আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার দেখা এক ঋণগ্রস্থ পরিবার



আমি সমাজবিজ্ঞানের ছাত্র। সেকেন্ড ইয়ারে সামাজিক গবেষণা নামে আমার একটা বিষয় ছিল। যার অংশ হিসেবে আমাকে একটা বিষয় নির্বাচন করে তার উপর গবেষণা কর্ম ডিপার্টমেন্টে জমা দিতে হয়েছে। আর এই গবেষনা কর্মটি সম্পন্ন করতে গিয়ে আমাকে যে বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়েছে- তারই খানিক বর্ণনা দিচ্ছি মাত্র। আমার গবেষণার বিষয় ছিল- ” গ্রামীণ দারিদ্রতা বিমোচনে (............) এনজিও এর ক্ষুদ্র ঋণের ভূমিকা”।

নিদ্দিষ্ট এন,জি,ও –র কাছ থেকে কিছু ঋণ গ্রহীতার ঠিকানা নিয়ে আমরা সরে জমিনে যাই। তার মধ্যে একটি পরিবার এমন- যাদের বাড়িতে গিয়ে দেখতে পাই বাড়ী ফাঁকা, কোন লোকজন নেই। পাশের বাড়ীর লোকজনকে জিঙ্গাসা করতে তারা বললো এ বাড়ীর লোকজনকে সকাল থেকে তারা দেখেছে। আমরা কেন এসেছি এ বলে অনেকক্ষন অপেক্ষা করার পর নোংরা কাপড়, আগোছালো শরীর নিয়ে পয়ত্রিশ, চল্লিশ বছরের এক বিধবা মহিলাকে পেলাম। যিনি ওনাকে এ বাড়ীর কর্তী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন।

জানতে পেলাম উনি আমাদেরকে দেখে ভয় পেয়ে চলে গেছেন। উনি ভেবেছেন এন,জি,ও থেকে কিস্তি স্যার এসেছেন। এ ভয়ের কারণ জিঙ্গাসা করতেই উনি বললেন, গত সপ্তাহে এসে কিস্তি স্যার তার পানির কলসি সহ কয়েকটি প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র নিয়ে গেছে। জিঙ্গেস করলাম কেন? বললেন, কিস্তির টাকা দিতে পারেননি বলে। বললাম, টাকা নিয়ে আপনি কি করেছেন? মহিলা কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলো ঋণের টাকা দিয়ে বড় মেয়েটার বিয়ে দিছে।

এখন মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে দুইটা মেয়ে ও দশ এগার বছরের একটা ছেলেকে খাওয়াতে হিমশিম খাচ্ছে। তার পর আবার এন,জি,ও-র ঋণের দায়। তাই এন,জি,ও-র কর্মী এলেই পালিয়ে থাকে টাকা দেয়ার ভয়ে। জানতে পেলাম এন,জি,ও-র কিস্তি স্যার কিস্তি দিতে না পারায় যখন যা পায় তা নিয়ে পাশের লোকের কাছে বিক্রি করে কিস্তির টাকা আদায়ের চেষ্টা করেন, এ থেকে রক্ষা পায়নি এ মহিলার ডিমে তা দেওয়া একমাত্র মুরগী, ভাত- তরকারীর পাতিলও। মহিলা কাঁদতে কাঁদতে আরো বলতে লাগলো আপনারা আমারে একটু বিষ দেন, খাইয়া মইরা যাই।

আর পারতাছিনা, বেটায় পোলা পানের মায়া করেনাই, আমি কইরা লাভকি? আমরাও নির্বাক, কান্না ধরে রাখতে পারিনি। সান্তনা কিংবা কিছু বলার ভাষা খুজে পাইনি। শুধু ভেবেছি ,এ-তো এক নুরজাহান নয়, হাজারো নুরজাহানরা আছে আমাদের আশে-পাশে, যারা কিস্তি স্যারের ভয়ে পালিয়ে বেড়ায়। শেষ সম্ভল ভাত রান্নার কড়াই হারিয়ে অন্যের বাড়ি গিয়ে রান্নার হাড়ি ভিক্ষা চায়, তাদের জন্য কিইবা করার আছে আমার মত অনার্স পড়ুয়া এক ছাত্রের। এগুলো দেখার মত কি কেউ নেই? নুরজাহানদের বাঁচাতে সরকার ওকি কোন ভূমিকা নিতে পারেনা? একি দারিদ্রতা বিমোচন ? নাকি দরিদ্রকে আরো দারিদ্রে রূপান্তরিত করার মিশন?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.