প্রকৃতির প্রজনন সময় বসন্ত। মেরুর দেশে শীতের প্রকোপে ঢাকা মাটি খুব অল্প সময়ের জন্য সাজে অপররূপ সাজে নববধুর মতন। রঙের বাহারে বৈচিত্রে চোখে মায়া লাগিয়ে দেয়।
এপ্রিল আসতে না আসতে ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় ভূঁই থেকে গাছ লতা। গাছগুলো যেন নুয়ে পড়ে ফুলের ভারে।
শীতের সবুজ উষ্ণ ঘরে স্বযত্নে গড়ে তোলা; ছোট ছোট টবের ফুল ফল কিনে নেয় ক্রেতা ঘর বাগান সাজানোর জন্য বসন্ত গ্রীষ্মের সময়ে।
আসা যাওয়ার পথের ধারে শহরের প্রান্তে বেশ বড়সর একটি গাছ গাছড়ার নার্সরি। বাড়ির আঙ্গিনায় কিছু গোলাপ লাগানোর; একটা বাগান গড়ে তোলার অনেক দিনের শখ্ আমার।
এক বসন্ত দুপুরে ঐ পথে যেতে দুপুরে নার্সরিটাতে ঢুকে পড়লাম্। বিশাল জায়গা জুড়ে কত রকম ফুলের মেলা।
লাল, হলুদ, বেগুনী,সবুজ কমলা খয়েরী নীল কত যে অদ্ভুত সব আকৃতি আর রঙ,বর্নণায় শব্দে কতটুকু তা প্রকাশ করা যায়; যতটুকু উপলব্ধি করা যায়। প্রকৃতির রঙের মেলা আমাকে সব ভুলিয়ে দেয়, আনন্দে পূর্ণ করে, নিয়ে যায় স্বর্গে যেন। আমি আপন মনে পৃথিবীর বিভিন্ন পরিবেশ থেকে তুলে আনা গাছগাছড়ার সুবাস নিয়ে বিশাল এলাকা জুড়ে সাজানো নানান ফুলের মেলায় ঘুরে বেড়াই।
উদ্দেশ্য কিনব কিছু গোলাপ নানা রঙের কিন্তু ইচ্ছে করে তুলে নিতে সব বৈচিত্রময় গাছের সমাহার। সব তুলে নেয়া সম্ভব নয় তাই বাছাইকৃত কিছু শপিং কার্টে ইচ্ছে মতন তুলে নিচ্ছি কিছু তার চেয়েও বেশী ছোঁয়ে ছোঁয়ে দেখছি ভালোলাগার গাছগুলোকে সময়ের খেয়াল নাই।
এক সময় পছন্দের কিছু গাছ কিনে বাগান বাড়ি থেকে বেড়িয়ে রওনা দিলাম বাড়ির পথে। অনেকটা পথ যেতে হবে প্রায় ঘণ্টা খানেক ড্রাইভ।
অপারাহেৃর সুন্দর আলোময় দিনটা উপভোগ করতে করতে গান শুনতে শুনতে খুশি মনে ভেসে যাচ্ছি গাড়ির গতিতে।
হঠাৎ চোখে পড়ল আমার আঙ্গুলে যে আংটিটা ছিল, যেটা গতকালই আমার এক প্রিয়জন আমাকে দিয়েছে সেটা আমার আঙ্গুলে নেই। একটু খানি বড় ছিল তাই বলে খুলে পড়ে যাবে এমনটা ভাবিনি।
আনন্দ সব উবে গেল মন খারাপ হতে থাকল। এমন কেন হয় প্রচণ্ড ভালোলাগা ঢেকে যায় মন খারাপে?
ঐ বিশাল নার্সারিতে যদি হারাই তাহলে তা আর কেমনে পাবো। কত লোকের আনাগোনা সারাবেলা ওখানে।
হারিয়ে ফেলা আর পেয়ে যাওয়ার দ্বন্ধ মনের ভিতর ঢেউ তুলছে। এই মনে হয় একরাশ শূন্যতা আবার মনে হয় যাবে কোথায় ঠিক পেয়ে যাবো; তখন মন ভালো হয়ে যায়।
আংটিটা যেন তেন না সোনার কারুকার্য করা হীরা বসান কয়েকটা। আর মোটে একদিন আগেই পাওয়া, নতুনের ঘ্রাণ লেগে আছে।
দুঃসহ একটা মানসিক দ্বন্দর ঐ সময়ে সেলফোন বেজে উঠল। আর ঐ উপহারদাতাই ফোন করেছে।
গলার স্বর যথা সম্ভব ঠিক রেখে হারানোর বিষয়ে কিছু না বলে কথা বলা শেষ করলাম দ্রুত এই মুহুর্তে, গাড়ি চালানোর অযুহাতে।
বিশাল একটা বাজার মতন জায়গায় আংটিটা হয়তো বা পড়ে গেছে তবু আমার মনের ভিতর একটা জোড় কাজ করছে, পেয়ে যাবো। আলৌকিক শক্তি যেন যতটা মন খারাপ হবার কথা ততটা হচ্ছে না। অথবা একা এই মুহুর্তে নিজেকে নিজেই শান্তনা দিচ্ছিলাম হয়তো।
মনে হয় গাড়িতেই আছে অথবা হাত ব্যাগের ভিতর। হাইওয়ের উপর গাড়ি থামিয়ে খুঁজতে পারছি না।
বাড়ির প্রায় কাছে চলে এসেছি তাই ফিরে না গিয়ে বাড়িতে যাওয়াই ঠিক করলাম প্রথমে।
বাড়িতে পৌঁছে গাছ নামিয়ে গাছের টব থেকে গাড়ি, হাত ব্যাগ তন্নতন্ন করে খোঁজলাম, না কোথও পেলাম না আমার সোনার আংটি।
কেনার রিসিপ্ট খুঁজে দেখলাম কোন ফোন নাম্বার আছে কিনা দোকানের। সন্ধ্যা হয়ে আসছে ওরা কি বন্ধ হরে ফেলবে কিনা জানতে চাইতাম। কিন্তু ফোন নাম্বার বা সময় পেলাম না রিসিপ্টে।
দ্রুত আবার রওনা হলাম নার্সারির উদ্দেশ্যে। ড্রাইভিং টাইম একঘণ্টা ।
ঐ একঘণ্টাই আমার হাতে আছে, সন্ধ্যা ছয়টায় যদি বন্ধ হয়ে যায় তার হিসাবে। মনে মনে আশা করে গেলাম যেন আমার পৌঁছার আগে ওরা বন্ধ হয়ে না যায়। যতটা দ্রুত যাওয়া যায় চলেছি।
পুলিশের চোখে পড়লে স্পিডিং টিকেট খাওয়ার সমুহ সম্ভাবনা কিন্তু সময় বাঁচানোর জন্য চলেছি কিছুটা নিয়মের বাইরে। নিয়ম না থাকলে আমি রেইসিংএ প্রথম হতাম আজ।
পৌছে গেলাম নার্সরিতে; আকাশ প্রকৃতি গান কোন দিকে মন না দিয়ে দ্রুত।
বন্ধ হয়নি এখনও দিনের আলোর পুরোটা সময় খোলা থাকবে। এসময়ে দিনের আলো সংরক্ষণের জন্য ঘড়ির কাটার হিসাবে সন্ধ্যা হতে প্রায় সাড়ে আটটা হয়।
কিছুটা সময় পাওয়া যাওয়ায় আশান্বিত হলাম কিন্তু ভিতরে ঢুকে মন দমে গেলো দুপুরের মতন ফাঁকা ফাঁকা নয়, পিপিলিকার সারি যেন চারপাশে এতো মানুষ । যদি বা পাওয়া যেত, এখন মনে হচ্ছে কেউ ঠিক কিনে নিয়ে গেছে সেই টব, যেখানে আছে আমার আংটি। মানুষ কি এত সৎ আছে কেউ যদি একটা আংটি পেয়ে যায় সে কি ফিরিয়ে দিবে? আবারও দ্বিধা দ্বন্দের উত্থান পতন চলতে থাকে মনে।
যে পথে গিয়েছি আগে, যে গাছে হাত বুলিয়েছি তার ভিতর খুঁজতে লাগলাম্ বারেবারে। পুরো এলাকা ঘুরে ভিতরে গেলাম দোকানের লোকদের জানালাম।
যদি আলৌকিক ভাবে কোন সুহৃদয় মানুষ পায় এবং ফিরিয়ে দেয়। অথবা ওরাই পায় কাজ করতে।
নাম ফোন নাম্বার বিনিময় করে নিরাশ হয়ে ফিরে যেতে উদ্যোত হলাম।
বাইরে এসে আবার একবার পুরো জায়গাটা দেখার ইচ্ছে হলো। সন্ধ্যা হয়ে আসছে।
আগের মতন আলো নাই দিনের আলো নিভে আসছে।
প্রতিটি ঝাকরা গাছের টব তুলে ধরে লোকের চোখ ফাঁকি দিয়ে ঝেড়ে ঝেড়ে আংটি খোঁজা বেশ ঝামেলার। আমি যেমন করে গাছ দেখছি লোকে আমাকে পাগল ভাবতে পারে নিঃসন্দেহে। কিন্তু আমার মনে আমার আংটি পাওয়ার তাগিদ। এক তৃতীয়াংশ বাগান দেখা শেষ; আংটি পেলাম না।
গোলাপের গাছ গুলো দেখে ফিরে আসার পথে উল্টো দিকে রেকের উপর রাখা একটা গাছ দেখে মনে হলো এখানে আমি থেমেছিলাম। ব্লিডিং হার্ট গাছটার ফোটা ফোটা ফুলগুলো যেন আমার হৃদয়কে ধারন করে ঝুলে আছে। টুপ করে রক্ত বা অশ্রু ঝরে পড়ার অপেক্ষা শুধু।
তার কাছে নিরাশ আমি দাঁড়িয়ে আছি আর ঠিক তখন চোখ গেল টবের মাটির উপর শুয়ে আছে আমার আংটি। হৃদয়টা নেচে উঠল, ভালোলাগা শরীর বয়ে গেল।
কী অদ্ভুত সে অনুভুতি মনে হচ্ছিল হারিয়েছে কিন্তু হারানো নয় আছে পেয়ে যাবো্ অদ্ভুত কিছু আলৌকিক ঘটনা ঘটে যায় জীবনে।
আংটিটা না পেলে গোলাপ ফুটলে মনে হতো এই সুন্দর ফুলগুলোর জন্য আমার উপহার হারিয়ে ফেলেছি। ভালোলাগার মাঝে একটা কাটা খচখচ করত অন্তরে যাক শেষ পর্যন্ত আমার কিছু হারায়নি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।