আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শার্শার ওসিকে পেটালেন এমপি আফিল

আপাতত কিছু বলবোনা

শার্শা থানার ওসি এনামুল হককে পিটিয়েছেন যশোর-১ (শার্শা) আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন। শার্শায় এমপির নির্মাণাধীন একটি জুট মিলে ডেকে নিয়ে আজ রোববার বিকেলে ওসিকে মারপিট করা হয়। ওসির করা জিডি থেকে বিষয়টি জানা গেছে। তবে এমপি আফিল উদ্দিন বিষয়টি অস্বীকার করে বলেছেন, মারপিটের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এমপির নামে জিডির প্রতিবাদে শার্শা থানা আওয়ামী লীগ ওসিকে প্রত্যাহারের দাবিতে সোমবার থানা ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

জিডি সূত্রে জানা গেছে, শনিবার রাতে শার্শার লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নের পারুইঘুপি গ্রামের বিএনপি কর্মী আব্দুল হামিদ খুন হন। এ ব্যাপারে থানায় আওয়ামী লীগের কয়েক জন নেতাকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়। পুলিশ ওই মামলার এজাহারভুক্ত এক আসামিকে গ্রেফতার করে। আজ বিকেলে এমপি আফিল উদ্দিনের পিএ আসাদ শার্শা থানার ওসি এনামুল হককে ডেকে নিয়ে যান। সঙ্গে করে মামলার এজাহার নিয়ে যেতে বলেন।

তিনি শার্শা বাজারের অদূরে আফিল উদ্দিনের জুট মিলে পৌঁছুলে এমপি ওই এজাহারের কপি দেখে ওসিকে থাপ্পড় মারেন। এ সময় সেখানে উপস্থিত আফিল গ্রুপের অন্যতম পরিচালক মুসা মাহমুদ ওসি এনামুল হকের জামার কলার ধরে ব্যাপক মারপিট করেন। এ ব্যাপারে ওসি এনামুল হক জানান, বাসা থেকে ডেকে এনে এমপি আফিল উদ্দিন তার কক্ষে ফেলে আমাকে প্রথমে ২-৩টি থাপ্পড় মারেন। এরপর মুসা মাহমুদ তার ইউনিফর্মের কলার চেপে ধরে তলপেটে ২-৩টি লাথি মারে। এ সময় তিনি দৌঁড়ে পালানোর চেষ্টা করলে মুসা লাথি মারতে মারতে ঘরের বাইরে নিয়ে আসে।

পুনরায় তাকে ঘরের মধ্যে এনে এমপি তাকে আরো ৩-৪টি চড়-থাপ্পর মারেন এবং তাকে যশোর ছাড়তে বলেন। অবস্থা বেগতিক দেখে এসআই আসাদ তাকে উদ্ধার করে নিয়ে থানায় আসেন। ওসি বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশ সুপার দিদার আহমেদকে জানান। প্রত্যক্ষদর্শী এসআই আসাদ জানান, যা শুনেছেন সবই সত্য। সরকারি দলের এমপির হাতে যদি এভাবে মারধরের শিকার হতে হয়, তাহলে কীভাবে চাকরি করবো, তাই ভাবছি।

এসপি দিদার আহমেদ বলেন, ওসি এনামুল হকের কাছে শুনেছি এমপি মহোদয় তাকে ডেকে ওই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করার সময় বকাঝকা করেছেন। তবে মারপিট করেছেন বলে তার কাছে কোনো খবর নেই। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে এমপি আফিল উদ্দিন বিষয়টি অস্বীকার করে জানান, তাকে (ওসি) মারপিটের কোন ঘটনাই ঘটেনি। বরং বিএনপি ক্যাডাদের যোগসাজশে খুনসহ একাধিক মামলার আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী হামিদ হত্যা মামলায় নিহতের পরিবারের কারো কাছ থেকে এজাহার না নিয়ে পারুইঘুপি ওয়ার্ড বিএনপি সভাপতি আব্দুল খালেককে বাদি করে আওয়ামী লীগের নেতাসহ একাধিক নিরীহ কর্মীর নামে মামলা রেকর্ড করেন।

এলাকার আওয়ামী লীগের নেতারা এসে তাকে বিষয়টি জানালে তিনি ওসিকে ডেকে এর কারণ জানতে চান এবং নিরীহ লোকজনকে না জড়িয়ে প্রকৃত আসামিদের নামে মামলা করার জন্য বলেন। এর উত্তরে ওসি তার সাথে রূঢ় আচরণ করেন। এতে তিনি ওসিকে তার কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বলেন ও প্রয়োজনে বদলি নিয়ে অন্যত্র যাওয়ার পরামর্শ দেন। এরপর কী হয়েছে, তা তার জানা নেই। এ ঘটনার বিস্তারিত উল্লেখ করে ওসি এনামুল হক বাদি হয়ে এমপি শেখ আফিল উদ্দিন ও মুসা মাহমুদসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে শার্শা থানায় জিডি করেছেন।

জিডি নম্বর ৫৪৬/১০, তারিখ ১৫-১০-২০১০। জিডিতে উল্লেখিত অপর দুজন হচ্ছেন এমপির পিএস আসাদ ও কামাল। ঘটনার খবর পেয়ে এএসপি (সার্কেল) শফিউল্লাহ শার্শা থানা পরিদর্শনে করেন। এদিকে, এমপি শেখ আফিল উদ্দিনের নামে জিডি করায় ওসিকে প্রত্যাহারের দাবিতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আগামীকাল সোমবার শার্শা থানা ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। ঘটনার পর থেকে উপজেলা সদরে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

উল্লেখ্য, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে শনিবার রাতে লক্ষণপুর ইউনিয়নের পারুইঘুপি গ্রামে আরমান বাহিনীর অন্যতম সহযোগী ও বিএনপিকর্মী হামিদ খুন হন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।