এক্সট্রা এনার্জি এক্সচেঞ্জার
মহাকাশ বিজ্ঞানীরা সৌরঝড় নিয়ে আশঙ্কার কথা বেশ কয়েক বছর ধরেই বলে আসছিলেন। এবার কিন্তু আর আশঙ্কা নয়- পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসতে পারে সৌরঝড়। গতকাল বুধবার এমনই পূর্বাভাস দিল নাসা।
নাসা জানায়, মঙ্গলবার মহাকাশে সৌরকণার নিষ্ক্রমণের ফলে প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৫৭০ মাইল বেগে লক্ষ লক্ষ কণিকা নির্গত হয়েছে। যার ফলে মহাকাশে ম্যাগনেটিক ফিল্ড তৈরি হওয়ায় আগামী শুক্রবারের মধ্যেই পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসতে পারে সৌরঝড়।
গত ফেব্রুয়ারিতেই মহাকাশ বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে বলেছিলেন, এই ঝড় অনেকটা হ্যারিক্যান-ক্যাটরিনা স্টাইলের মতো ভয়ঙ্কর হতে পারে।
সৌরঝড়ে প্রাণের আশঙ্কা না থাকলেও ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে স্যাটেলাইট, এমনকী ইলেকট্রনিক সিস্টেমও। ফলে বিচ্ছিন্ন হতে পারে যোগাযোগ ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সংযোগ। সেই সঙ্গে এই সৌরঝড়ের ফলে যে রশ্মিবিকরণ ছড়িয়ে পড়বে তাও বেশ ক্ষতিকর বলে তারা জানিয়েছেন। এমনকি এই ঝড় যদি খুব শক্তিশালী হয়, তাহলে শেয়ার মার্কেটেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে।
সেই সঙ্গে মাসের পর মাস বিদ্যুৎ বিভ্রাটও দেখা দিতে পারে বলে সতর্ক করেছেন- আমেরিকান এসোসিয়েশন ফর দ্য এডভান্সমেন্ট অব সায়েন্সের বিজ্ঞানীরা।
সেই সঙ্গে নাসার এই প্রাক্তন মহাকাশ বিজ্ঞানীরা বলেছেন, “সৌরঝড় হওয়া নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। তবে ঠিক কোন সময়ে এই সৌরঝড় পৃথিবীতে আঘাত হানবে সেটাই এখন সব থেকে বড় প্রশ্ন”।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওসেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনস্ট্রেশন (নোয়া)-এর স্পেস ওয়েদার প্রেডিকশন সেন্টার’র আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ জোসেফ কুনশে বলেছেন, “চলতি সপ্তাহেই এ সৌরঝড় যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম (জিপিএস) স্যাটেলাইটগুলোর ক্ষতি করতে পারে। একই সাথে মিনেসোটা এবং ওয়েসকনসিন অঞ্চলের দক্ষিণে মেরুজ্যোতি’র সৃষ্টি হতে পারে।
কারণ অতীতের ঝড়গুলোও এ ধরনের বেশকিছু ক্ষতির নজির রেখে গেছে”।
[মেরুজ্যেতি এক ধরনের আলোকচ্ছটা। উত্তর গোলার্ধে এটি অরোরা বোরিয়ালিস (aurora borealis) এবং দক্ষিণ গোলার্ধে অরোরা অস্ট্রালিস (aurora australis) নামে পরিচিত। ধারণা করা হয়, মহাশূন্যের আধানযুক্ত কণার সঙ্গে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের সংঘর্ষের কারণে এই আলোকছটার সৃষ্টি হয়। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে দুই মেরুর কাছে এটি বেশি দেখা যায়।
]
এ প্রসঙ্গে আমেরিকার ন্যাশনাল ওসেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোসফেরিক অ্যাডমিনস্ট্রেশনের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ক্যাথরিন সুলিভান জানিয়েছেন, “এই সৌরঝড়ের ফলে বেশ কয়েকটি বড়সড় বিস্ফোরণও হতে পারে। এমনকি বিকল হয়ে যেতে পারে কম্পিউটারও”। তিনি আরও বলেন, এই পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রতিটি দেশকেই সবসময়ই প্রস্তুত থাকতে হবে।
১৯৭২ সালে হওয়া সৌরঝড়ে আমেরিকার ইলিনিয়েস প্রদেশের টেলিফোন ব্যবস্থা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এরপর ১৯৮৯ সালে এই বিরূপ প্রভাবের সাক্ষী হয়েছে কানাডার কিউবেক এলাকার প্রায় ছয় লাখ বাসিন্দা।
এ সময় হালকা মাত্রার সৌর ঝড় আছড়ে পড়েছিল কানাডায়। সেখানকার বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা কয়েকদিনের জন্য অকেজো হয়ে গিয়েছিল। ফলে সব গ্রিড বসে যাওয়ায় ব্ল্যাক আউট হয়ে গিয়েছিল গোটা কানাডা জুড়েই। এরও আগে ১৮৫৯ সালে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলো টেলিগ্রাফ ব্যবস্থা। তখন ঠিক কি হয়েছিল তা জানা যায়নি।
কারণ তখন পৃথিবীতে বেতার বা রেডিওই আবিষ্কার হয়নি।
কিন্তু এবারে সৌর ঝড়ের প্রভাবে বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গের মারাত্মক খারাপ প্রভাব বাড়বে। কারণ এখনকার দুনিয়া অতি মাত্রায় প্রযুক্তি নির্ভর। অত্যাধুনিক সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম জটিল প্রযুক্তি ও উপগ্রহ নির্ভর পরিসেবার উপর দাঁড়িয়ে রয়েছি আমরা। ফলে সৌরঝড়ের তীব্রতায় ভেঙে পড়তে পারে গোটা ব্যবস্থাটাই।
সেই সঙ্গে ওজোন স্তর পৃথিবীর যেসব জায়গায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানকার বাস্তুতন্ত্রও ভারসাম্য হারাতে পারে। নেভিগেশন সিস্টেম পুরোপুরি বসে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে গোটা বিশ্বেই। বিশ্বজুড়ে রেডিও ও বৈদ্যুতিন তরঙ্গ কাজ করবে না দফায় দফায়। অকেজো করে দেবে আমাদের প্রযুক্তি নির্ভর দৈনন্দিন জীবনকে।
২০০৮ সালে ন্যাশনাল রিসার্চ কাউন্সিল পরিচালিত এক গবেষণার প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সৌরঝড় সত্যি সত্যি পৃথিবীতে আঘাত হানলে বিশ্বে অন্তত দুই ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হতে পারে।
খবরঃ www.sciencetech24.com
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।