আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পৃথিবীর সমস্ত আর্য শ্লোকের থেকেও অজর ও পবিত্র বাঙলা বর্ণমালার অ আ চিৎকার ।

বেহুলার প্রতি অর্ফিয়ুস : স্থুল সফলতার গৌরব শিল্প নয় ।

বাঙলা আমার মাতৃভাষা; আমাদের মাতৃভাষা। হুমায়ুন আজাদ, শহীদুল্লাহ, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, আহমদ শরীফ পৃথিবীর অসংখ্য ভাষার কোন কোনটির সৌন্দর্যে অন্ধ হয়ে যান, আবার কোনটির ঐশ্বর্য্যের কাছে তাঁদের মাথা নুয়ে আসে। তারপরও উঁনাদের কাছে বাঙলার মতো আর কোন ভাষা নেই। উঁনাদের আনন্দ বাঙলা ভাষায় নেচে ওঠে ময়ূরের মতো।

আর আমি একরকমের অন্ধ ও বধির তাই অন্যকোনো ভাষার সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ বা পাগল করে না। বাঙলা আমার কাছে আমার মায়ের মুখের মতোই কোমল এবং শান্ত, যা-আমার অন্তরে একরকমের শীতল ঝরণাধারা বইয়ে দেয়। বাঙলা আমার হৃদয়েরও গভীরে হৃদপিন্ডের মতো হৃদস্পন্দন দিয়ে আমার বেঁচে থাকাকে অর্থপূর্ণ করে তোলে। হাজার বছর আগে প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা মানুষের মুখে মুখে রূপান্তরিত হয়ে বঙ্গীয় অঞ্চলে জন্ম নিয়েছিল এক মধুর কোমল বিদ্রোহী প্রাকৃত যার নাম বাঙলা। কখনো 'প্রাকৃত', কখনো 'গোড়ীয় ভাষা', কখনো 'বাঙ্গালা', কখনো 'বাঙ্গলা', আর এখন আমরা বলি 'বাঙলা' / 'বাংলা'।

জন্মউত্তর সময়ে এটি সমাজ প্রভুদের স্নেহ পায়নি কিংবা কোন পয়গম্বর বা আর্য ঋষিদের মাধ্যমে লেখা হয়নি নির্বোধদের ঐশ্বরিক বাণী। তারপর শতাব্দীর পর শতাব্দী কাটে শেকলে বাঁধা পড়ে এবং শাঁইশাঁই চাবুকের আঘাতে আঘাতে। হঠাৎ স্বপ্নজয়ী কিছু মানুষ নিজেদেরকে ইতিহাস করে অমর করে রেখে গেছেন বাঙলা ভাষাকে। তাঁরা যখন শাঁইশাঁই চাবুকের শব্দকে সঙ্গীতে এবং শেকলকে উর্ধ্বমুখী হাতে শিল্পে পরিণত করে তখন সভ্যতার সমস্ত শিল্পকলার থেকে সুন্দর ও অজর মনে হয় বাঙলাকে। শেকলের পর শেকল চুরমার করে শৃঙ্খলহীন (?) আজকের বাঙলা।

আজকের শৃঙ্খলহীন (?) ও সবচেয়ে বেশি অবহেলিত বাঙলার কয়েকটি রূপ দেখা যাক। এখন সাধারণত কেউই সঠিক বাঙলা বলতে পারে না। সবাই এখন ইচ্ছা ও অনিইচ্ছাকৃত (?) ভাবে বাঙলার সাথে ইংরেজির মিশ্রিত রূপে কথা বলে। এখন বাঙলা হয়ে উঠছে চাষাভূষাদের ভাষা। কৃষক দিনমজুর ছাড়া এখন কারো কাছ থেকে বাঙলার কথ্য শুদ্ধরূপ আশা করা নিতান্তই বোকামি।

কথা বলার সময় প্রায় প্রতিটি বাক্যের মধ্যে দু-একটি ইংরেজি শব্দ গুজে না দিলে নিজেকে বুদ্ধিমান, জ্ঞানী বা প্রতিভূ (স্মর্ট) বলে মনে হয়না। যে ছেলে/মেয়েটি একবুক স্বপ্ন নিয়ে মহাবিদ্যালয় পার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে এক পৃষ্ঠা পড়তে গিয়ে একশ' বার অভিধানের পাতা উল্টাতে উল্টাতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছে তার বুকের বিদগ্ধ যন্ত্রণা আমাদের মূর্খ কপট রাষ্ট্রযন্ত্র কখনো বুঝবে না। ভাষিক সাম্রাজ্য বাঙলাদেশে এতই প্রবল যে মা-বাবার মত কোমল মৌলিক শব্দ আম্মা-আব্বা বা মঅম-ডেড দ্বারা হারিয়ে যাচ্ছে। এখন আরবি-ইংরেজি শেখানোর জন্য হুজুর-শিক্ষক রাখা হয় কিন্তু বাঙলা শেখানোর প্রয়োজনীয়তা আছে বলে মনে করা হয় না . . . . . এই হচ্ছে অবহেলিত বাঙলার চরম রূপ। ইচ্ছা করলেই আরো অনেক উদাহরণ দিতে পারতাম , কিন্তু দিলাম না।

অবহেলিত বাঙলাকে উদ্ধারের জন্য আরো একটা বায়ান্ন দরকার। দরকার আরো একটি বিশুদ্ধ চেতনার। আমি সেই বিপ্লবী বায়ান্নর প্রত্যাশী। আমি সেই অজর চেতনার প্রত্যাশী। জানি না কখনো দেখা পাবো কিনা সেই চেতনার, সেই বিপ্লবের ! বাঙলা ভাষার জীবনি/ কতো নদী সরোবর : হুমায়ুন আজাদ বাঙলা ভাষা(কবিতা) : হুমায়ুন আজাদ


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.