আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভূমিকম্পে আতঙ্কিত নয় সচেতন হোন


সময়ের আলোচিত বিষয় ভূমিকম্প। ঈদের আনন্দে কিছুটা হলেও দুশ্চিন্তা তৈরি করেছে ঈদের রাতে একাধিক ভূমিকম্প—যেগুলোর একটির উৎপত্তিস্থল ছিল বাংলাদেশের ভেতরেই। স্থানভেদে ভূমিকম্পগুলোর মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ২.৫ থেকে ৪.৮। এই তিনটি ভূমিকম্পে উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষতি না হলেও ভূমিকম্পের প্রতিকার ও প্রতিরোধ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে সর্বত্র। বড় ধরনের ভূমিকম্প হবে কি না, সেটা নিশ্চিত করে বলা কঠিন।

সাধারণত পরপর ছোট কয়েকটি ভূমিকম্প হয়ে গেলে সেখানে বড় ভূমিকম্প হবার আশঙ্কা কম বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তবে হলে ক্ষতি হবে অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় বেশি। কারণ বাংলাদেশ ঘনবসতিপূর্ণ একটি দেশ। বিশেষ করে ঢাকা শহরের অনেক ভবনই পাশাপাশি গা ঘেঁষে অবস্থান করছে। সত্যিই বড় কোনো ভূমিকম্প হবে কি না, সেটা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে কিছুটা মতবিরোধ আছে।

থাকাটাই স্বাভাবিক। কারণ ভূমিকম্প পূর্বাভাসের সঠিক পদ্ধতি এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তবে ৪০০ বছরে বাংলাদেশে পাঁচটি বড় ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। এর মধ্যে একটির উৎপত্তিস্থল ছিল চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড এবং সেটির কারণে সুনামি পর্যন্ত হয়েছিল। ভূমিকম্প যেহেতু পুরোপুরি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ, তাই আতঙ্কিত না হয়ে সেটির প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত।

কারণ জীবনের মূল্য সবচেয়ে বেশি। ভূমিকম্প নিয়ে আতঙ্ক দূরে ঠেলে মানুষকে সচেতন করে তুলতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মেহেদী আহমেদ আনসারী। তিনি বলেন, ভূমিকম্পে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো অতিরিক্ত মানুষ। বিশেষ করে ঢাকা শহরের জনসংখ্যা দুই কোটির বেশি। এখানে ভবন রয়েছে পাঁচ লাখের মতো।

আবার অনেক ভবনই তৈরি হয়েছে জলাশয় ভরাট করে বা নরম মাটির ওপর। বিল্ডিং কোড না মেনেই তৈরি হয়েছে অধিকাংশ ভবন। ফলে ভবনগুলোর শক্তি কম। বাংলাদেশ, আসাম এবং আশপাশ এলাকায় অতীতে ভূমিকম্প হওয়ার রেকর্ড আছে। তাই ভূমিকম্প বিবেচনায় রেখে ভবন তৈরিই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।

ভবন তৈরিতে কেমন সতর্কতা নেওয়া যেতে পারে, জানতে চাইলে অধ্যাপক আনসারী বলেন, রিইনফোর্সড কনক্রিটের শুরুতে লোহার যে বেড় তৈরি করা হয়, সেটির টাই-রডকে ১৩৫ ডিগ্রি কোণে বাঁকিয়ে ভেতরের দিকে ঢুকিয়ে দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক মুনাজ আহমেদ নূর আরও যোগ করেন, ‘এ ছাড়া ভবনের বিমের ও কলামের বেন্ডিংয়ের রডকে কোড অনুসারে ডিটেইলিং করার ক্ষেত্রে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে না। ’ এতে ভবন নির্মাণের ব্যয় ৫-১২ শতাংশ বেড়ে যেতে পারে। অধ্যাপক নূরও দীর্ঘদিন ধরে ভূমিকম্প নিয়ে কাজ করছেন। এ ছাড়া ভবন যদি প্রস্থের চেয়ে দৈর্ঘ্যে অনেক বেশি হয়, তাহলে এর বিভিন্ন অংশ আলাদা করা যেতে পারে।

যেমন—লিফটের অংশটুকু মূল ভবনের সঙ্গে সংযুক্ত না হলে ভালো হয়। আবার খেয়াল রাখতে হবে, ঘরের জানালা যেন খুব বেশি বড় না হয়। আর ভূমিকম্প হলে মানুষ যেন আতঙ্কিত না হয়ে মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে, সেটিকেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে অধ্যাপক আনসারী মন্তব্য করেন। ভূমিকম্প নিয়ে আতঙ্ক দূরে ঠেলে মানুষকে সচেতন করে তুলতে আরও অনেকের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ দুই অধ্যাপক। অধ্যাপক আনসারী ও নূরের সঙ্গে কথা বলে এবং তাঁদের তত্ত্বাবধানে প্রকাশিত ভূমিকম্প সচেতনতামূলক একটি পোস্টার সামনে রেখে নকশার পাঠকদের জন্য ভূমিকম্পবিষয়ক কিছু করণীয় ও নির্দেশিকা তুলে ধরা হলো।

ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে ঘনবসতি অঞ্চলের মানুষ ভূমিকম্পের পূর্বপ্রস্তুতি ঘরবাড়ির প্রস্তুতি বাড়ির ছাদ ও দেয়ালে ফাটল থাকলে তা চিহ্নিত করে মেরামতের ব্যবস্থা করা। স্কুলের ভবনগুলো ভূমিকম্পে টিকে থাকবে কি না, সেটা পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজনে মজবুত করা। বাড়িঘর নির্মাণে সতর্কতা  বাড়িঘর নির্মাণে সরকারি ও কারিগরি নিয়মকানুন মেনে চলা।  বিল্ডিং কোড মেনে বাড়ি বানানো।  ভবনের উচ্চতা ও ওজনের (লোড) হিসাব অনুযায়ী শক্ত ভিত দেওয়া।

 অবকাঠামোগুলোতে রিইনফোর্সড কংক্রিট ব্যবহার করা।  গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন নিরাপদভাবে স্থাপন করা।  নরম মাটির ওপর ভবন নির্মাণে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা।  জলাশয় ভরাট করে বাড়ি বা স্থাপনা তৈরি না করা।  জানালার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ অবশ্যই দেয়ালের অর্ধেকের চেয়ে কম রাখা।

 প্রতি তলার ছাদ একই রকম রাখা। অন্যান্য প্রস্তুতি  ভবনের বিভিন্ন কক্ষে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করা এবং নিরাপদ স্থানটি জেনে রাখা।  ভূমিকম্পের সময় নিরাপদে বের হওয়ার সঠিক পথ শনাক্ত করা।  ভারী জিনিসপত্র কম উচ্চতায় রাখা।  ফাইল কেবিনেট, অন্য ভারী আসবাব ও ল্যাবরেটরির ভারী জিনিসপত্র ভূমিকম্পে যেন কাত হতে না পারে, সে জন্য পেছন থেকে আংটা লাগিয়ে বেঁধে রাখার ব্যবস্থা করা।

 স্কুল, হাসপাতাল, ওয়ার্ড ও অন্যান্য অফিসে নিয়মিত ভূমিকম্প প্রতিকার মহড়ার ব্যবস্থা করা। ভূমিকম্পের সময় করণীয়  টেবিল, ডেস্ক বা বেঞ্চের নিচে আশ্রয় নেওয়া।  বাড়িতে থাকলে খাটের নিচে আশ্রয় নেওয়া।  কাচের জানালা, ভারী জিনিসপত্র, পরীক্ষাগারের রাসায়নিক দ্রব্য এবং মাথার ওপরের ঝুলন্ত বস্তু থেকে দূরে থাকা।  ভয় পেয়ে ওপর থেকে লাফিয়ে না পড়া।

 ঘরের বাইরে থাকলে দালান, বড় গাছপালা, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ লাইন থেকে দূরে থাকা।  অপেক্ষাকৃত ফাঁকা জায়গার আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করা।  দিনের বেলা সম্ভব হলে তাৎক্ষণিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইন বন্ধ করা। রাতে বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে দিলে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে পারে।  পরবর্তী ভূমিকম্পের জন্য প্রস্তুত থাকা।

ভূমিকম্প-পরবর্তী করণীয় বিচলিত হয়ে সবাই দরজার দিকে একসঙ্গে না দৌড়ে শান্ত ও সারিবদ্ধভাবে মহড়া নির্দেশিত পথে বের হয়ে আসতে হবে।  খোলা ও নির্ধারিত স্থানে আশ্রয় নেওয়া।  ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনায় না ঢোকা, যা ভেঙে পড়তে পারে এবং আগুন লাগলে তা নেভানোর ব্যবস্থা করা।  উদ্ধারকাজে নিজেকে নিয়োজিত করা।  আহত মানুষকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া এবং প্রয়োজনে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া।

 রেডিও ও টেলিভিশন থেকে প্রচারিত জরুরি নির্দেশাবলি শোনা এবং তা মেনে চলা।  জরুরি প্রয়োজন ছাড়া টেলিফোন ও মোবাইল ফোন ব্যবহার না করা। কারণ, এতে জরুরি সেবা বিভাগের যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।  সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং সঠিক তথ্য দিয়ে সক্রিয় সহযোগিতা করা। View this link
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.