডিজি'র মেয়াদ শেষ হবে। এমডিজির মধ্য দিয়ে বিশ্ব কতটা এগিয়েছে তা নিয়ে এ বিশেষ সভায় আলোকপাত করা হয় এবং এমডিজি পরবর্তী সময়ে কী ধরনের বিশ্ব দেখতে চায় জাতিসংঘ সে প্রসঙ্গে আন্ডার সেক্রেটারী জেনারেল মি. আচার্য বলেন, 'টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য' (এসডিজি) অর্জনে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ যেভাবে কাজ করছে তাকে অনুসরণ করা যেতে পারে অর্থাৎ সমগ্র জনগোষ্ঠিকে উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্ত করতে হবে।
নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করতে হবে। '
এ সময় ইকসকের প্রেসিডেন্ট নেস্টার অসরিয়ো বলেন, 'বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা, সরকার দলীয় উপ-নেতা, পররাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আরো অনেকেই হচ্ছেন মহিলা। নারী ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনন্য এক উদাহরণ। পাশাপাশি তারা কণ্যা শিশুর উচ্চ শিক্ষার জন্যেও বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ' এমডিজি অর্জনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের এ সাফল্য ইউরোপের অনেক দেশে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে জানান ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের নেতা টমাস হার্টিং।
স্পিকার ড. শিরিন জাতিসংঘে আন্ত পার্লামেন্টারিয়ান গ্রুপের সম্মেলনে যোগদানের জন্যে ১২ নভেম্বর নিউইয়র্কে এসেছেন। তার সাথে রয়েছেন সরকার দলীয় এমপি সাবের হোসেন চেৌধুরী।
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।