প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ঋণ কেলেঙ্কারিতে সংকটে পড়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক। সরকার গঠিত পরিচালনা পর্ষদ কোনো কিছুর তোয়াক্কা করেনি। ইচ্ছেমতো হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। কোনো আইন বা বিধিমালা নয়, বেসিক ব্যাংকে পরিচালনা পর্ষদই সর্বেসর্বা। এমনকি প্রধান কার্যালয়ের ঋণ যাচাই কমিটি বিরোধিতা করলেও পর্ষদ ঠিকই ঋণের অনুমোদন দিয়েছে।
গ্রাহকদের অর্থ নিয়ে যা ইচ্ছা তাই করেছে ব্যাংকটি। বাংলাদেশের ইতিহাসে এভাবে আর কখনোই ঋণ বিতরণ করা হয়নি। বহুল আলোচিত হল-মার্ক কেলেঙ্কারির সময় পরিচালনা পর্ষদের দাবি ছিল, তারা কিছু জানত না, শাখাই প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের সুযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু বেসিক ব্যাংক করেছে উল্টোটা। পর্ষদই প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের সব আয়োজন করে দিয়েছে।
পর্ষদের মাত্র ১১টি সভায় তিন হাজার ৪৯৩ কোটি ৪৩ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, ‘৪০টি দেশীয় তফসিলি ব্যাংকের কোনোটির ক্ষেত্রেই পর্ষদ কর্তৃক এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া পরিলক্ষিত হয় না। ’ বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন তৈরি করে বলেছে, অধিকাংশ ঋণই গুরুতর অনিয়ম করে দেওয়া হয়েছে। এই ঋণ পরিশোধ বা আদায় হওয়ার সম্ভাবনাও কম। পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে শুরু থেকে গত মার্চ পর্যন্ত বেসিক ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ নয় হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা।
আর এর মধ্যে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকাই দেওয়া হয়েছে গত ১১ মাসে। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান হচ্ছেন শেখ আবদুল হাই। তিনি এরশাদ সরকারের আমলে বাগেরহাট-১ আসন থেকে জাতীয় পার্টির হয়ে একবার সাংসদ হয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমান সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা ব্যাংকে নানাভাবে প্রচার করা হয়। ব্যাংকের পরিচালক ও সরকারের সাবেক একজন যুগ্ম সচিব এ কে এম রেজাউর রহমান গত ১১ জুলাই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব এম আসলাম আলমের কাছে একটি চিঠি দেন।
আবদুল হাই সম্পর্কে তাতে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ছাড়া তাই অন্য কাউকে পরোয়া করেন না তিনি। ব্যাংকের কার্যালয় ও লবিতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তোলা তাঁর ছবিতে ভরপুর। সব সময় এবং সব জায়গায়ই তিনি বলে থাকেন, প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত “কাছের লোক” তিনি। গোটা বেসিক ব্যাংকে এ রকম একটি আবহ অবস্থা তৈরি করেছেন আবদুল হাই। ’ব্যাংক সূত্রগুলো বলছে, কার্যত ব্যাংকটির অধিকাংশ ঋণ বিতরণই হয় এই চেয়ারম্যানের ইচ্ছা অনুসারে।
ব্যবস্থাপনায়ও রয়েছেন চেয়ারম্যানের নিজস্ব লোক। ব্যাংকের সূত্রগুলো বলছে, এভাবে পর্ষদের ঋণ বিতরণের পেছনে দুর্নীতিও রয়েছে। ঋণের একটি অংশ গোপন লেনদেনের মাধ্যমেই এভাবে দেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত রোববার রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ছয়টি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান বেসিক ব্যাংকের এই ভয়াবহ উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন।
বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান দেশে না থাকায় তিনি বৈঠকে অনুপস্থিত ছিলেন। অর্থমন্ত্রী বৈঠকে বলেন, চেয়ারম্যানসহ তিনি পরে একদিন বৈঠক করবেন। তবে বৈঠকে বলা হয়েছে, দেরিতে হলেও নজরদারি বাড়ানোর ফলে পরিস্থিতির খানিকটা উন্নতি হয়েছে। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।