বছর ঘুরে আবার চলে এল ৬ সেপ্টেম্বর। ১৯৯৬ সালের এদিনে বিশাল ভক্তকূলকে কাঁদিয়ে বাংলা চলচ্চিত্রের নায়ক সালমান শাহ চলে যান না ফেরার দেশে। খুব অল্প দিনই ছিলেন তিনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনে। ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬। তবে নিয়ে এসেছিলেন অভিনয়ে ভিন্ন মাত্রা।
তাইতো ভক্তরা তাঁর মৃত্যুর এত দিন পরও তাকে স্মরণ করে গভীর শ্রদ্ধায়। সোমবার সালমান শাহ’র ১৪ তম মৃত্যুবার্ষিকী।
৯০-এর দশকে যখন বাংলা চলচ্চিত্র তার ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছিল তখন পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের হাত ধরে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবির মাধ্যমে ঢালিউডে এলেন এবং জয় করলেন সবার হৃদয়। সিনেমা হল বিমুখ বাঙালিদের আবারো হলমুখী করতে যার অবদান সবচেয়ে বেশি বলে মনে করা হয় তিনি বাংলা চলচ্চিত্রে আলোচিত এক নায়ক সালমান শাহ। আসল নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন।
বাবা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মা নীলা চৌধুরী। দুই ভাইয়ের মধ্যে সালমান বড়। ছোট ভাই শাহরান চৌধুরী ইভান। নানাবাড়ি সিলেটে তার জন্ম। ছোটবেলা থেকেই লেখাপড়ার পাশাপাশি অভিনয়ের ওপর দুর্বল ছিলেন।
নবাগত নায়িকা মৌসুমীর সঙ্গে প্রথম ছবিতে জুটি বাঁধলেও পরবর্তীতে শাবনূরের সঙ্গে জুটি গড়ে একের পর এক ব্যবসা সফল ছবি উপহার দেন সালমান। ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ মুক্তির পর মাত্র ৪ বছরের মধ্যেই করে ফেলেন ২৭টি ছবি।
“তোমার প্বার্শে বসে কাটিয়ে দিতে পারি হেমন্তের অজস্র রুপালী রাত। তোমার হাতে হাত রেখে হারিয়ে যেতে পারি উত্তাল বাতাসের সমুদ্রে। তোমার বুকে মাথা রেখে চোখ বুঝে দেখতে পারি স্বর্গের সবকয়টা খোলা জানালা।
” -সালমান ভক্তদের এই আকুতি দূরে ফেলে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর থামিয়ে দিলেন জীবনরথ। অভিমানে না ফেরার দেশে চলে গেলো সালমান শাহ। এক অজানা দুঃখবোধ হয়তো জড়িয়ে ছিল সালমান শাহকে।
মাত্র ২৭ বছর বয়স ছিল তার তখন। ১৯৯৬ সালের এই দিনে তিনি আত্মহত্যা করেন।
কিন্তু তাদের পরিবারবর্গের দাবী ছিল এটা আত্মহত্যা নয়। তাকে হত্যা করা হয়েছে।
মৃত্যুর আগের দিন রাতে পরিচালক মতিন রহমানকে সালমান শাহ বলেছিলেন, “বাবা, আমি ভালো হয়ে গেছি। আগামীকাল থেকে আর কাউকে কষ্ট দিবোনা। তোমাদের চেষ্টায় আজ আমি ইমন থেকে সালমান।
আগামীকালের সকাল হবে সবার জন্য প্রিয় সকাল। ” উল্লেখ্য, পরিচালক মতিন রহমানকে বাবা বলে ডাকতো সালমান। পরেরদিন সকাল বেলা চলে গেলো সালমান চিরতরে ভালো হওয়ার পথে। অথচ এতো বছর পরও জানা হলো না সালমান শাহ’র বুকের জমিনে কি এতো বেদনা বাসা বেধেঁছিলো?
তার এই উক্তি থেকে বোঝা যায় তার পক্ষে আত্মহত্যা করা স্বাভাবিক ছিল। যাহোক, যে চলে গেছে তাকে নিয়ে সমালোচনা করার দরকার নেই।
তাকে আমরা স্মরণ করছি হৃদয়ের গহীন থেকে। সালমানের মৃত্যু নিয়ে হাজারো বিতর্ক থাকলেও তার অকালে চলে যাওয়া যে বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি, তা নিয়ে কারোর মধ্যেই কোনো দ্বিমত নেই।
এক নজরে সালমান শাহ
জন্ম : ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭০
বাবা : কমর উদ্দিন চৌধুরী
মা : নীলা চৌধুরী
আসল নাম : শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন
স্ত্রী : সামিরা
প্রথম চলচ্চিত্র : কেয়ামত থেকে কেয়ামত
শেষ ছবি : বুকের ভেতর আগুন
প্রথম নায়িকা : মৌসুমী
সর্বাধিক ছবির নায়িকা : শাবনূর (১৪টি)
মোট ছবি : ২৭টি
বিজ্ঞাপনচিত্র : মিল্ক ভিটা, জাগুরার, কেডস, গোল্ড স্টার টি, কোকাকোলা, ফানটা।
ধারাবাহিক নাটক : পাথর সময়, ইতিকথা
একক নাটক : আকাশ ছোঁয়া, দোয়েল, সব পাখি ঘরে ফেরে, সৈকতে সারস, নয়ন, স্বপ্নের পৃথিবী।
মৃত্যু : ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।