আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে ও বিভিন্ন সংবাদ সম্মেলনে প্রায় প্রতিনিয়তই বেশ জোর গলায়ই বলে থাকেন যে, বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ‘ভোটচোর’। আর বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে হাজার হাজার নির্বাচন হয়েছে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু অর্থ্যাৎ তিনি ‘ভোটসাধু’। সর্বশেষ পাঁচটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী ফলাফল তার দাবীর পক্ষে জ্বলন্ত উদাহরণ । তিনি আরো বলেছেন যে, আগামী সংসদ নির্বাচন তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠুই হবে । তিনি যেহেতু প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কথাগুলি বলেছেন, তাই আমরা নিশ্চিতভাবেই বলতে পারি যে, তিনি সত্য কথাই বলেছেন, কারণ- প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কারো মিথ্যা কথা বলার সুযোগ নাই।
আমাদের সংবিধানে আছে কি না জানিনা, তবে আমার মতে এই আইন থাকা উচিত যে, প্রধানমন্ত্রী সংসদের ভিতরে হউক বা সংসদের বাইরে হউক-জনগণের সাথে মিথ্যা কথা বললে বা জনগণকে মিথ্যা তত্ত্ব দিলে তার প্রধানমন্ত্রীত্ব চলে যাবে। কারন, প্রধানমন্ত্রী হলো দেশের এক নাম্বার ব্যক্তি- যার কথা বিশ্বাস করে বলেই জনগণ তার দলকে ভোট দেয় এবং তাকে বিশ্বাস করে বলেই জনগণ লক্ষকোটি টাকা ট্যাক্স প্রদান করে থাকে এবং সেই ট্যাক্সের পয়সা দিয়েই সরকার পরিচালিত হয়ে থাকে। কিন্ত প্রধানমন্ত্রী যদি মিথ্যা কথা বলেন, তখন তাঁর উপর জনগণের আর আস্থা-বিশ্বাস থাকে না। আর প্রধানমন্ত্রীর উপর যদি জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস চলে যায় এবং জনগণ যদি মনে করে যে, এই প্রধানমন্ত্রীর অধিনস্থ সরকার জনগনের দেয়া ট্যাক্সের পয়সা জনগণের কল্যাণে ব্যয় না করে আত্মসাৎ করে ফেলবে, অতঃপর জনগণ সরকারকে ট্যাক্স প্রদান বন্ধ করে দেয়, তখন সরকার ব্যবস্থাই অকার্যকর হয়ে পড়বে।
সুতরাং বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে যদি আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তবে বর্তমানের সিটিকর্পোরেশন নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ীই যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ফলাফল হবে, তা খুব সহজেই অনুমান করা যায়।
অর্থ্যাৎ বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর অধীনে অনুষ্ঠিত প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত সরকারের প্রভাবমুক্ত, অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু আগামী জাতীয় সংসদনির্বাচনে জয়ী হয়ে বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী যে আবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসছেন, তা এক প্রকার নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। কারন, বিগত সাড়ে চার বছরে বর্তমান সরকারের নানা অপকর্মের কারনে সরকারের প্রতি জনগণের যেরূপ অনাস্থা ও অবিশ্বাস তৈরী হয়েছে, তা আগামী কয়েক মাস সময়ের মধ্যে পূনরুদ্ধার করা কোনভাবেই সম্ভবপর না। ফলে আগামী পাঁচ বৎসর খালেদা জিয়ার সরকারের অধীনে না হয় স্থানীয় নির্বাচনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন বিরোধীদলীয় জোটের অংশগ্রহন করা সম্ভবপর হবে, কারণ স্থানীয় নির্বাচনের মাধ্যমে তো আর সরকার পরিবর্তন করা যাবে না, কিন্ত জাতীয় নির্বাচনে কিভাবে জেনেশুনে খালেদা জিয়ার মতো একজন ভোটচোরের অধীনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশগ্রহন করবেন? কথিত ভোটেচোর খালেদাজিয়ার অধীনে নির্বাচনে অংশগ্রহন করা মানে তো নিশ্চিতভাবে আবার খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনার পাকাপোক্ত ব্যবস্থা করা নয় কি!
এছাড়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী আগামী টার্মের সম্ভাব্য বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার সামনে আর কি বা পথ খোলা থাকবে? কারণ -নির্দলীয়, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই অত্যন্ত সুকৌশলে আদালতের দোহাই দিয়ে বাতিল করিয়েছেন । অথচ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই ১৭৩দিন হরতাল পালনের মাধ্যমে ”নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ” সংবিধানে সংযোজন করতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী, বর্তমান বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদাজিয়াকে বাধ্য করেছিলেন, আবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে নিজেই অত্যন্ত সুকৌশলে আদালতের দোহাই দিয়ে ” তা”বাতিল করিয়েছেন ।
শুধু কি তাই! নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে এমন কোন অপপ্রচার নাই যে, বর্তমান সরকারের সকল এমপি-মন্ত্রী ও স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী মিলে চালাচ্ছেন না! সুতরাং আবার কোন মুখে ”নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ” পূনরায় চালু করার দাবী করবেন পরবর্তী সরকারের কাছে? আর আন্দোলন করবেন আবার ! এই ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য? মনে হয়, সেই সাহস আর থাকবে না বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও সম্ভাব্য আগামী বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার।
সুতরাং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, নিজেদের প্রয়োজনে, আপনার ভাষায় ভোটচোর খালেদা জিয়ার অধীনে জাতীয় নির্বাচন এড়াইতে, জনগণের সমর্থন আরো অধিক পরিমানে হারানোর পূর্বেই যথাশীঘ্র সম্ভব সকল দলের সাথে আলোচনা পূর্বক নির্দলীয়, নিরপেক্ষ এবং সকলের কাছে গ্রহনযোগ্য একটি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য একটি স্থায়ী নির্বাচন পদ্ধতি সংবিধানে সংযুক্ত করে নিজদলকে ভবিষ্যতের বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করুন এবং দেশবাসীকেও রেহাই দিন বর্তমানের শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি থেকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।