পাবনায় সন্ত্রাসী হামলায় জেলা প্রশাসনের নিয়োগ পরীা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এবার এমপির লোকজনের হুমকিতে বন্ধ হয়ে গেল যশোর সিভিল সার্জন অফিসের কর্মচারি নিয়োগ পরীা। আজ সকালে বিভিন্ন পদে কর্মচারি নিয়োগের মৌখিক পরীা চলাকালে এ ঘটনা ঘটে।
যশোর সিভিল সার্জন অফিস থেকে জানানো হয়েছে, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর স্টোর কিপার, কুক মশালচি ও অফিস সহকারীর ৬৯টি পদে লোক নিয়োগের জন্য মৌখিক পরীা ছিল গতকাল সোমবার। সকালে ১৪৬ জন পরীার্থীর মৌখিক পরীা নেয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় নিয়োগ প্রক্রিয়া।
নিয়োগ বোর্ডের চেয়ারম্যান ও খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. একেএম সামাদ মিয়া বলেছেন, পরীা চলাকালে বেলা ১১টার দিকে ১৫/২০ জনের একটি দল জোর করে রুমে ঢোকে এবং একজন মহিলা পরীার্থীকে ধাক্কা দিয়ে ঘরের বাইরে বের করে দেয় তারা।
তাদের মধ্যে স্থানীয় এমপি খালেদুর রহমান টিটোর চাচাতো ভাই পরিচয়দানকারী মারুফ হোসেন খোকন ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত নাথ ছিলেন। সামাদ মিয়া জানান, তারা এমপির দেওয়া একটি তালিকা ধরিয়ে দিয়ে হুমকি দেন, তালিকা অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া না হলে চেয়ার থেকে সবাইকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়া হবে। তিনি বলেন, এঘটনার পর থেকে নিয়োগ বোর্ডের সবাই আতঙ্কের মধ্যে থাকায় নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়া হয়। বিষয়টি উর্ধতন কর্তৃপকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে নির্দেশ পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নিয়োগ বোর্ডের অপর সদস্যদের মধ্যে ছিলেন খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য সহকারী পরিচালক ডা. মোল্যা হারূন অর রশিদ, যশোরের সিভিল সার্জন ডা. তরুণ কুমার শিকদার, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সঞ্জয় কুমার বণিক ও সরকারী কর্ম কমিশনের সহকারী পরিচালক নির্মল চন্দ্র রায়।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সঞ্জয় কুমার বণিককে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, নিয়োগ বোর্ডে আমি পেঁৗছার আগেই এরকম ঘটনা ঘটেছে বলে আমি শুনেছি।
সিভিল সার্জন তরুণ কুমার শিকদার বিকেল ৩টার দিকে জানান, নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত রাখার জন্য ঢাকা থেকে মৌখিক নির্দেশ এসেছে। যে কারণে আগামিকাল অনুষ্ঠেয় ড্রাইভার পদের পরীার্থীদের মৌখিক পরীা নেয়া হবে না।
সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ জানিয়েছেন, এমপি সাহেব ৫/৬ জন দুস্থ মানুষের জন্য সুপারিশ করতে আমাদের পাঠিয়েছিলেন।
এমপি সাহেব পাঠিয়েছেন- একথা শোনার পরও তারা আমাদের কথার প্রতি বিন্দুমাত্র ভ্রূপে করেনি। সুইপার পদে প্রকৃত সুইপাররাই যাতে নিয়োগ পায়, আর পরীা চলাকালে যে অব্যবস্থাপনার সৃষ্টি হয়েছে সেগুলো ঠিক করার জন্য আমরা তাদের বলেছিলাম। এক পর্যায়ে তাদের সাথে কিছু কথা-কাটাকাটিও হয়েছে। তিনি বলেন, পরীার্থীকে ঘর থেকে বের করে দেয়া ও চেয়ার থেকে ছুড়ে ফেলে দেয়ার যে হুমকির কথা বলছেন স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক, তা শতভাগ মিথ্যা।
এ ব্যাপারে যশোর-৩ (সদর) আসনের এমপি খালেদুর রহমান টিটোর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, কয়েকজন গরীব মানুষের নামের তালিকা নিয়ে লোক পাঠিয়েছিলাম নিয়োগ বোর্ডে।
তিনি নিয়োগ বোর্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, এই বোর্ডের সদস্যরা চাকরি দেয়ার কথা বলে সুইপারদের কাছ থেকেও তিন লাখ করে টাকা নিচ্ছে, যার প্রমান আছে। এছাড়া, এমএলএসএস পদের জন্য চার লাখ, আর ড্রাইভার পদের জন্য ৫ লাখ করে নেয়া হচ্ছে। টিটো বলেন, এসব অভিযোগ পাওয়ার পর আমি কয়েকজন গরীব মানুষের তালিকা পাঠাই নিয়োগের জন্য বিবেচনা করতে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে প্রধান অনত্দরায় প্রশাসনের দুর্নীতি। টাকা ছাড়া চাকরি হবে না, এটা মানা যায় না।
তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি হচ্ছে। এতে যদি পিটা-পিটি, মারধর করার প্রয়োজন হয় করতে হবে। তিনি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করবেন বলেও জানান।
এদিকে এমপি খালেদুর রহমান টিটোর অভিযোগ সম্পর্কে স্বাস্থ্য বিভাগের খুলনা বিভাগীয় পরিচালক ডা. একেএম সামাদ মিয়া বলেন, 'উনি তো এখন এরকমই বলবেন। আমি তো কেবল পরীা নিচ্ছি।
নিয়োগ তো এখনও দেয়া হয়নি। তাহলে টাকা নিলাম কখন। তিনি বলেন, আমি তো একজন ডাইরেক্টর। কোন রকম কথাবার্তা ছাড়াই তারা ১৫/২০ জন লোক অফিসের মধ্যে ঢুকে পরীার্থীকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিল, লিস্টের বাইরে নিয়োগ দেয়া হলে চেয়ার থেকে ছুড়ে ফেলে দেয়ার হুমকি দিল- এটা কী ধরণের আচরণ।
নিয়োগ বোর্ডের সদস্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সঞ্জয় কুমার বণিক দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে বলেন, দুর্নীতি হলে তো কিছুটা অাঁচ করা যায়।
তবে আমি সেধরণের কিছু দেখতে পাইনি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।