ঘূর্ণিঝড় মহাসেনের আঘাতে পটুয়াখালীর কলাপাড়া (খেপুপাড়া) উপজেলা লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। বিধ্বস্ত হয়েছে ঘর, উড়ে গেছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন, উপড়ে পড়েছে গাছ ও বিদ্যুতের খুঁটি। সাগর থেকে ফুঁসে ওঠা জোয়ারে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে কুয়াকাটা সৈকত। কলাপাড়ার সঙ্গে কুয়াকাটা ও পটুয়াখালী জেলা সদরের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। টেলিফোন যোগাযোগ ও বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
গাছচাপা, ঘরচাপা পড়ে ও হূদেরাগে আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।
খেপুপাড়া রাডার স্টেশনের প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, মহাসেনের অগ্রভাগ এই উপকূলেই (কলাপাড়া ও আশপাশের এলাকা) আঘাত হেনেছে। গতকাল সকাল সাতটা থেকে সোয়া নয়টা পর্যন্ত তাণ্ডব চলে। পরে এটি কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে পৌঁছাতেই দুর্বল হয়ে পড়ে। যাওয়ার পথে ভোলার চর কুকরি মুকরিসহ চরাঞ্চলে আঘাত হানে।
দুই দিনে কলাপাড়ায় ৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
কলাপাড়ার প্রত্যন্ত কয়েকটি অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, প্রবল ঝোড়ো হাওয়া ও জোয়ারের পানিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে লালুয়া ইউনিয়নের নয়টি গ্রাম। সাগর মোহনার রামনাবাদ পারের এই ইউনিয়নের ৪৭/৫ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের নাওয়াপাড়া অংশ জোয়ারের চাপে ভেঙে যায়। বাঁধের ওই অংশ দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বুড়োজালিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘বন্যা অইবে এই খবর পাইয়া আমরা আগেই আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি।
তয় নাওয়াপাড়ার ভাঙ্গা অংশ দিয়া পানি হান্দনে মোগো ঘরবাড়ি, পুকুর, ফসল সব ভাইস্যা গ্যাছে। ’
ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জানা গেছে, চম্পাপুর ইউনিয়নের মাছুয়াখালী গ্রামের হাফিজা বেগম (সাত মাস) ফুফু রেহানার কোলে গাছের ধাক্কায় মারা যায়। এতে ফুফুও আহত হন। একই ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া গ্রামের জাহাঙ্গীর হাওলাদার আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার সময় হূদেরাগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। লতাচাপালি ইউনিয়নের দোফাঁসিপাড়া গ্রামের নাইম (১২) ঘরচাপা পড়ে মারা গেছে।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটার ঝাউবাগান, সৈকতসংলগ্ন জাতীয় উদ্যান, লেম্বুর চর, সৈকতের নারকেলবাগানের অসংখ্য গাছপালা বিধ্বস্ত হয়েছে। উপড়ে পড়েছে এখানকার বিদ্যুতের খুঁটি, বিধ্বস্ত হয়েছে সৈকতে যাওয়ার মূল সড়কের দক্ষিণ দিকের কিছু অংশ। কুয়াকাটার খাজুরা-মাঝিবাড়ি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রক্ষার সিসি ব্লক ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কলাপাড়া পৌর শহরের মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস ডিগ্রি কলেজের একটি পাকা ভবন ঝড়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। পৌর শহর লাগোয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের বাইরের অনেক ঘর, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ভেঙে পড়েছে।
বড় বড় গাছ পড়ে শহরের রাস্তাঘাটগুলোয় চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
কলাপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমরাও বিভিন্ন এলাকায় ক্ষয়ক্ষতির খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে প্রত্যন্ত এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে না। ’
বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচির (সিপিপি) কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের নিশানবাড়িয়া গ্রামের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের অধিকাংশ এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ওই এলাকার প্রায় তিন হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।
ধুলাসার ইউনিয়নে ২২০টি কাঁচা ঘর, ৫২টি আধা পাকা ও টিনের ঘর সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৯০টি আধা পাকা ঘর। এই ইউনিয়নের প্রায় ২৭০ একর জমির পাকা মরিচ ও বাদামখেত তিন ফুট পানির নিচে তলিয়ে আছে। ২২০টি পুকুর ও মৎস্যঘের ভেসে গেছে। চম্পাপুর ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বাইরের অধিকাংশ কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে।
উপজেলা প্রশাসন থেকে জানা গেছে, একটি উচ্চমাধ্যমিক কলেজ, একটি টেকনিক্যাল কলেজ, তিনটি সিনিয়র মাদ্রাসা, নয়টি মাধ্যমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১০টি দাখিল মাদ্রাসার পাকা ভবন, আধা পাকা ভবন ও টিন শেড ভবন পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে।
নীলগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল মালেক খান জানান, তাঁর ইউনিয়নে কমপক্ষে তিন হাজার কাঁচা ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলার কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা গতকাল বিকেলে পরিদর্শন করেন বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. নুরুল আমীন, পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক অমিতাভ সরকারসহ প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।