আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টেলিটক এর যথেচ্ছ ভি ও আই পি এবং বিটিআরসি এর নিরবতা



কালের কন্ঠ সিমবক্স ডিটেকশান যন্ত্রে পরীক্ষার মাধ্যমে গত চার মাসে ভয়েস ওভার ইন্টারনেট প্রটোকল বা ভিওআইপির অবৈধ কাজে ব্যবহার হওয়া বিভিন্ন মোবাইল কম্পানির ৭৩ হাজার সিম শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে টেলিটকেরই ৪৩ হাজার সিম শনাক্ত হয়েছে। সবচেয়ে কম ১৫১টি সিম শনাক্ত হয়েছে গ্রামীণ ফোনের। গত ৫ মে দেশের চার মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, ওয়ারিদ ও সিটিসেল বিটিআরসি কার্যালয়ে এই ডিকেক্টর স্থাপন করে। এতে প্রতিমাসে বিভিন্ন দেশ থেকে আসা ৮০ হাজার ভিওআইপি কল পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে।

এ ছাড়া মোবাইল অপারেটর রবি একটি সিমবক্স ডিটেকশান যন্ত্র তাদের নিজস্ব অফিসে বসিয়েছে। টেলিটক বাদে এই পাঁচ মোবাইল ফোন অপারেটর নিজেদের পয়সা খরচ করে পরীক্ষামূলকভাবে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে ভিওআইপি কল করছে। যে সব দেশ থেকে বাংলাদেশে কল বেশি আসে সেগুলোকে বেছে নিয়ে সেখান থেকে ভিওআইপি কল করা হচ্ছে। এসব কলের মধ্যে যেগুলো ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ের (আইজিডবি্লউ) মাধ্যমে না এসে অবৈধভাবে অন্য পথে আসছে_সেসব কলে ব্যবহৃত সিমগুলো সিম ডিটেকশান বক্সের মাধ্যমে শনাক্ত করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মোবাইল অপারেটরদের উদ্দেশ্য হচ্ছে ভিওআইপির অবৈধ কারবার বন্ধে বিটিআরসিকে সহযোগিতা করা এবং একই সঙ্গে নিজেদের স্বচ্ছতা প্রমাণ করা।

গত মে মাস থেকে এ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। তবে ই-১ (এক সঙ্গে ৩০টি টেলিফোন সংযোগের ব্যান্ডউইডথ) ব্যবহার করে যেসব ভিওআইপি কল আসছে তা ওই সিমবক্স ডিটেকশন সিস্টেমে শনাক্ত করা যাচ্ছে না। ডিটেকশান যন্ত্রের পরীক্ষায় গত ৫ মে থেকে ৮ সেপ্টম্বর পর্যন্ত ভিওআইপির অবৈধ কারবারে ব্যবহার হওয়া মোট ৩৭ হাজার ৩৮৯টি সিম শনাক্ত হয়। এর মধ্যে বাংলালিংকের ১২ হাজার ৬০১টি, ওয়ারিদের দুই হাজার ৪০৮টি, সিটিসেলের ২১৫টি, গ্রামীণফোনের ১০৬টি, রবির আট হাজার ৭০৫টি এবং টেলিটকের ১২ হাজার ৯৯৮টি সিম এবং সরকারি মালিকানার ল্যান্ডফোন কম্পানি বিটিসিএলের ২৫৭টি টেলিফোন নাম্বার শনাক্ত হয়। আর রবি পরিচালিত সিমবক্স ডিটেকশান যন্ত্রে গত ২৫ মে থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শনাক্ত হয় ৩৬ হাজার ৮৯টি সিম।

এর মধ্যে রবির নিজেরই পাঁচ হাজার ৪০৫টি, বাংলালিংকের চার হাজার ৩৫৪টি, গ্রামীণফোনের ৪৫টি, টেলিটকের ৩০ হাজার ১৫৬টি, সিটিসেলের ৯২টি, ওয়ারিদের ৯৮০টি সিম এবং বিটিসিএলসহ অন্য অপারেটরদের সংযোগ শনাক্ত হয় ৪৭২টি। টেলিটকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুজিবুর রহমান ভিওআইপি কল শনাক্তে এ ব্যবস্থাকে পক্ষপাতমুক্ত মনে করছেন না। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, 'বেসরকারি মোবাইল অপারেটররা প্রচুর সার্কিট ব্যবহার করে। যে সব সার্কিটের মাধ্যমে বেশি ভিওআইপি কল আসে হয়তো সেগুলো বাদ রেখেই পরীক্ষা করা হচ্ছে। তাছাড়া আমরা নিজেদের বিকল্প ব্যবস্থায় পরীক্ষা করে দেখেছি, টেলিটকের সিমের মাধ্যমেই সবচেয়ে কম ভিওআইপি কল আসে।

' মুজিবুর রহমান আরো বলেন, 'টেলিটক টিকে থাকুক তা অনেকেই চায় না। একারণে সিমবক্স ডিটেকশান যন্ত্রের ওই পরীক্ষার মাধ্যমে আমাদের বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা দরকার। ' এ সিমবক্স ডিটেকশান যন্ত্রের পরীক্ষায় কোন অপারেটরের কতগুলো সিম ভিওআইপির অবৈধ কারবারে ব্যহার হচ্ছে তা শনাক্ত ছাড়াও কোন অপারেটরের চিহ্নিত সিমগুলো কতবার ব্যবহার হয়েছে তাও শনাক্ত করা হয়। এই পরীক্ষায়ও টেলিটক শীর্ষস্থানে। চিহ্নিত ৩৭ হাজার ৩৮৯ সিমের মাধ্যমে অবৈধ ভিওআইপি কল এসছে মোট এক লাখ ৩৬ হাজার ৩৭ বার।

এর মধ্যে টেলিটকের সিমগুলোতেই এসেছে ৯৫ হাজার ৫১৬ বার, যা চিহ্নিত ভিওআইপি কলগুলোর ৭১ শতাংশ। এ ছাড়া অন্যান্য অপারেটরের চিহ্নিত সিমগুলোর মধ্যে বাংলালিংকের ১৮ হাজার ৭৫, ওয়ারিদের চার হাজার ১৫৬, গ্রামীণফোনের ১৫৫, রবির ১৬ হাজার ৭১৭, বিটিসিএলের ৯৭৭ ও অন্যাদের সিম বা সংযোগে ১৬০ বার ভিওআইপি কল এসেছে। এ বিষয়ে অ্যামটবের সভাপতি জাকিউল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, যেসব অপারেটর তাদের সিমগুলো দ্রুত বন্ধ করার ব্যবস্থা নিচ্ছে তাদের সিম স্বাভাবিকভাবেই বেশি ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। আর ভিওআইপিতে ব্যবহার হওয়া সিম চিহ্নিত হওয়ার পরেও যে অপারেটর সেগুলো বন্ধ করছে না, তাদের ওইসব সিমে বেশি সংখ্যক ভিওআইপি কল আসাটাই স্বাভাবিক। এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, অ্যামটব ও বিটিআরসির কর্মকর্তাদের ধারণা, শুধু ভিওআইপিতে ব্যবহার হওয়ার সিম শনাক্ত করে তা বন্ধ করে দেওয়াই নয়, মোবাইল অপারেটরদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পেলে কারা এসব সিম ব্যবহার করে অবৈধভাবে ভিওআইপি কারবার চালু রেখেছে তাদেরও চিহ্নিত করা সম্ভব।

অ্যামটব থেকে এ বিষয়ে প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাধা হয়ে আছে টেলিটক। টেলিটক থেকে এ বিষয়ে সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে মুজিবুর রহমান বলেন, 'আমরা সহযোগিতা করছি না_এ অভিযোগ সঠিক নয়। এ বিষয়ে বিটিআরসির সব নির্দেশই আমরা পালন করে যাচ্ছি।

আমরাও চাই ভিওআইপির অবৈধ কারবার বন্ধ হোক। ' এদিকে টেলিটকের জিএম ( অপারেশন) মোহাম্মদ তৌহিদ অ্যামটব ও বিটিআরসির তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, 'ভিওআইপিতে ব্যবহার হওয়া টেলিটকের ৪৩ হাজার সিম শনাক্ত হয়েছে_এ তথ্য আমাদের জানা নেই। হতে পারে একই সিম কয়েকবার গণনা করা হয়েছে। আমাদের কাছে এক সময় ৩০ হাজার সিমের তালিকা পাঠানো হয়েছিল।

তাতে দেখা যায় একটি সিমের নাম্বার একাধিক জায়গায় লেখা রয়েছে। আমরা ওই তালিকা থেকে প্রকৃত পাঁচ হাজার সিম চিহ্নিত করে তা বন্ধ করে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। ' মোহাম্মদ তৌহিদ আরো বলেন, 'প্রতিদিনই বিটিআরসি থেকে এ বিষয়ে আমাদের কাছে তালিকা পাঠানো হচ্ছে। তবে বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখার জন্য কিছুটা সময় লাগছে। নিরপরাধ কোনো গ্রাহকের সিম তো আমরা বন্ধ করে দিতে পারি না।

প্রতি সাতদিন অন্তর অভিযুক্ত সিমগুলো বন্ধ করে দেওয়ার কাজ চলছে। গত চার মাসে টেলিটকের ১৫ হাজার সিম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ' তবে ইন্টার কানেকশন এক্সচেঞ্জ (আইসিএক্স) গেটকোর একজন কর্মকর্তা জানান, টেলিটক এত সিম বন্ধ করে দেওয়ার কথা বললেও তাদের গ্রাহকদের অ্যাভারেজ কল ডিউরেশন বা এসিডির পরিমাণ কমেনি। গ্রামীণফোনের গ্রাহকদের এসিডি যেখানে ১ দশমিক ২ মিনিট, সেখানে টেলিটকের এসিডি ৩ মিনিট। বিষয়টি সন্দেহজনক।

ওই কর্মকর্তার সন্দেহ, হয়তো টেলিটকের বন্ধ করা সিম চালু হতে খুব বেশি দেরি হচ্ছে না।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।