আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

Size does matter

চুপ!

কারাতে শুরু করেছি মাত্র দু'দিন হলো, সকালে দোজোতে গিয়ে দেখি মস্ত এক তালা। কী করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না, দেখি একটা ছেলে অপেক্ষা করছে আমারই মতো। মনে পড়ল ছেলেটাকে গত দুদিন দেখেছি- কলেজ ইউনিফর্ম পরা, আমারই মতো নতুন ভর্তি হয়েছে। ও জানাল গত দুদিনই ও সকালে তালা দেখছে (আমি বিকেলে গিয়েছিলেম এর আগে, তাই জানতাম না)। অপেক্ষার সময়ে ওর কাছে দোজোর খোঁজ-খবর নিচ্ছিলাম, ওদের কারো ফোন নম্বর আছে কী না- এইসব।

যেহেতু আগের দিন কলেজ ইউনিফর্ম পরা দেখলাম, বুঝলাম আমার হাঁটুর সমান বয়েস- তুমি ছাড়া আপনি বলার কোন মানে নেই। ধরলাম পিচ্চিটার নাম ত আর আমি ম; কথোপকথন ছিল অনেকটা এই রকমঃ মঃ সকালে তো হলো না, তুমি কি বিকেলে আসবে প্র্যাকটিস করতে? তঃ হু, আসবো। মঃ তোমার কন্টাক্ট নম্বরটা আমি নিয়ে রাখি, সন্ধ্যায় ফোন করে জেনে নিব কাল সকালে প্র্যাকটিস হবে কি না। (কেমন যেন ইতস্তত করে ফোন নম্বরটা দিল, কী ভাবল পিচ্চি কে জানে!) বাসা কোথায় তোমার? তঃ বকশী বাজার। মঃ ও, তাহলে তো কাছেই।

কোন কলেজে পড়? রাইফেলস পাবলিক? তঃ হু। সকালে আসাটা সমস্যা হয়ে যায়, পড়াশুনা থাকে- আবার বিকেলে কলেজ থেকে আসতে আসতে দেরী হয়ে যায়। মঃ আমার পক্ষে তো বিকেলে আসা একেবারেই সম্ভব না। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে আমরা নীচে নামছি, চলে যাব। তঃ তোমার বাসা কোথায়? ( খাইসে!! এ আমারে 'তুমি' কয় কেন? এ কি ভাবসে আমিও ইন্টারে পড়ি নাকি তার থেইকাও ছোট!!) মঃ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারে।

(একটু ভাবের সাথে কইলাম, যদি একটু আঁচ করতে পারে!! আর আল্লাহ আল্লাহ করছিলাম যেন ও আমাকে জিজ্ঞেস না করে আমি কী করি। ) তঃ ও আচ্ছা! তাহলে তো আমাদের বাসার কাছাকাছিই। (কোন বিকার নাই, মনে হয় ভাবসে আমি কোন টিচারের মাইয়া ) মঃ হুমম...তা বটে। (এইবার সে সবচেয়ে মোক্ষম প্রশ্নটা করে বসল ) তঃ তুমি কোন স্কুলে পড়? (হাসব না কাঁদব বুঝতে পারলাম না! ভার্সিটি না, কলেজ না, এক্কেবারে স্কুলে নামায়া দিল!! আমি এরে কী উত্তর দিব! সত্য কথা বললে এর হার্টে ছোটখাট একটা এটাক হয়ে যেতে পারে আর মিথ্যা বললে তো আরো সমস্যা- একই দোজোতে কারাতে করছি, কোন না কোনদিন ও সত্যটা জানতে পারবে, তখন তো আরো লজ্জা পাবে!) মঃ আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াই। (দেখলাম, পিচ্চিটা ছিটকে কয়েক সিঁড়ি পার হয়ে গিয়ে ঘুরে তাকাল আমার দিকে, মনে হয় যাচাই করছিল- এতক্ষণ সে যার সাথে কথা বলছিল সে আর আমি একই কি না!) চুপ হয়ে গেল ছেলেটা, আমিও চুপ- ওকে কীভাবে সহজ করা যায় তাই ভাবছিলাম।

দেখলাম, সে আমি যা ভেবেছিলাম তার চেয়েও স্মার্ট। একটু পর সে নিজেই বলল- তঃ দেখে তো মনে হচ্ছে না, স্টুডেন্টরা কনফিউজড হয় না? (পিচ্চি দেখি ভাববাচ্য চালাচ্ছে!) মঃ হা হা হা! আমি কয়েকদিন আগেই ছাত্র ছিলাম, তাই ছাত্ররা সবাই আমাকে চেনে; আর যারা নতুন ভর্তি হবে, তারা তো আমাকে শিক্ষক জানবে শুরু থেকেই। অন্য ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্টরা না জানলেও কোন সমস্যা নেই। তঃ তারপরেও......দেখে তো একদমই মনে হয় না, মনে হয় ক্লাশ এইট/নাইন। (আল্লাহ! আমারে উঠায়ে নাও।

এত্ত অপমানও আমার কপালে ছিল!) এর আগেও এরকম ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু এই লেভেলে না যা আমি এক ধাক্কায় ক্লাশ এইটে চলে গেলাম! এবারই কেন যেন একটু মন খারাপ হল- আমার কি তাহলে কিছু করা উচিত!! গেট আপ, ড্রেস আপ কিছু বদলানো উচিত? না কি ওয়েট বাড়ানো উচিত? হাইট তো আর বাড়াতে পারবো না (আমার থেকে দু ইঞ্চি খাট আমার বন্ধুকে তো কেউ এত ছোট ভাবে না!)। চেহারায় তো অন্তত ছাপ থাকার কথা বয়সের, সমস্যা কি আমার জিন্স আর ফতুয়া? অফিস গিয়েই ধরলাম সজীব ভাইকে- 'ভাইয়া, সত্যি করে বলেন তো - আমাকে দেখলে ঠিক কী মনে হয়? মানে কত বয়স বা কী করি বলে মনে হয়? (অফিসে আমি সালোয়ার-কামিজ পরে যাই, জিন্স-ফতুয়া না- তাই একটু আশা যে ভাল কিছু শুনতে পারব। ) সজীব ভাই হাসতে হাসতে গম্ভীর হয়ে বলল- তোমাকে দেখলে মনে হয় তুমি সর্বোচ্চ মেট্রিক পাস করস। ধরণী দ্বিধা হও। আমি তোমার গর্ভে বিলীন হয়ে যাই।

(অফটপিকঃ কাহিনীটা লেখা- মন খারাপ হলে যেন আমি পড়ে হাসতে পারি। )

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।