মা বাবার সেবা করা সবচেয়ে বড় ইবাদত
অস্ত্রটি তাঁর, গাড়িও তাঁর। সেই গাড়ির ভেতরে, সেই অস্ত্রের গুলিতেই খুন হয়েছেন আওয়ামী লীগের কর্মী ইব্রাহিম। তবু পুলিশ বলছে, অস্ত্র ও গাড়ির মালিক সরকারি দলের সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরী (শাওন) নির্দোষ। পুলিশের দাবি, তদন্তে তাঁর বিরুদ্ধে খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কোনো প্রমাণই মেলেনি। শুধু শুধু তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করার দরকার কী।
কাজেই সাংসদ নুরুন্নবীকে বাদ দিয়ে অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার এ কে এম শহীদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাংসদের কোনো দোষ নেই। তদন্তে খুনের ঘটনায় তাঁর জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ মেলেনি। ’
তবে ইব্রাহিমের পরিবার শুরু থেকেই অভিযোগ করছে, এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে পুলিশ রহস্যময় আচরণ করছে। পরিবারের মতে, এই খুনের সঙ্গে জড়িত থাকার দায় সাংসদ কোনোভাবেই এড়াতে পারেন না।
কারণ ইব্রাহিম খুন হওয়ার পরও গাড়িতে লাশ নিয়ে বিভিন্ন স্থানে টানাহেঁচড়া করা, পরিবারকে না জানিয়ে মামলা করানো, দলীয় কর্মীদের নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে পালিয়ে আসাসহ বিভিন্ন ঘটনা নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। তা ছাড়া সরকারি দলের সাংসদ বলে শুরু থেকেই তাঁকে রক্ষায় নানামুখী তৎপরতা শুরু হয়েছে।
সাংসদের লাইসেন্স করা পিস্তলের গুলিতে গত ১৩ আগস্ট নিহত হন আওয়ামী লীগের কর্মী ইব্রাহিম আহমেদ। খুনের ঘটনার পর তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ না করে ওই রাতেই সাংসদের গাড়িচালক কামাল হোসেন বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় অপমৃত্যুর মামলা করেন। প্রথমে থানার পুলিশ মামলাটি তদন্ত শুরু করলেও ১৭ আগস্ট মামলার তদন্ত কার্যক্রম ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে যায়।
পুলিশ তদন্ত করে নিশ্চিত হয়, ইব্রাহিম খুন হয়েছেন। কিন্তু খুনের ঘটনা ধামাচাপা দিতে গাড়িচালক অপমৃত্যুর মামলা করেন। তদন্তে এ বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর ৩০ আগস্ট সাংসদের গাড়িচালক কামাল ও ব্যক্তিগত সহকারী সোহেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা হত্যার কথা স্বীকার করেন। এরপর ২ সেপ্টেম্বর আবারও ইব্রাহিমের স্বজনদের না জানিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করে শেরেবাংলা নগর থানায় হত্যা মামলা করে।
সেই মামলায় কামাল ও সোহেলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। ওই দিনই তাঁদের আদালতে হাজির করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেওয়া হয়। কামাল তাঁর জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, তিনি ইব্রাহিমকে খুন করেন। এরপর সাংসদের কথা মতো থানায় গিয়ে ডায়েরি করেন। কামাল জবানবন্দিতে আরও বলেন, ইব্রাহিমকে খুনের পর তিনি বোতলের পানি দিয়ে গাড়ির সিট থেকে রক্তের দাগ ধুয়ে ফেলেন।
জবানবন্দি দেওয়ার পর কামাল ও সোহেলকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এর আগে ১৮ আগস্ট ইব্রাহিমের ছোট ভাই মাসুম আহমেদ বাদী হয়ে সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরীসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে আদালতে হত্যা মামলা করেন। তবে আদালত এ মামলার ব্যাপারে এখনো কোনো নির্দেশনা দেননি।
তবে গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মাহাবুবর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ইব্রাহিম খুনের ঘটনায় সাংসদ নুরুন্নবী চৌধুরীর জড়িত থাকার প্রমাণ না মিললেও এ বিষয়ে কথা বলার জন্য তাঁকে ডাকা হবে।
ইব্রাহিমের মৃত্যুর দুই দিন পর ১৫ আগস্ট রাজারবাগে এক অনুষ্ঠানে এ ঘটনাকে ‘দুর্ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন কমিশনার শহীদুল হক।
পরে আরেকটি অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, এ ঘটনায় সাংসদ নুরুন্নবীর পিস্তল ব্যবহূত হলেও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার কোনো সুযোগ নেই। কমিশনারের এ বক্তব্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন ইব্রাহিমের স্বজনেরা। তাঁরা মামলার নিরপেক্ষ তদন্ত নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন।
ইব্রাহিমের স্ত্রী রীনা ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, সাংসদের গাড়িতে তাঁরই অস্ত্র দিয়ে ইব্রাহিম কীভাবে খুন হলেন, তার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। পুলিশ সঠিকভাবে তদন্ত করছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন।
বিস্তারিত : Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।