আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজনীতিতে অসুর দেবতা লড়াই

কবি হওয়ার ভান করি, উদাস হই; ভালোবাসার মাহাত্ব খূঁজি

রাশেদুল হাসান দুই সরকার ও জনগণের মধ্যে এমন বিরোধ সর্বদা লেগেই থাকে। সরকার চায় মতাসীন অবস্থায় মতার ব্যবহার বা অপব্যবহার যে করেই হোক না দলীয় কর্মসূচির বাস্তবায়ন করতেই হবে। এতে কার কি তি হল না হল বুঝা বা দেখার প্রয়োজন নেই। বিরোধটা মূলত এখানেই বাঁধে। শুরু হয় জনগণ বনাম সরকারের লড়াই।

জনগণের সাথে মতাহীনরাও মিলিত হয় প্রতিশোধ নিভৃতে। মতাহনীরা মতায় আসীন হলেও এ লড়াই থামে না বরং অনেক েেত্র বেড়েই চলে। আবার সেই জনগণই শান্তির আশায় ভোটের মাধ্যমে সরকার গঠন করে। প্রশ্ন থেকে যায়- তারপরও কি জনগণের মনে শান্তি ফিরে আসে ? সরকার জনগণের মধ্যে নিরব-সরব লড়াই কি শেষ হয়ে যায় ? পুরাণে দেবতারা সব সময় অসুরদের জ্বালায় অস্থির থাকতেন। আবার অসুররা তপস্যা করলে তাদের বর না দিয়াও থাকতে পারতেন না।

বর দিয়ে শেষে ধাক্কা সামলাতে কষ্ট হতো। রাজনীতির অসুররাও দেবতাদের কম জ্বালাতন করছে না। অতীত-বর্তমান মিলে এ জ্বালাতন কয়লায় রূপান্তরের পথে। রাজনীতির অসুররা পাঁচ বছরের জন্য দেবতাদের কাছ থেকে মেন্ডেট নেয়। আর দেবতারা ও পাঁচ বছরের জন্য নির্বাচন করে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান কারী অসুরদের।

মেয়াদ শেষে অসুররা পুরাণে অসুরদের মত বর নিতে তপস্যা করে। কখনো হাতে তসবিহ, জায়নামায, মুখে রবের ঝপ। শান্তি রার প্রতিশ্র“তি, শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্র“তিতে দেবতারা বর না দিয়াও পারেন না। আবার ঠেলা সামলাইতেও দেবতাদের প্রাণ ওষ্ঠাগত। সময়ের অসুরদের কর্মকান্ড নিয়ে গত পর্বে সামান্য আলোচনার চেষ্টা চালানো হল।

কিন্তু অসুরীয় কর্মকান্ডেরতো আর শেষ নেই। অসুররা দেবতাদের কোনঠাসা করতে নতুন নতুন ফন্দি আঁটত। রাজনীতির অসুরদের আরো কিছু কর্মকান্ড নিয়ে আলোচনা করবো যা দেবতাদের সাথে যুদ্ধের শামিল। রাজনীতির অসুররা মতা নিয়ন্ত্রনের জন্য আঞ্চলিক অসুর যাদের দেবতারা ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকে, তাদের নিয়োগ করত। এ দেশের রাজনীতিতে অসুররা জয়নাল হাজারী, হাসনাত আবদুলাহ, হাজী সেলিম, শামীম ওসমান, মকবুল, কামাল মজুমদারদের মতো অসংখ্য অসুর তৈরী করেছিল।

যারা সর্বদা রাজনীতির দেবতাদের সাথে লেগে থাকত। হত্যা, লুন্ঠন, চাঁদাবাজী, রাহাজানি, ছিনতাই, ধর্ষন, চুরি, ডাকাতির মত নানা কর্মকান্ড করে বেড়াত। সন্ত্রাসী খ্যাত মেঝো অসুররা আবার ছোট অসুর লালন পালন করত। কাস কমিটি নামে, স্টিয়ারিং কমিটি কিংবা নামহীন শত শত ক্যাডার পুষে মতা নিয়ন্ত্রন করত। আর এসব ছোট অসুররা তাদের অসুরীয় কাজ করে বেড়াত বুকে হাত দিয়ে।

মানুষের হাঁস, মুরগী, গরু-ছাগল এমনকি েেতর ফসলও রা পেত না এসব অসুরদের হাত থেকে। রাজনৈতিক অসুরদের শেল্টারে বেড়ে ওঠা এসব অসুরদের দৌরাত্মে টু শব্দ করার সাহস পায়নি দেবতাখ্যাত জনগণ। চোখের সামনে খুন, ধর্ষনসহ নানা অপকর্ম চোখ বুঝে সহ্য করতে হয়েছে। এখনও সহ্য করতে হচ্ছে। প্রতিদিনই ঘটছে হত্যা, খুন, ধর্ষন।

অপরাধ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি বছর জানুয়ারী থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুনের ঘটনা ঘটেছে তিন হাজার ২৪২ টি। ছিনতাই ৯৮৯, আইনশৃঙ্খলা বিঘœকারী অপরাধ এক হাজার ৪৬, ডাকাতি ৬১৯। উলেখিত সময়ে দুই হাজার ২৩০ টি ধর্ষন, ৯ হাজার ৬৪৯ টি নারী নির্যাতন, ৭৯৩ টি শিশু নির্যাতন, ৬৫৩ টি অপহরন, দুই হাজার ৬২০ টি সিঁদেল চুরি সহ মোট সাত হাজার ৬৪ টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে কেবলমাত্র গাড়ি চুরি হয়েছে এক হাজার ৪৪৬ টি ! বিগত নয় মাসে থানায় মোট মামলা হয়েছে এক লাখ ১৮ হাজার ৯৭৬ টি। সন্ত্রাসীদের সাথে পুলিশের নির্যাতন পালা দিয়ে বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ উদ্ভিগ্ন।

রাজনীরিত অসুরদের বিগত নয় মাসের ফিরিস্তি এখানে দেখানো হল। নথিভূক্ত এসব ফিরিস্তির ভেতরে কতগুণ দৌরাত্ম বিদ্যমান তা বলার আর অপো রাখে না। সহস্র নির্যাতন লোকলজ্জার ভয়ে আলোর মুখ দেখে না। নথিভূক্ত হবার কোন লণতো এতে থাকেই না। রসু খাঁদের মত অসুরদের নির্যাতনের কতটা থানায় পা পেলে ! হাজারীদের সহস্র অপরাধের মামলা হয় গুটিকয়েক।

রসু খাঁ ! নিজ জবানিতে বলেছে তার নির্যাতনের শিকার অর্ধশত নারী। কিন্তু থানায় অভিযোগ ১১ টির মতো। হাসনাত আবদুলাহ, হাজী সেলিমদের নির্যাতন অত্যাচারের নথি হাতে গোনা হলেও এর সংখ্যা কিন্তু হাতে গোনা নয়। ছোট বড় সব অসুররা তাদের দৌরাত্য চালিয়ে যাচ্ছে। ধর্ষণ এবং ধর্ষণ শেষে সেই ধর্ষণের সিডি বাজারে ছেড়ে নির্যাতনের মাত্রা কতটুকু বাড়ছে ল্য করেছেন ! পুরাণের অসুররাও অনেক ধর্ষণ করেছে তবে সেটা সিডি করার সাহস পায়নি।

আর মতার অসুররা এতই মতাবান যে দিব্যি তা করে বেড়াচ্ছে ! বোঝা যায় পুরাণের অসুরদের চেয়ে রাজনীতির অসুরদের কর্মকান্ডে বাঁধা দেয় না। আর দিলেও দেবতারা সফল হয়না বেশির ভাগ েেত্রই। অসুররা তাদের কালো হাতের থাবা বিস্তার করে রাখে কোর্ট কাচারি এমনকি আদালত পর্যন্ত। রাজনীতির প্রতিটি েেত্র অসুরদের বংশবিস্তার ঘটে। অসুররা তাদের মতা ধরে রাখার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করে।

গত পর্বে এনকাউন্টার, রিমান্ডের কাহিনী এবং এ রিমান্ড এবং এনকাউন্টারের মাধ্যমে কিভাবে মতার অসুররা মতা ধরে রাখার কৌশল নেয় তার স্বচ্ছ চিত্র উপস্থাপন করা হল। সন্ত্রাসী বা স্থানীয় অসুর সৃষ্টির মাধ্যমে আবার সেই স্থানীয় অসুররাও কিভাবে আদিপত্য বিস্তার করে এবং এ অসুররা বিগত নয়মাসে কতটা সফল, অসুরীয় কর্মকান্ড তার হিসেব প্রদান করা হল। কিন্তু অসুরদের অপকৌশল কি এখানেই শেষ ? পুরাণের অসুরদের মত রাজনীতির অসুররাও বোল পাল্টায়, দল পাল্টায়, নিয়ম-নীতি পাল্টায়, কর্মকৌশলের ধরণ পাল্টায়। কখনো ভালো মানুষ সেজে দেবতাদের তি করতে আপ্রাণ চেষ্টায় মত্ত থাকে। মতার অসুররাও বোল পাল্টায়, দোল পাল্টায়, বেশ-ভূষন পাল্টিয়ে বিব্রত করতে চেষ্টা করে।

রাজনীতির অসুরদের এমনই অভিনব কৌশলের নাম জঙ্গিবাদ। বরাবরই জঙ্গিবাদের সাথে সরকারের উচ্চ মহলের সাথে সম্পর্কের গল্প শুনে আসছি। স¤প্রতি কুষ্টিয়ায় সরকারী দলের অন্যতম মহিলা নেত্রীর সাথে চরমপন্থী সংগঠনের যোগসাজেশ এবং ঐ চরমপন্থী সংগঠনের হয়ে অস্ত্র সরবরাহের সময় পুলিশেল হাতে ধরা পড়ে। শায়খ রহমান, বাংলা ভাইদের সাথে রাজনীতির অসুরদের মধ্যে কেমন সম্পর্ক ছিল সে গল্প বলে লেখার গতর বাড়াতে চাই না। রাজনীতির অসুররা সবই করতে পারে।

সারাদেশে বোমা হামলা এবং আত্মঘাতী হামলার মাধ্যমে মতা পাওয়া নাম করে মতা রার কাজ করেছেন এ কথা ওপেন সিক্রেট। এবং কি এখনো এসব চরম পন্থী সংগঠন ও জঙ্গি সংগঠনগুলো সরকার বেশী অসুরের হয়ে কাজ করছে। এসব সংগঠনের সাথে সরকার বা সরকার দলীয়দের কেমন সম্পর্ক আছে এবং সে সম্পর্কের দরুন কেমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে তার একটা নজির পেশ করার চেষ্টা করছি। বিগত চারদলীয় জোট সরকার চারটি জঙ্গি সংগঠন নিষিদ্ধ ঘোষণা করার পর গত ২২ অক্টোবর হিজবুত তাহরীর নিষিদ্ধ ঘোষণা করে বর্তমান সরকার। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে নিষিদ্ধ ঘোষণার পরও সরকার নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন হিজবুত তাহরীরের কোন নেতা গ্রেফতার করেনি।

নিষিদ্ধ ঘোষিত হবার পরও সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একটি মামলাও হয়নি ? কেমন করে তারা দলীয় কর্মকান্ড বজায় রাখে। ওয়েবসাইট খোলা রাখাসহ গোপন মিটিং করে। সংগঠনটির কার্যক্রম দেশে জননিরাপত্তার জন্য হুমকি স্বরুপ সরকারের উচ্চ মহলের এমন মন্তব্যের পরও কেন সরকার বা সরকার দলীয় নেতারা । জঙ্গিবাদের কথা বললে যাদের গায়ে ফোঁসকা পড়ে যেত জঙ্গিবাদ আজ গাড়ে সওয়ার হওয়ার পরও নিশ্চুপ আপনাদের কি ভাবায় না? শুধু নিষিদ্ধ ঘোষণা করেই ান্ত ছিল সরকার। আর অন্যদিকে নিষিদ্ধ ঘোষিতরা কি করছে একটু খেয়াল করুন।

পত্রিকায় প্রতিবাদলিপি পাঠায়, গোপন মিটিং করে দলকে সক্রিয় রাখতে। শেষে কি হল। আশকারা পেয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ স ম আরেফিন সিদ্দিককে হত্যার হুমকি দিয়েছে। ব্যাপারটা একটু ভেবে দেখুনতো? সরকারের সুযোগ দেয়ার ফলে অস্বস্থির মধ্যেই না দিনাতিপাত করতে হচ্ছে ভিসিকে। কিন্তু সরকারের এ নিলিপ্ততা কেন ? কেন নিষিদ্ধ ঘোষণার এতদিন পরও নেতাদের গ্রেফতার করা হয়নি ? তাহরীর নেতা মহিউদ্দিন আহমেদসহ অন্যান্য হোতাদের গ্রেফতার করলে কি এমন পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হতো ? মহিউদ্দিনকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপ বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠালেও সরকারের নিশ্চুপতা রহস্যের দারোজার কম্পনাটা বৃদ্ধি পায়।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের সাথে হিজবুত তাহরীরের সম্পর্কের সত্য কথাটা বলায় সাহস ক’জন বুকে সঞ্চয় করতে পারেন? সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে জঙ্গি প্রীতি-সম্পর্কের ঘটনা এখানে শেষ নয়। যে ১২ টি জঙ্গি সংগঠনের উপর নজরদারী এবং এদের নিয়ে আলোচনা গোয়েন্দাদের নিকট এসব সংগঠনের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত নথিপত্র থাকার পরও এসব জঙ্গি সংগঠনকে নিষিদ্ধ না করে সরে পড়ার জন্য বা গা ঢাকা দেয়ার সুযোগ করে দিয়ে সরকার জঙ্গি বাঁচাতে সহায়তা করছে নাতো? যে ভবে চিনি কেলেঙ্কারী হোতাদের সহায়তা করেছিল বাণিজ্য মন্ত্রী! মতার অসুরদের এ কার্যকলাপ নতুন বিষয় নয়। মতার মসনদ ধরে রাখতে এমন অসংখ্য কৌশল বা অপকৌশলের খঢ়ক চালাতে থাকে। কখনো সফল হয় আবার ব্যর্থতার গানিতে ডুবে চুবে মরতে হয় মতা লোভী অসুরদের। কিন্তু অসুরদের দৌরাত্য কি আর থেমে তাকে? নানাভাবে স্বীয় কর্ম সম্পাদনের চেষ্টায় সবসময় অসুররা ব্যস্ত থাকে।

অসুরদের কর্মকান্ডের খোলস খোলাই রচনার মূখ্য বিষয়। দেবতাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে অসুরদের এ কর্মকান্ডের সরল অংক শেখানোর এ প্রচেষ্টা বৃথা যাবে নাতো ? রাশেদুল হাসান কবি ও প্রাবন্ধিক

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.