আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাকাচৌঃ যে জানোয়ার এখনো মুক্ত। আসেন পড়ে ফেলি তার আকামের নথি

আম্লীগ, বিয়েম্পি, জমাতেচলামি কুনু হালাগো ুন্দাই না
সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী চট্টগ্রাম জেলার রাউজান থানাধীন গহিরা গ্রামনিবাসী ফজলুল কাদের চৌধুরীর পুত্র। সংসদ সদস্য এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা সালাউদ্দীন ১৯৭১ সাল থেকে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক কর্মকান্ডের মূল হোতা। মুক্তিযুদ্ধের সময়কালে সাকা বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ক্রমাগত প্রচারণায় নেতৃত্ব দেয় এবং পাকিস্তানী দখলদার সেনাবাহিনীকে পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করে। তার সকল ঘৃণ্য অপকর্মের কেন্দ্রবিন্দু ছিল তার নিজ শহর চট্টগ্রাম। সুযোগ্য পিতা ফকা চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে এবং ভাই গিয়াসউদ্দীন কাদের চৌধুরী(একজন সাবেক সংসদ সদস্য এবং ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে সংখ্যালঘু জনগণের উপর ক্রমাগত অত্যাচার ও সমাজবিরোধী কর্মকান্ডের জন্য ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনে রাউজান থেকে জনগণের রায় পেতে ব্যর্থ) এবং অন্যান্য আরও সহযোগিদের সাথে চট্টগ্রামে তার নিজ আবাসস্থল গুড’স হিল থেকে স্বাধীনতাযুদ্ধ বিরোধী নানারকম কর্মকান্ড পরিচালনা করে।

১৯৭২ সালের ৮ই জানুয়ারী প্রকাশিত দৈনিক বাংলায় একটি রিপোর্টে সাকা চৌধুরীর যুদ্ধবিরোধী কর্মকান্ড প্রকাশিত হয়, “সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী এবং তার বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরী শত শত যুবকদের ধরে এনে চট্টগ্রামে তাদের গুড হিল বাংলো-তে নিয়ে আসতো এবং তাদেরকে নির্দয়ভাবে নির্যাতন করতো। সেইসব হতভাগ্য লোকদের মধ্যে ছিলেন শহীদ ডাঃ সানাউল্লাহ্‌র পুত্র। ১৯৭১ সালের ১৭ই জুলাই সাকাচৌ ছাত্রনেতা ফারুককে ধরে আনে এবং পাকিস্তানী সেনাদের সাহায্যে তাকে হত্যা করে। ১৯৭১ সালের ২৬শে মার্চ থেকে আত্মসমর্পনের দিন পর্যন্ত পাকিস্তানী সৈন্যদের একটি দল তার বাংলো পাহারা দেয়ার জন্য নিয়োজিত ছিল। স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালের ১৮ই ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা ফজলুল কাদের চৌধুরীকে তার পরিবারের সদস্যসহ চট্টগ্রাম থেকে ১২০ পাউন্ড লুটকৃত স্বর্ণালংকার নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় আটক করে।

” মাহবুব আল আনোয়ার তাঁর রচিত The history of Bangalee’s war of liberation বই-এর ৬৯নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ১৮ই নভেম্বর চট্টগ্রাম কারাগার থেকে নিজামুদ্দীনকে ছেড়ে দেয়া হয় এবং তিনি উল্লেখ করেন… “৫ই জুলাই আমাকে ধরে নেয়া হয়। তারপর আমাকে ফজলুল কাদের চৌধুরীর কাছে নেয়া হয়। সেখানে ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সালাউদ্দীন তাদের অন্যান্য সঙ্গী খোকা, খলিল এবং ইউসুফ মিলে পেছন দিক থেকে আমার হাত বেঁধে ফেলে এবং মোটা লাঠি এবং বাঁশ দিয়ে আমাকে মারতে শুরু করে। পাঁচ ঘন্টা আমি জ্ঞান না হারানো পর্যন্ত তারা এই কাজ চালাতে থাকে। ৬ই জুলাই রাত ১১টার সময় তারা আমাকে মাঠে ফেলে রেখে যায়।

তখন পর্যন্ত আমাকে খাওয়ার জন্য কিছু দেয়া হয়নি, পান করার জন্য এক ফোঁটা পানিও দেয়া হয়নি। যখনি আমি পানি চেয়েছি তারা জবাব দিয়েছে, “তুমি হিন্দুতে রূপান্তরিত হয়েছ, তোমাকে এমনকি পানিও দেয়া যাবেনা। ” ১৩ই জুলাই আমাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এই সময়কালে তারা আমার পা ঝুলিয়ে আমাকে নিয়মিত মারধর করতো। সারা দিনের জন্য একমাত্র খাবার ছিল দুই টুকরো হাতে বানানো রুটি এবং পানি।

তারা যেকোন অজুহাতে আমাকে লাথি মারতো। এই পরিস্থিতিতে একজন মুসলমান হিসেবে আমার নামাজে আমি আল্লাহ্‌র কাছে স্বান্তনা প্রার্থনা করেছি। আমি নামাজরত অবস্থায়ও তারা আমাকে পেছন থেকে লাথি মারতো আর বলতো, “তুমি হিন্দু হয়ে গেছ, নামাজ তোমার জন্য না। ” ” বইটিতে আরেকটি ঘটনার বর্ণনা আছে, “১৩ই এপ্রিল অধ্যক্ষ নতুন চন্দ্র সিংহকে হত্যা করা হয়। গহিরা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাদে স্থাপিত মেশিনগান থেকে পাকিস্তানী সেনারা চতুর্দিকে গুলিবর্ষণ করতে থাকে।

প্রচুর গুলি কুন্ডেশ্বরী ভবনে আঘাত করে। এর আগে শ্রদ্ধেয় অধ্যক্ষ উদ্ভূত পরিস্থিতি রোধ করার জন্য ভবনটির বাসিন্দাদের সরিয়ে দেন। কিন্তু তিনি নিজে কুন্ডেশ্বরী ভবনের মন্দির আঁকড়ে ধরে সেখানে থেকে যান। সৈন্যদের তাঁর সাথে দেখা করতে আসার প্রত্যাশা করে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য তিনি চত্বরে টেবিল-চেয়ার বিছিয়ে রাখেন। দুইটি জীপে করে সৈন্যরা এসেছিল।

তার একটি জীপে ফজলুল কাদের চৌধুরীর সন্তান সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী আরোহণ করছিল। তাদের পেছনে চারটি ট্যাংক কুন্ডেশ্বরী রোডে আক্রমণ করার জন্য প্রস্তুত ছিল। অধ্যক্ষ সেনাসদস্যদের অভ্যর্থনা জানালেন এবং তাদের আপ্যায়ন করলেন। তিনি তাদেরকে তাঁর কল্যাণমূলক কাজের বর্ননা দিলেন এবং সেগুলো চালিয়ে নেয়ার ব্যাপারে তাঁর ইচ্ছার কথা জানালেন। এতে সন্তুষ্ট হয়ে সৈন্যরা চলে গেল।

কিন্তু সালাউদ্দীন তাদেরকে পুনরায় ফেরত আনলো, কারণ তার বাবা তাকে এই নাস্তিককে জীবিত ছেড়ে দিতে নিষেধ করেছিল। ক্ষমতাবান একদল বীর সৈন্যের জন্য এই দিনটি স্মরণীয় নয়, বরং ৭০ বছর বয়স্ক একজন নিরস্ত্র বৃদ্ধ যিনি তার লোকদের শান্তি ও ভালোবাসার পক্ষে সংগ্রাম করেছিলেন, তার জন্য স্মরণীয়। তিনি মন্দিরের সামনে মৃত্যুকে বরণ করার জন্য দাড়িয়ে পড়লেন। তারা তিনবার তাঁর দিকে গুলিবর্ষণ করল। একটি গুলি ঠিক তার একটি চোখের নিচে বিদ্ধ হয়।

আরেকটি গুলি তাঁর হাতে লাগে এবং তৃতীয় গুলিটি তাঁর বুকে বিদ্ধ হয়। মায়ের জন্য ক্রন্দনরত অবস্থায় তিনি মাটিতে পড়ে যান। তাঁর জন্য হিন্দু, মুসলমান সকলেই শোকার্ত হয়ে গিয়েছিল। শোকার্ত মুসলমানদেরকে সালাউদ্দীন বিদ্রুপাত্নক সুরে বলল, “ কেন তোমরা কষ্ট পাচ্ছ? এটা তো শুধুমাত্র একজন মালাউন মারা গেছে!” ” ১৩ই এপ্রিল দিনটি আরেকটি করুণ মৃত্যুর জন্য স্মরণীয় থাকবে। সালাউদ্দীনের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত গহিরার একজন বিশিষ্ট অধিবাসী চিত্তরঞ্জন বিশ্বাসের ঘরে সকাল সাড়ে দশটায় প্রবেশ করে, বিশ্বাসের পুত্র ছাত্রনেতা দয়াল হরি বিশ্বাসকে তুলে আনে এবং তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে।

১৯৯১ সালের ২৫শে এপ্রিল স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল্লাহ্ আল হারুন সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী এবং তার দুষ্কর্মের সহায়তাকারীদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে একটি নির্বাচন সংক্রান্ত মামলা দায়ের করেন। সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী ছিল মামলাটির সাতজন বিবাদীর মধ্যে সর্বপ্রথম। সালাউদ্দীনের দুষ্কর্ম উল্লেখ করে আবদুল্লাহ্ আল হারুন বলেন, সর্বপ্রথম বিবাদী বলপ্রয়োগ করা, নির্মমতা এবং সন্ত্রাসে বিশ্বাসী। সে কখনো আইনের তোয়াক্কা করেনা। নির্বাচনের আইন-কানুনের প্রতি তার কখনো শ্রদ্ধা ছিলনা।

জনগণের অধিকারেও সে বিশ্বাস করতোনা। ১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তানী শক্তিকে সমর্থনের সময় প্রথম বিবাদী স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরুদ্ধে সবচেয়ে অমার্জনীয় এবং জঘন্য ভূমিকা পালন করেছিল। বহু লুটপাট ও হত্যাকান্ডের সাথে সে জড়িত ছিল। ১৯৭২ সালের ১৩ই এপ্রিল চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানায় তার বিরুদ্ধে দালাল আইনে মামলা করা হয়,মামলার ক্রমিক নাম্বার ছিল ১৭। সমাজসেবক নুতন চন্দ্র সিংহকে হত্যার অভিযোগে রাউজান থানায় বিবাদীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়, মামলাটির ক্রমিক নম্বর ছিল ৪১(১)৭২ এবং ৪৩(১)৭২।

তার পরিস্থিতি এমন হয়ে গিয়েছিল যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এক নাম্বার বিবাদী জীবন রক্ষা করার জন্য দেশ থেকে পালিয়ে যায়। তার স্বভাবগত কৌশল এবং সমর্থনে এই বিবাদী সামরিক শাসক এরশাদের মন্ত্রীসভার সদস্য পর্যন্ত হয়েছিল। নুতন চন্দ্র সিংহ হত্যা মামলার শুনানি ১৯৭২ সালে অনুষ্ঠিত হয়। নুতন চন্দ্র সিংহের পুত্র সত্য রঞ্জন সিংহ সহ মোট ১২জন এই মামলার সাক্ষী ছিল। এই মামলার ক্রমিক নাম্বার হচ্ছে বাংলাদেশ দন্ডবিধির অধীনে U/S302/120(13)/298 ।

১৯৭২ সালের ২৯শে জানুয়ারী মামলার শুনানী শুরু হয়। সাকা চৌধুরী এবং অন্য পাঁচ আসামী পলাতক ছিল। অন্যদিকে তার বাবা ফজলুল কাদের চৌধুরীসহ বাকী আসামীরা হাজতে ছিল। মামলার চার্জশীটে উল্লেখ ছিল যে, সালাউদ্দীন কাদের চৌধুরী ও অন্যান্য আসামীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণিত সত্য। চট্টগ্রামের আরেকজন শহীদের সন্তান শেখ মুহাম্মাদ জাহাঙ্গীর জনগণের তদন্ত কমিশনে জানায় যে, ১৯৭১ সালের ১৭ই এপ্রিল পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সহায়তায় সাকা চৌধুরী এবং তার সহযোগীরা তার বাবা শহীদ শেখ মোজাফফর আহমেদ এবং তার ভাই শহীদ শেখ আলমগীরকে হাটহাজারীর একটি সড়ক থেকে তুলে নেয় এবং নিকটবর্তী পাকিস্তানী সেনাক্যাম্পে নিয়ে যায়।

এবং পরবর্তীতে তাঁদেরকে ঐ ক্যাম্পে হত্যা করা হয়। স্বাধীনতার পর অভিযোগকারী শেখ মুহাম্মাদ জাহাঙ্গীর সাকা চৌধুরী এবং তার দোসরদের বিরুদ্ধে মামলাও করে। হারুনুর রশীদ খান চট্টগ্রামে জাতীয় পার্টির নেতা । ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালে মুক্তিসেনাদের একজন জনসংযোগ কর্মকর্তা(১ নং সেক্টরের কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলাম তাঁকে ঐ পদে নিয়োগ দেন)ছিলেন। হারুনুর রশীদ তাঁর দায়িত্বের অংশ হিসেবে একটি প্রচারণা সেল গঠন করেন এবং সংবাদদাতাদের সাহায্যে তিনি সালাউদ্দীন ও তার হত্যাযজ্ঞ, লুটপাট ও অন্যান্য কর্মকান্ডের তথ্য সংগ্রহ করেন।

তথ্যগুলো একত্রিত করে তিনি ১ নং সেক্টরের কমান্ডার মেজর রফিকুল ইসলাম ও যুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক নেতাদের কাছে রিপোর্ট পেশ করতেন। এই কাজ করার সময় তিনি জানতে পারেন সাকা, তার বাবা ফকা এবং তাদের বিশ্বস্ত বাহিনীরা কিভাবে শত শত মুক্তিযো্দ্ধা ও বাংলাদেশকে সমর্থনকারী লোকদের তুলে আনতো এবং তাদের গুড’স হিল এর বাসায় এনে নির্যাতন করে হত্যা করতো। সাকা/ফকা বাহিনী মহিলাদেরকেও ধরে আনতো এবং সেনাবাহিনীর সদস্যদের দৈহিক প্রশান্তি লাভের জন্য তাদের কাছে হস্তান্তর করতো। স্বাধীনতার ঠিক পূর্বে সাকা চৌধুরী দেশ থেকে পালিয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধারা তাকে ধাওয়া করার সময় সে অল্পের জন্য হাত ফসকে যায়।

যাই হোক, এটা বিশ্বাস করা হতো যে তাকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া গুলির একটি তার পায়ে বিদ্ধ হয়েছিল। বাংলাদেশে ফিরে এসে, স্বাধীনতার ৩২ বছর পরেও সাকা চৌধুরী এখনও চট্টগ্রাম জেলার বিশেষ করে রাউজানে সম্পদ জব্দকরণ, লুন্ঠন,সন্ত্রাস এবং হত্যার সাথে জড়িত। সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রাপ্ত রিপোর্ট এই সংবাদের সত্যতা দেয়। বর্তমানে সাকা চৌধুরীর ঘাড়ে চট্টগ্রামে তিনটি মামলা ঝুলে আছেঃ ’৯০ এর দশকের শুরুতে তার কিউসি শিপিং হাউসের স্বর্ণ চোরাচালানের ব্যাপারটি চট্টগ্রাম কাস্টমের কাছে জ্ঞাত ছিল, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর সন্ত্রাস কায়েম করা ও তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য তার সাহায্য সংস্থা অস্ত্র চোরাচালানে সম্পৃক্ত ছিল বলে বিশ্বাস করা হয়, সংসদ নির্বাচনের সময় ভোট ডাকাতি করা এবং বিরোধী রাজনৈতিক দল বিশেষ করে সামাজিক গণতান্ত্রিক নেতা এবং বামদলগুলোর নেতা ও সমর্থকদের হত্যা করা। দোহাই: ইন্টার নেট এবং সংশ্লিষ্ট বইপত্র
 


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।