চারিদিকে দেখো চাহি হৃদয় প্রসারি
আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র রায়
সার্ধ শতবর্ষের শ্রদ্ধার্ঘ
জন্ম - ১৮৬১ সালের ২রা অগষ্ট
বাল্যজীবন
বর্তমান বাংলাদেশের খুলনা জেলার রাড়ুলি গ্রামে প্রফুল্লচন্দ্রের জন্ম হয়। এই গ্রামের পাশ দিয়েই বয়ে গিয়েছে কপোতাক্ষ নদ। গ্রামের পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে তিনি কোলকাতায় আসেন, পিতার আগ্রহে ভর্তি হন কলেজ স্ট্রিটের হেয়ার স্কুলে। পরে ভর্তি হন মেট্রোপলিটন ইনস্টিটিউটে, যার বর্তমান নাম সুরেন্দ্রনাথ কলেজ। বিজ্ঞান আর সাহিত্যে তাঁর ছিল গভীর আগ্রহ।
সেক্সপীয়র ছিলেন তাঁর প্রিয় নাট্যকার। হ্যামলেট নাটক গোটাটা তিনি মুখস্থ বলতে পারতেন। এই সময় বহিরাগত ছাত্র হিসেবে যেতেন প্রেসিডেন্সি কলেজে, সেখানে অধ্যাপক আলেকজাণ্ডার পেডলারের ক্লাসে মুগ্ধ হয়ে তিনি রসায়নের গবেষক হবার সিদ্ধান্ত নেন।
গবেষক
১৮৮২ সালে গিলক্রাইস্ট বৃত্তি নিয়ে নিয়ে তিনি পড়তে যান এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৮৮৭ সালে পান ডি এস সি ডিগ্রী।
দেশে ফেরার পর শুরু হয় রসায়নের অধ্যাপণা গবেষণা ও বিভিন্ন সামাজিক কাজ। ঘি সরষের তেল ও বিভিন্ন ভেষজ উপাদান নিয়েই তিনি প্রথম গবেষণা শুরু করেন। ১৮৯৪ সালে এশিয়াটিক সোসাইটির জার্নালে তাঁর প্রথম গবেষণা পত্রের নাম ছিল – ‘ অন দি কেমিক্যাল একজামিনেশন অফ সার্টেন ইন্ডিয়ান ফুড স্টাফস, পার্ট ওয়ান, ফ্যাটস অ্যাণ্ড অয়েলস’। পরবর্তীকালে প্রফুল্লচন্দ্রের গবেষণার মূল বিষয় ছিল নাইট্রাইট যৌগ নিয়ে কাজ, যা তাঁকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেয়। ৭৫ বছর বয়েস পর্যন্ত বিজ্ঞান গবেষণায় স্বীকৃতির অন্যতম ক্ষেত্র ‘নেচার’ পত্রিকায় তাঁর লেখা নিয়মিত প্রকাশিত হয়।
শিক্ষকতা
প্রেসিডেন্সি কলেজে অধ্যাপণা কালে প্রফুল্লচন্দ্র ছাত্র বৎসলতার পরম দৃষ্টান্ত হয়ে থেকেছেন। তাঁর বিখ্যাত ছাত্রদের মধ্যে ছিলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, নীলরতন ধর, পুলিনবিহারী সরকার, রসিকলাল দত্ত, মেঘনাদ সাহা প্রমুখ। বিজ্ঞান শিক্ষার পাশাপাশি প্রফুল্লচন্দ্র তাঁর ছাত্রদের নৈতিক স্বাদেশিক শিক্ষাতেও দীক্ষিত করেছিলেন। তিনি তাঁর ছাত্রদের বলতেন, “গরীব মানুষের পয়সায় লেখাপড়া শিখছিস। এদের কৃতজ্ঞতার ঋণের বোঝা কিন্তু একদিন ফিরিয়ে দিতে হবে।
” ছাত্রদের নিয়ে প্রফুল্লচন্দ্র বন্যা মহামারী দুর্ভিক্ষ – সব সময়েই আর্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলতেন, “আমার ছাত্ররা সর্বদাই আমার প্রিয় বন্ধু ও সঙ্গী। আমি তাঁদের সুখ ও দুঃখের ভাগ নিই এবং তাদেরই একজন বলে মনে করি। ”
স্বাদেশিকতা
আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র স্বদেশী আন্দোলনের প্রথম পর্যায় থেকেই আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন। ১৯০৫ এ বঙ্গভঙ্গর ঘোষণাকে কেন্দ্র করে যখন বাংলায় বিপ্লবী আন্দোলন সক্রিয় হয়ে ওঠে, তখন গোপনে অস্ত্র ক্রয়ের জন্য তিনি বিপ্লবীদের অস্ত্র সাহায্য করতেন।
১৯১৬ সালে কোলকাতায় তিনিই প্রথমবারের জন্য মহাত্মা গান্ধীর জনসভার আয়োজন করেছিলেন। ১৯১৯ সালে কোলকাতার টাউন হলে রাউলাট বিলের বিরোধিতায় আয়োজিত জনসভায় ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি বলেন, “ দেশের জন্য প্রয়োজন হলে বিজ্ঞানীকে টেস্ট টিউব ছেড়ে গবেষণাগারের বাইরে আসতে হবে। বিজ্ঞানের গবেষণা অপেক্ষা করতে পারে, কিন্তু স্বরাজের জন্য সংগ্রাম অপেক্ষা করতে পারে না। ”
স্বদেশী শিল্পের বিকাশ
ব্রিটিশ শিক্ষা পণ্য প্রভৃতি বর্জন করে দেশীয় উদ্যোগ বিকাশের যে চেষ্টা স্বদেশী যুগে শুরু হয়েছিল, ব্রিটিশ শিল্প বাণিজ্যের বাইরে দেশীয় রসায়ন শিল্পকে দাঁড় করানোর সেই তাগিদ থেকেই প্রফুল্লচন্দ্র বেঙ্গল কেমিক্যাল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ১৮৯২ সালে বেঙ্গল কেমিক্যাল ওয়ার্কস প্রতিষ্টিত হয়, ১৮০১ সালে তাই বেঙ্গল কেমিক্যাল অ্যাণ্ড ফার্মাসিটিক্যালস ওয়ার্কস লিমিটেড নামে আত্মপ্রকাশ করে।
১৯২৬ এ বেঙ্গল কেমিক্যাল ১৪০০ দেশীয় শ্রমিকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে। আরও বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান তাঁর আনুকুল্য পেয়েছিল, যেমন বেঙ্গল পটারি (কোলকাতা পটারি নামে শুরু হয়), বেঙ্গল এনামেল, ক্যালকাটা সোপ ওয়ার্কস, মার্কেনটাইল মেরিন, ন্যাশানাল ট্যানারিজ প্রভৃতি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।