CONNECTION FAILED
বন্ধুগণ,
তোমাদিগের সহিত কত ধরনের কথাইনা বলিয়া সময় কাটাইয়া থাকি। হাসি,কখনওবা তামাশা করি,মাঝে মাঝে ঝগড়াও বাধাইয়া দেই। কিন্তু আজিকে আমার মনখানি তেমন ভালো নাই। কেন জানি দূর্বল মনে হইতেছে। আজিকে আমার অন্তরের গভীরে লুকাইয়া থাকা গোপন ব্যাথা বাজিয়া উঠিতেছে।
আজিকে আমি উহা জানাইতেছি,তবে একখানি কথা, তোমরা ইহা নিজেরা তাহাকে জানাইবার ইচ্ছা প্রকাশ করিও না কিংবা আগ্রহী হইওনা যাহাকে মূল উদ্দেশ্য করিয়া লিখিতেছি। তাহাকে জানাইতে নিষেধ করিতেছি কারন ইহাই যে,সে জানিতে পারিলে যে,আমি তাহাকে আমার মুখ দেখাইতে পারিবো না। মনে মনে নিজে যে কতটুকু ছোট হইয়া যাইবো তা বলিতে পারিবো না।
গত দু’সপ্তাহ আগে নিজ গ্রামে গিয়েছিলাম জেঠতুতো বোনের বিবাহের নেমন্ত্রনে। যেই দিন প্রত্যুষ যাত্রা করিলাম সেই দিনই বৈকালে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হইবে।
পৌঁছাইয়া যাইবো জানি এবং অনুষ্ঠান শুরু হইবার মিনিট দশেক আগেই পৌঁছাইয়াছি।
অনুষ্ঠান শুরু হইতেছে। বরপক্ষের লোকজন কনের হলুদ দিবার উদ্দেশ্যে আসিয়া বাড়ির সিংহ দরজায় অপেক্ষা করিতেছে। তাহাদেরকে গাঁদা আর গোলাপের পাপড়ী ছিটাইয়া বরন করিয়া লইল।
এমন সময়ে আমি যে কই কে তাহার খবর লইবে?মনে হইতেছে দুনিয়াতে কেউ নাই।
হঠাৎ মাথায় আকাশ ভাঙ্গিয়া পড়িতেছে মনে হইতে লাগিলো। একি দেখিতেছি? “পথের ব্যবধান যতই কমিয়া আসিতেছে আমার নিকট তাহার রূপের লাবণ্য ততই বাড়িয়া যাইতেছে। আমি যাহার কথা বলিতেছি তৎক্ষণাৎ আমি তাহার নামখানি মনে করিতে পারিতেছিলাম না। এত উৎসব , হইহুল্লোড়ের মধ্যে একখানি শব্দ কানে আসিয়া মাথায় আঘাত করিলো। শিউলী!!!”
হ্যাঁ পাইয়াছি ।
সে তো আমার চেনা । তাহার নামই তো শিউলী। ক্ষণকিছুকের জন্য অতীত সময়ে হারাইয়া গিয়াছিলাম। সেই বোধহয় সাড়ে সাত বছর আগের কথা।
হাতে হাত রাখিয়া যাহার সহিত দলবল লইয়া খেলা করিয়াছিলাম,গাছের পাতাকে টাকা বানাইয়া আর শুকনা মাটির গূড়াকে চাউল আর চিনি বানাইয়া যাহার সঙ্গে খেলা করিয়াছিলাম;কতবার জানি তাহার কান মোচড় দিয়াছিলাম না হয় কতবার যে তাহার চুলের গোছা ধরিয়া অকারনেই টানিয়া তাহাকে জ্বালাইয়া তাহার ধৈয্যের সীমা অতিক্রম করিয়া কতইনা বিরক্ত করিয়াছি।
হ্যাঁ,সেইতো , সে তো সেই মেয়ে শিউলী। ইহাতে আমি আর সন্দেহর লেশ মাত্র রাখি না,যাহাকে বাড়ীর পাশের রাস্তা দিয়া যাইবার সময় আম কাঁঠালের লোভ দেখাইয়া ক্লাশের দেরী করাইয়া দিয়াছিলাম। নানান রকম বুদ্ধি খাটাইয়া যাহাকে নানান রকম বিভ্রান্তিতে ফেলিয়াছি।
সেইতো সে।
তাকে আবার কাছে পাইয়াছি।
আর মাঝখানে কত না বছর কাটিয়া গেল,আমি কই ছিলাম আর সেই বা কই ছিলো?সে কি আমাকে চিনিতে পারিবে?আর সেই এলোমেলো স্মৃতি বিজড়িত দিনগুলির কথা মনে করিতে পারিবে?
মনে হইলো কে জানি আমার চোখের সামনে হস্ত নাড়াইয়া চোখের পলক ফেলাইবার চেষ্টা করিতেছিল। বোধ হয় অনেকক্ষন যাবত চেষ্টা করিয়া অবশেষে বিফল হইতে গিয়াও সফল হইয়াছে। সে আমাদের মিনু আপা। হুস হইতেই বলিল “কি হইয়াছে?”একটু হাসিয়া আমি আবার বর্তমানে ফিরিয়া আসিলাম।
শিউলীর অনেক পরিবর্তন হইয়াছে।
হয়তোবা,বহু বছর পর দেখিয়াছি বলিয়া এমন বোধ হইতেছে। এমন এক সৌন্দরতা তাহার গায়ে হলুদের শাড়ির সাজে দেখিলে যে কেউই তাহার প্রতি জানিবার আগ্রহ হওয়া স্বাভাবিক।
একবার দেখিলে তৎক্ষণাৎ চোখ ফেরানো কঠিন। মনে হইতেছে যেন কোন বাগানে ফুল ফুটিয়াছে আর মধ্যিখানে বিশেষ ও সবচাইতে সুন্দর ফুলটাই সে।
পাত্রপক্ষ যখন আসন গ্রহন করিল তখন আর চোখকে প্রশ্রয় দিলাম না।
তবুও মনের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করিয়া ফের চাহিতে গিয়া তাহার চোখখানি আমার চোখের উপর আসিয়া পড়িল। আমি লজ্জা পাইয়া ঈষৎ হাসিয়া চোখ নামিয়া ফেলিলাম। সেও আমার দিকে আধো নজর করিতেছে। তাহার চোখের পলকের ওঠানামাটাকে মনে হইতেছে কোন ফুলের কলি ধীরে ধীরে ফুটিতেছে।
তাহার দিকে আবারও একটু একটু নজর করিতে যে মনে হইতেছে সে হয়তোবা আমাকে চিনিয়াছে বা চেষ্টা করিতেছে।
কিন্তু মনে করিতে পারিতেছে না। আবার আমাকে জিজ্ঞাসা করিবার সাহস পাইতেছে না। হয়তোবা নতুন করিয়া আমাকে দেখিয়া তাহার পছন্দ হইয়াছে এবং মনে ভালোবাসার আশা জাগিয়াছে কিংবা জাগিতেছে যাহা আমি আন্দাজ করিতেছি। কথা বলিবার সাহস পাইতেছে না আর মন বলিতেছে একবার যদি সুযোগ পাইতাম।
ব্যাপারটা এমনি বলিব যে, মালা তৈরী করিবার জন্য ফুল আছে বটে কিন্তু সুতা নাই।
এমতাবস্থায় কি হইবে?আর আমার মনে হইতেছে রাজধানী থেকে এতদূর গ্রামে আসিয়া গোলপোস্টের সামনে গোল করিবার উদ্দেশ্যে হাপাইয়া উঠিয়াছি। যেন বাধা দানকারী গোলরক্ষকও নাই আবার খেলোয়াড়ও নাই তবুও গোল হইতেছে না। ইহা কিসের দূর্বলতা,এমনি মুহুর্তে আমার সবল দেহের ক্ষমতা দূর্বল হইয়া পড়িয়াছে।
সে এত সুন্দর যে তাহাকে দেখিবার মুহুর্তে আঁধারে আলো ফুটিবে চন্দ্র মেঘের আড়ালে পড়িয়া গেলেও, অচল থাকিলে আবার সচল হইবে। সে যত কথা বলিতেছে তার প্রতি একরকম দূর্বলতা আর মায়া মমতায় হৃদয়খানি শুধু ভারী হইতেছে।
কিন্তু আমি চাইলেই কি সে তাহার জনম জনমের সাধনার মালা আমার গলায় পড়াইয়া দিবে?শুনিয়াছি মেয়েদের মন খরগোশের মতন চঞ্চল আর ইহা তো সত্যিই যে তাহাদের চলিবার গতি আ্যমিবার মতনই। মনে হইতেছে সে যেন পরীদের দেশ হইতে পলায়ন করিয়া আসিয়াছে। তাহার হাসির মধ্যে এক অপূর্ব নির্মল মাধুরী মিশানো রহিয়াছে।
সন্ধ্যা গড়াইয়া রাত হইতেছে। চাঁদের স্নিগ্ধ আলো।
আকাশ ভরা তারা। গণনা করিলে হয়তো একটাই পাঁচ-ছবার গণনা হইয়া যাইবে;শেষ হইবে না। এদিকে পাত্র পক্ষের যাইবার সময় হইয়া গিয়েছে। তাহারা এক এক করিয়া কনেকে হলুদ দিয়া এখন একত্রে যাইবার যাত্রা করিতেছে।
কিন্তু আমার কি হইবে?শিউলীকে যে একখানা কথা বলিবার দরকার কিন্তু সুযোগ পাইতেছি কই?মনে হইতেছে সেও আমার সহিত কথা বলিবার প্রানপণ চেষ্টা করিতেছে।
ভয়ও করিতেছে বোধ করি। পৃ্থিবী এমনে নিষ্ঠুর যে সে কাহারো জন্য অপেক্ষমান নয়.স্বল্প কিছু সময়ের মায়ার বন্ধন ছিন্ন করিয়া চলিয়া যাওয়া বড়ই কষ্টের।
আবার যে কোনদিন তাহার দেখা পাইবো না সে কথা কে বলিতে পারে?আবারো কি সাড়ে সাত বছর অপেক্ষা করিতে হইবে?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।