এই ব্লগটি নোমান বিন আরমান'র দায়িত্বে প্রবর্তিত। এখানে মাঝেমধ্যে তিনি আসেন। numanbinarmanbd@gmail.com
(রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি থাকছে। আমাদের সময় ২৫ আগস্ট ২০১০) (রিপোস্ট)
নোমান বিন আরমান : ‘খোদার কাছে চিঠি’ শিরোনামে মে-জুনের দিকে একটি লেখা শুরু করেছিলাম। শেষতক এটি আর শেষ করা যায়নি।
যদিও এই লেখার ব্যবহারিক কোনো মূল্য ছিলো না, তবুও লিখেছিলাম এর ভেতরে ক্ষোভ আর দ্রোহ ছিলো বলে। ক্ষোভ ছিলো নিজের প্রতি। দ্রোহ ছিলো সময়ের প্রতি। কিন্তু এই ক্ষোভ আর দ্রোহ কেনো যেনো তখন জ্বলে ওঠেনি। ওই লেখায় বলতে চেয়েছিলাম, খোদা! আগামি পাঁচ বছর বা তারও বেশি কিছু সময় তুমি আমাদের নিস্কৃতি দাও।
সময় দাও। মুক্তি দাও তোমার বিচার থেকে। কেনো? কারণ তুমিই ভালো জানো। এই সময় বা তারও বেশি কিছু সময় আমরা তোমাকে স্মরণ করতে পারবো না। তোমার নামে কাউকে ডাকতে পারবো না।
তোমার কথা বলতে পারবো না। ইসলামে থাকতে পারবো না। এই না পারাকে, আমাদের ‘অক্ষমতা’-কে তুমি ক্ষমা করো। লেখার এইসব বিষয় যখন ভাবনা ও কলমে তখন প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকে আবারও শোনা গেলো, তার সরকার ইসলামের বিরুদ্ধে যেয়ে কিছু করবে না। সম্ভবত, এই আশ্বাসে কলম কিছুটা শীথিল হলো।
লেখাটি শেষ করা হলো না। ভাবলাম “দেখি ব্যাটা কী করে”।
দেখতে যেয়ে জুলাইয়ে আমার জন্যে অপেক্ষা করলো আগুনপোড়া একটি দিন। মৃত্যু সময়। যেদিন খবরের কাগজে লাল হরফে লিখা হলো, ধর্মভিত্তিক রাজনীতি থাকছে না, সেই দিনের চে’ কষ্ট আর আমার আসেনি।
সেই দিনের চে’ বেশি লজ্জা আর আমার হয়নি। এই আগুনপোড়া দিন আর মৃত্যুসময় পাড়ি দিয়ে কষ্ট ও লজ্জা নিয়ে আমি বেঁচে আছি! কিন্তু কেমন বেঁচে থাকা _ সে আমি জানি না। জানি না, আরো কতটা মৃত্যু সময় আমাকে পাড়ি দিতে হবে! কিন্তু কেনো এই অনিশ্চয়তা? কেনো এই মৃত্যু সময়ে স্বদেশ?
শুরুতেই একটি দ্রষ্টব্য দিয়ে রাখা দরকার মনে করছি। কেউ যদি ভাবেন, ব্যক্তি ইসলামের রাজনীতিকে সাপোর্ট করার জন্যে আমি এখানে অশ্র“ নিবেদন করছি, তবে আমার প্রতি অবিচার করা হবে। আহত করা হবে আমার নির্বাক বোধকে।
যেমনটা আমি কামনা করি না। আমরা মনে করি, ইসলামের নামে ব্যক্তি রাজনীতির চর্চাই বরং আমাদের এই মৃত্যুসময়ে দাঁড় করিয়েছে। আমাদের ভুল, লোলুপ আর লেজুড়ে এবং অনভিজ্ঞ রাজনীতির মাশুল এখন গোণার সময় হয়েছে। আমাদের কর্মফলই এখন আমাদের কর্ণকুহল বিদীর্ণ করছে। ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধের খবর শোনাচ্ছে।
কারণ আমরা দেখেছি একশ্রেণীর ভুল ব্যক্তির লোলুপ নেতৃত্বের কারণে ইসলামি রাজনীতি তার স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্য আর শক্তি হারিয়েছে। এদের লালসা ইসলামকে রাজনৈতিক ভিখেরি করেছে। কথাগুলো শুনতে খারাপ শোনালেও বলতে হচ্ছে, এদের ক্ষমতালিপ্সা এতোটাই উগ্র হয়েছিলো যে, দু’চারটি আসন বা মন্ত্রীত্বের লোভে এরা ইসলামকে নিশ্চিন্তে ভুলে গিয়েছে। নিজেদের লোকদের পায়ে দলেছে। ফলত ক্ষমতার ব্যাপারিরা টের পেয়ে গেছে ‘ইসলামি নেতাদের’ ভেতরের ইচ্ছেটা।
তাই পাল্লা ভারী রাখার জন্যে দুয়েকবার এদের করুণা করেছে। আসন দিয়েছে। এই করুণা যে ভিক্ষের চেয়ে বেশি অপমানের ছিলো, এটা তখন না বুঝলেও এখন নিশ্চয় এরা টের পাচ্ছেন।
এদেশে কওমির আলেমদের রাজনীতিতে আসাটা ছিলো হঠাৎ করে। হফেজ্জেী হুজুরের ‘তাওবার রাজনীতির’ আহবানের মাধ্যমে।
তার এই আসাটা ভুল ছিলো না। ভুল হয়েছে পরবর্তীতে যারা এর হাল ধরেছেন তাদের। এরা অনেকেই হাফেজ্জির রাজনীতিতে আসার কারণ এবং তাদের রাজনীতির কার্যকর ও দূরদর্শী কোনো সম্পর্ক তৈরি করতে পারেননি। এরা অনেকেই ভেবেছেন, ডাক দিলেই বুঝি হাফেজ্জির মতো সাড়া ফেলা যাবে। লোকে তাকে ‘প্রেসিডেন্টের’ যোগ্য মনে করবে।
ভোট দেবে। এমনটা যে ভুল ছিলো তা তো এই এতো বছরে প্রমাণ হয়েছে। তাদের এই ধারণা ভুল হয়েছে নিজেদের অনভিজ্ঞতার ফলে। কারণ এরা কেউই রাজনীতির মানুষ ছিলেন না। প্রত্যেকেই এসেছেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে।
তাও দারসে নেজামির কওমি মাদরাসা। কাজেই রাজনীতির আলো-আঁধার এদের জানা থাকার কথা ছিলো না। কিন্তু ইলমের মতো রাজনীতির ইলমও যে চর্চা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে শিখতে হয় এমনটা সম্ভবত অনেকে আন্দাজই করেননি। ফলত স্বদেশ ও অন্যদেশের রাজনীতি নিয়ে এরা স্ট্যাডি করেননি। উত্থান-পতনের খবর রাখেননি।
বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক দল থেকে কর্মকৌশল শেখার গরজ অনুভব করেননি। ঘুরে ঘুরে দেখেননি কীভাবে চলছে স্ব সময়ে দুনিয়ার রজনীতি। এই অনুভূতিও হয়তো অনেকের ছিলো না। ফলে যেটি হয়েছে, একটি দেশে সফর নিয়ে এদের মধ্যে বিভ্রান্তি ও অপপ্রচার ছড়াতে সময় লাগেনি। সে দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো তো দূরের বরং একে কেন্দ্র করেই নিজেদের শক্তি সামর্থকে এরা নিজ উদ্যোগে গোরোস্থানে পাঠিয়েছেন।
‘ইসলামি রাজনীতি’ ভুলে নিজেদের নিয়ে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ির রাজনীতিতে শক্তি প্রদর্শন করেছেন। আর এভাবেই একটি অপার সম্ভাবনাকে হত্যা করা হয়েছে। না হয় আজ কেনো এমন শুনতে হচ্ছে। যে দেশের মাঠি ও মানুষ ইসলামের বিরুদ্ধে একটি বর্ণ বরদাশত করেনি, সে দেশে আজ বলা হচ্ছে, ইসলামি রাজনীতি করা যাবে না। এ কোন দেশ _ বাংলাদেশ?
০ দুই ০
ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে দেশকে বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরিয়ে নেয়ার সরকারি ইচ্ছার কারণে।
বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যেতে একটি আবেগকেই শুধু অনেকে নানান মোড়কে হাজির করছেন। এ ছাড়া এর ভিন্ন কোনো ফজিলত আছে বলে আমার মনে হয় না। আবেগটি হচ্ছে যুদ্ধজয়ী দেশের ‘প্রথম সংবিধান’। ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান থেকে স্বাধীনতা লাভ করে ’৭২-এ বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন হয়। নতুন এই সংবিধান নিয়ে বিতর্ক ছিলো খোদ ওই সময়ই।
এখন যাকে ওই সংবিধানে ফিরে যাওয়ার ‘বিশেষ কমিটির’ কো-চেয়ারম্যান করা হয়েছে এই সুরঞ্জিত সেনই সে সময় ওই সংবিধানকে সমর্থন করেননি। অথচ আজ তিনিই বড় গলায় বলছেন, ওই সংবিধান ছাড়া দেশকে এগিয়ে নেয়া যাবে না। ভয়টা এখানেই! কারণ যে সংবিধানের বিরোধিতা করলেন সেন, আজ তিনিই ওই সংবিধানকে ফিরিয়ে আনার সিপাহসালার। মাজেজাটা কী? আমাদের জানা নেই এর মাধ্যমে সুরঞ্জিতরা কোন দিকে এগিয়ে নিতে চান এই দেশকে।
বাহাত্তরের সংবিধানের চারটি মৌলনীতির মধ্যে রয়েছে, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা ও জাতীয়তাবাদ।
বলা হচ্ছে এই মূলনীতিগুলোর আলোকেই বা এই মূলনীতি চারটি প্রতিষ্ঠার জন্যে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিলো। এই বক্তব্য মানতে অসুবিধা ছিলো না যদি এই মূলনীতির আলোকে যুদ্ধ শুরুর আগেই সংবিধান প্রণয়ন হতো। কিন্তু আদতে সেটি হয়নি। যা হয়েছে দেশ স্বাধীন হবার পর সংবিধান প্রণয়ন হয়েছে। আর মুক্তিযুদ্ধ তো হয়েছিলো রাষ্ট্রীয় নির্যাতন ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে।
সংবিধান প্রণয়ন বা এর মূলনীতি চয়ন তো দূরের _ একটি নতুন দেশ গ্রহণ করারও তো পূর্ব প্রস্তুতি ঢাকার তখন ছিলো না। আর এ কারণেই তো পাকবাহিনী ২৬ মার্চ রাতের আঁধারে নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছিলো। তাদের নেয়া এই সুযোগই ‘পূর্ব পাকিস্তানকে’ বাংলাদেশের আকাশ উপহার দিয়েছিলো। এরপর ৯ মাস যুদ্ধ করে, রক্ত, প্রাণ আর ইজ্জতের বিনিময়ে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ স্বাধীন হয়েছে। নাম পেয়েছে বাংলাদেশ।
এসব তো কারো ভুলে যাবার কথা নয়। ‘পূর্ব পাকিস্তানে’র এই কঠিন সময়ে যারা দেশেই ছিলেন না তাদেরই কেউ কেউ বাংলাদেশের সংবিধান প্রণেতা হয়ে গেলেন। আর এরাই ঠিক করলেন স্বাধীন দেশের সংবিধানের মূলনীতি। স্পষ্ট করে লিখলেন, ধর্মের নামে কোনো রাজনীতি এদেশে করা যাবে না। সেলুকাস আর বলে কাকে! যেনো বা একটি ধর্মযুদ্ধের পর দেশ স্বাধীন হয়েছে! তাই এখানে ধর্মের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক নিষেধাজ্ঞাটি স্পষ্ট করে তারা টেনে আনলেন।
আর এই ধর্ম বলতে যে প্রধানত বা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ইসলামকেই তারা টার্গেট করেছেন তা বোধ করি ব্যাখ্যার দরকার নেই।
তাদের এই ‘মূলনীতি’র আলোকে যে রাষ্ট্র চালানো সম্ভব ছিলো না এটি তো শেখ মুজিবও বুঝে ছিলেন। আর এই বুঝেছিলেন বলেই ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ সংবিধানের প্রধান হয়েও বাংলাদেশকে ইসলামি সম্মেলন সংস্থা ওআইসির সদস্য বানিয়েছিলেন। এবং নিজে উপস্থিত হয়ে ওখানে ভাষণও দিয়েছিলেন। কারণ তিনি স্পষ্ট দেখছিলেন বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু কারা হবেন।
কিন্তু শেখ মুজিবকে এই পথে বেশি আগানোর সুযোগ শেষ পর্যন্ত অনেকে দেয়নি। শেখ মুজিব যেটি বুঝতে শুরু করেছিলেন বর্তমান আওয়ামীলীগ সেটিকে ভুলতে শুরু করেছে। এটি যে তাদের জন্য বড় দুর্ভাগ্য _ তা বুঝতে খুব সময় লাগবে না।
এটি সত্য, বাংলাদেশ ওআইসির সদস্যপদ পেলেও তখনও সংবিধানের মুলনীতি থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ নীতিটি বাতিল করা হয়নি। এটি বাতিল হয়েছে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে।
জেনারেল জিয়াউর রহমান ক্ষমতা গ্রহণ করার পর এই সংশোধনী এনে সংবিধানের শুরুতে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম ও ‘ধর্মনিরপেক্ষতার’ স্থলে আল্লাহর ওপর ‘যাবতীয় কার্যাবলীর’ আস্থা বাক্য সংযোজন করা হয়। তারও পরে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা গ্রহণ করে দেশটির রাষ্ট্রীয় পরিচয়ে ইসলাম শব্দটি সংযুক্ত করেন। তখন থেকেই দেশটির রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। সংবিধানের এইসব সংশোধনীকে হাইকোর্ট বাতিল করার পর গত জুলাইয়ে সুপ্রীমকোর্টও একই রায় দেন। সুপ্রীমকোর্টেরও একই রায়ের পরই পরিস্কার হয়ে গেছে এদেশে ইসলামি রাজনীতি করার আর অনুমতি নেই।
‘সংবিধানপ্রণেতারা’ এমনটাই বলছেন। আপাতত রাজনীতির কথা বলা হলেও দিনে দিনে যে ইসলামের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার এই তালিকা আরো দীর্ঘ হবে তা কারো বুঝতে না পারার কথা নয়। আর ভয়টা আমাদের এ কারণেই। নিষেধাজ্ঞায় আসতে পারে মসজিদ, মাদরাসার বার্ষিক ওয়াজ, জামাতের নামায এবং তারও পরে .... বলতে পারছি না আর।
সুপ্রীমকোর্টের রায়ের পর একটি ঠেলাঠেলি লক্ষ করা গেছে।
সর্বোচ্চ আদালতের এই রায়ের আগে সরকারের মন্ত্রীদের কেউ কেউ বলছিলেন ৭২-এর সংবিধানে ফিরে গেলে ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হবে। কিন্তু আমরা দেখছি সেই রায়ের পর তাদের সুরে দুশ্চিন্তা ছায়া ফেলেছে। গর্জন হারিয়েছে। এখন তারা এ নিয়ে ঠেলাঠেলি করছেন। সরকারের আইনমন্ত্রী বলছেন, বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কারণে ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে কিনা এটি দেখবে ইসি _ নির্বাচন কমিশন।
আর ইসি বলছে, ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দায় তারা নেবে না। এটি দেখবে সরকার। এই ঠেলাঠেলি কেনো? অস্পষ্ট মেঘকেও এরা ভয় পাচ্ছেন তাহলে!
০ তিন ০
ইসলামি রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে অনেকের ভেতরে সর্বোত চেষ্টা চললেও যাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ হতে পারে সেই ‘ইসলামি দলগুলোর’ যেনো কোনো খবরই নেই। অবশ্য খবর দেয়ার মতো শক্তিটুকু এখন আর তাদের আছে বলে মনে হওয়ার কোনো কারণ দেখি না। এদের শক্তির খুঁটি তো পরীক্ষা আর নির্মূল করে গেছে উদ্দিনরা।
রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের নামেই ‘ইসলামি রাজনীতির’ প্রথম জানাযাটি এটা করে গেছে। তখনই এদের খুঁটির জোর আমরা দেখেছি। দেখেছি ক্ষমতার জন্যে এসব দলের কী তোড়জোড়। নিবন্ধন পাবার জন্যে নিজেদের সংবিধান থেকে ইসলামকে বাদ দিতে কুণ্ঠিত হয়নি এসব ইসলামি দল! আর এখন বাহাত্তরে ফেরার মাধ্যমে এদের দাফন করার আয়োজন যখন চলছে তখন কীইবা করার আছে তাদের। তবুও তাদের কর্মতৎপরতা ও প্রতিক্রিয়া জানতে কথা বলেছিলাম কয়েকটি দলের নেতাদের সাথে।
দেখলাম এনিয়ে তারা খুব একটা চিন্তিত না। বরঞ্চ ‘পাহাড়সম’ একটি ভরসা আছে অনেকের। ভরসা জনতার প্রতি। তাদের মতে সরকারের সব কিছু জনতা হয়তো সহ্য করে যাবে কিন্তু ইসলামকে নিষিদ্ধ করার বিষয়টি তারা সমর্থন বা সহ্য করবে না। কামনা করি, জনতার প্রতি তাদের এই ভরসার জয় হোক।
কিন্তু কুরআনের একটি আয়াত আমাকে প্রায়ই ভাবায়। কোনো জাতি যদি ইসলাম ছেড়ে দেয় তবে আল্লাহ ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন, তাদের বদলে অন্য এক জাতি তিনি আবির্ভূত করবেন। যারা তার হুকুম তামিল করবে। তবে কি খুব শিগগিরই আমাদের সময় ফুরাচ্ছে। অন্য কোনো স¤প্রদায়ের আগমনকে অনিবার্য করে তুলছি না তো আমরা! বোখারা-সমরকন্দের ইতিহাসও তো এমনটাই বলে।
এতো এতো আলেম-ওলামা থাকার পরও তো সেখানে ইসলামকে টিকিয়ে রাখা যায়নি তাদের ভুল সিদ্ধান্ত ও ঘুমের কারণে। আমরাও কি তবে আরেক বোখারা-সমরকন্দের ইতিহাসের উপকরণ হচ্ছি এদেশে! উপমা দিতে এতো দূরে গেলাম কেনো। এই ভারতবর্ষেই তো আশি হাজার মাদরাসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিলো এই সেদিন। এখনও গাছের দিকে তাকালে মনে পড়ে হাজার হাজার আলেম-ওলামাকে এর ডালে ডালে কী নির্মমভাবে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়েছিলো। সেই দিন কি তবে খুব নিকটে!
০ চার ০
সামনে আমাদের জন্যে কী পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে তা নিশ্চিত বলতে পারবো না।
যা বলতে পারি তা হলো, বাংলাদেশের মাণচিত্রের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষার জন্যে ইসলাম অপরিহার্য। না হয় একক ‘প্রতিবেশী’ একটি বৃহৎ রাষ্ট্রের পাশে এদেশের স্বাধীনরাষ্ট্র একসময় প্রশ্ন ও হুমকির মুখে পড়তে পারে। কিংবা পড়বে। এটা আজও হতে পারে বা কাল। হবে যে এতে অন্তত আমার কোনো সন্দেহ নেই।
এ থেকে সুরক্ষার জন্যে একটি অনন্য শক্তি বা বৈশিষ্ট্য বাংলাদেশের দরকার। আর সেটি আগে যেমন বলে এলাম ইসলাম_এর কোনো বিকল্প নেই। কারো সহ্য হোক বা না হোক বাংলাদেশের সব চে’ নিস্বার্থ ও সবসময়ের বন্ধু যে ইসলাম এটি আগেও প্রমাণ হয়েছে। সামনেও হবে। তাই কিছু লোকের ফাঁদে পা দিয়ে ইসলামবিমুখ হলে বাংলাদেশের কোনো বন্ধু থাকবে না।
এটি আওয়ামীলীগের বোঝা দরকার, যদি তারা সত্যি সত্যি শেখ মুজিবকে ভালোবাসে। যদি তারা স্বাধীন বাংলাদেশের মর্যাদায় বিশ্বাস করে।
যারা রাষ্ট্রধর্ম থেকে ইসলামকে বিদায় করার জন্যে উঠেপড়ে লেগেছে আওয়ামীলীগ তাদের জিজ্ঞেস করুক, রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়ায় দেশের কোন ক্ষতিটা হয়েছে। তাদের কোন স্বার্থে আঘাত এসেছে। ইসলাম রাষ্ট্রধর্ম হওয়ায় তাদের কোন কোন কাজ বন্ধ হয়ে আছে।
সবই তো হচ্ছে। আর এর সুযোগও তো তারা নিচ্ছে। তবুও ইসলাম বিরোধিতা কেনো এদের। কারণ এসবের পেছনে লুকিয়ে আছে বাংলাদেশকে রাষ্ট্রবিশেষের মুখাপেক্ষী ও বন্ধুহীন করার সর্বনাশে ইচ্ছা। এরা চাচ্ছে ইসলাম পরিচয়বাহী দেশ ও সংস্থা থেকে দূরে সরে আসুক বাংলাদেশ।
এবং শুধু তাদের হাতের দিকে চেয়ে থাকুক। যাতে যা ইচ্ছে তা-ই তারা ঋণের নামে, সাহায্যের নামে এদেশ থেকে আদায় করে নিতে পারে। এরা চাচ্ছে বাংলাদেশ কেবল তাদের কাছ থেকেই ঋণ নিক। সাহায্য নিক। যাতে ঋণের বদলে এক সময় বাংলাদেশ বাধ্য হয় তার সব প্রাকৃতিক সম্পদ তাদের হাতে তুলে দিতে।
বাধ্য হয় এদেশকে তাদের বন্ধকে দিতে।
ধর্মীয় পরিচয়ে কি খোদার দুনিয়ায় আর কেনো রাষ্ট্র নেই। আছে। গন্ত্রতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, রাজতন্ত্র কিংবা ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ যে তন্ত্র বা পক্ষেই রাষ্ট্র চলুক, প্রতিটি রাষ্ট্রেরই ধর্মীয় পরিচয় রয়েছে। আর একারণেই আমেরিকাকে আমরা খিস্ট্রান রাষ্ট্র বলি।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বাইবেল হাতে শপথ করেন। এতে তাদের গণতন্ত্রের কোনো সমস্যা হয় না। এখন এদেশকে যারা ধর্মনিরপেক্ষ বানাতে মরিয়া এদের সকলেরই তীর্থস্থান ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ ভারত। সেই ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতাই নিষ্ঠুর মুসলিমবিদ্ধেষ ও চরম হিন্দুত্ববাদে ঢাকা। এতে করেও কিন্তু ভারতের ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ পরিচয়ের কোনো লজ্জা হয় না।
আর ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ডের রাজতন্ত্র তো এমনই কঠোর যে, কোনো সদস্য রাজপরিবারের ধর্মত্যাগ করলে সে আর রাজারানি হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। এতেও কিন্তু ওই রাজতন্ত্রের কোনো অসুবিধা নেই। যত অসুবিধা বাংলাদেশের রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হওয়ায়।
একটি দেশের ধর্মীয় পরিচয় বিস্তার হয় কীসের ভিত্তিতে? সংখ্যাগরিষ্ট লোকের ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তিতে।
এই উত্তরটি যতটা সহজ তার চেয়ে সহজেই বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ধর্মীয় পরিচয় হয়েছে ইসলাম। কারণ পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম জাতি বাস করে এই রাষ্ট্রটিতে। এই রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে তারাই রক্ত দিয়েছে সবচে বেশি। আর গণতন্ত্রও তো এই সংখ্যা গরিষ্টের কথাই বলে। তাহলে বাংলাদেশের সংবিধানে বিসমিল্লাহ আর আল্লাহর ওপর আস্থা এবং রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম হতে সমস্যা কী?
ইমেইল :
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।