"You may like a situation which is not good for you And You may dislike a situation which is good for you." (Al- Quran)
(প্রথম আলোর "ছুটির দিনে" তে প্রকাশিত)
আমি সিঁড়ির নিচে দাঁড়িয়ে আছি শেষের কবিতার একটি কপি হাতে। ভেতরটা ভালো মত দেখে এসেছি। বাকী সবাই এসেছে কিন্তু রূপালী তখনো আসেনি। রূপালী প্রায়ই প্রাইভেটে লেট করে আসে। আজ ও গেট দিয়ে ঢোকামাত্র আমাকে দেখবে এবং স্বাভাবিকভাবেই জিজ্ঞেস করবে আমি এখানে কী করছি! তারপর একথা সেকথায় আসল কথাটা পাড়ব আর শেষের কবিতা গিফ্ট করে ফেলব! আমি গেট দিয়ে বারবার উঁকি দিচ্ছলাম।
‘উফ্! এখনো আসছে না কেন?’ গেট ছেড়ে আমি সিঁড়িতে বসে পড়ি। আমার বুক ধক ধক করছে। এর আগে কোন মেয়েকে কিছুই উপহার দিইনি! এদিকে স্যার যে সেদিন কলেজ থেকে তখনো আসেনি তা আমার জানা ছিল না। হঠাৎ স্যার গেট দিয়ে প্রবেশ করেন!
-স্লামালিকুম স্যার!
-ওয়ালাইকুম। এখানে কী করো?
-স্যার মনির দোকানে গেছে, ওর জন্য বসে আছি।
-তাড়াতাড়ি আসো... স্যার উপরে উঠে যায়। যাক্ বাবা! বাঁচা গেল! ফোঁড়াটা ভালোয় ভালোয় কাটল। এবার ভালবাসার ফোঁড়াটা কাটিয়ে সুন্দর শেপে নিয়ে আসতে পারলেই বাঁচি!
স্যার যাওয়ার রেশ কাটতে না কাটতেই রূপালীর প্রবেশ! অন্ধকার সিঁড়িঘর যেন রূপালী আলোয় আলোকিত হয়ে উঠল। আমাকে দেখেই একটা হাসি দিল। মাধুরী দিক্ষিত ফেল! ডাবল শুণ্য! কিছুই না রূপালীর এই হাসির কাছে!
-কী ব্যাপার তুমি এখানে কী কর?
-লাবণ্যর জন্য বসে আছি!
-লাবণ্য? লাবণ্য নামে তো... ব্যাচে নতুন না কী?
-না! লাবণ্য এই ব্যাচের শুরু থেকেই এখানে আছে!
-মানে?
আমি হাতের পেছন থেকে “শেষের কবিতা” বের করে বলি
-লাবণ্য এখন অমিতের সামনে দাঁড়িয়ে আছে! লাবণ্যকে আজ আরো বেশী সুন্দর লাগছে!
-ও তাহলে এই ব্যাপার!
আমি আবৃত্তি করি স্বরচিত কবিতা-
“ওহে লাবণ্য!
ওহে মোর প্রাণ-মন!
ক্ষুদ্র এ উপহার কর গ্রহন
কর মোরে ধন্য! ওহে লাবণ্য!”
শুনে ও মুচকি মুচকি হাসছে...
-প্রথম কথা হচ্ছে এই লাবণ্য বই একদমই পড়ে না! সেজন্য আমি বইটা নিতে পারছি না!
-কোন সমস্যা নেই! নদীর পাড়ে তুমি শুধু আমার পাশে বসে থাকবে।
আমি তোমাকে পড়ে পড়ে শোনাব!
-আইডিয়াটা ভালই! কিন্তু আমি গল্পের বই পড়ি না কারণ গল্প-উপন্যাস কবিতা আমার অসহ্য লাগে। জীবনটা গল্প-উপন্যাস নয়! আর কবিতা তো নয়ই!
-তোমার বোধহয় কারো সাথে রিলেশান আছে...
-থাকতেই পারে! আমার চেহারা নিশ্চয়ই খারাপ নয়!
-যার সাথে প্রেম করো তিনি তোমাকে কবিতা শোনান না?
-শোনাতে চায় কিন্তু আমি এ্যালাউ করি না...
-উনি কী করে?
-ব্যক্তিগত প্রশ্নের উত্তর দেয়া হবে না!
-আচ্ছা উনি দেখতে কী খুবই সুন্দর?
-এটাও ব্যক্তিগত প্রশ্ন! উত্তর দেয়া হবে না... এই রে প্রাইভেটের দেরি হয়ে যাচ্ছে! আমি যাই... বলেই সে সিঁড়ি দিয়ে উঠে চলে গেল...
আমার কানে তখনো বাজছে,‘... দেরি হয়ে যচ্ছে! দেরি হয়ে যাচ্ছে!... প্রাইভেটের দেরি হয়ে যাচ্ছে!’
কে যেন আমাকে ধাক্কা দিল। আমি সম্বিৎ ফিরে পাই। কিন্তু এ কী! আমি আমার রূমে আসলাম কী করে!
আম্মা পাশ থেকে বলল,‘কীরে কতোক্ষণ থেকে ডাকছি! প্রাইভেটে যাবি না! দেরি হয়ে যাচ্ছে তো!
আমি বুঝলাম আমি স্বপ্ন দেখছিলাম। আমি উঠে পড়ি।
ব্যাগ গোছাতে গোছাতে প্রতিদিনকার মতো সেদিনও ‘শেষের কবিতা’ ব্যাগে ঢোকালাম। রেডি হয়ে আমি স্যারের বাসার দিকে রওয়ানা দিই। স্যারের বাসা আমার বাসা থেকে হাঁটা দূরত্বে। তাই প্রতিদিনকার মতো হেঁটেই রওয়ানা দিলাম। সন্ধ্যার পর পরই স্যার আমাদের পড়াতেন।
পথে যেতে যেতে ভাবছিলাম গত তিনমাস থেকে রূপালী কে যে বইটি দেয়ার চেষ্টা করছি তা কী আজ দিতে পারবো? না কী স্বপ্নের মতোই রূপালী আমাকে প্রত্যাখ্যান করবে? করার সম্ভাবনাই বেশি! ও যে পরিমাণ সুন্দরী...
কেউ না কেউ ওকে প্রপোজ করে ওর সাথে প্রেম করছে বোধহয়! মৃদুমন্দ বাতাস গায়ে মেখে আমি এগিয়ে চলি। সন্ধ্যা হয়ে গেছিল। তাই রাস্তার লাইটগুলো সব জ্বলছে। আগে কখনো খেয়াল করিনি...‘রাস্তার লাইটগুলো যেন রূপালী আলো দিচ্ছে!’
ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে আমি হেঁটে চলেছি। মাতাল হাওয়া আর রূপালী আলো মিলে আমার জন্য যেন স্বপ্নের এক বাহন তৈরী হয়েছে! সেই বাহনে চড়ে আমি যেন এগিয়ে চলেছি অন্য এক রূপালী আলোর খোঁজে...
------------------------------------------
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।